• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

কুড়িগ্রামে ভিজিএফ’র চাল নিয়ে চালবাজি


জাহাঙ্গীর আলম, কুড়িগ্রাম আগস্ট ২০, ২০১৮, ০৮:০৪ পিএম
কুড়িগ্রামে ভিজিএফ’র চাল নিয়ে চালবাজি

কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রামে দরিদ্রদের জন্য বরাদ্দ দেয়া ভিজিএফ’র চাল নিয়ে শুরু হয়েছে চালবাজি। একের পর এক ইউনিয়ন পরিষদে ইউপি চেয়ারম্যানদের অনিয়ম দুর্নীতিতে ঈদের আনন্দ ম্লান হতে বসেছে অসহায় দরিদ্র মানুষদের। ভিজিএফ’র চাল নিয়ে দুর্নীতি ও অনিয়মের বিষয়টি বিভিন্ন গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনায় আসলেও নেই কার্যকরি পদক্ষেপ। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে অভিযুক্তদের এড়িয়ে যাচ্ছে। এতে দুর্নীতি পরায়ন জনপ্রতিনিধিরা অনিয়ম-দুর্নীতি করেও বহাল তবিয়তে রয়েছে।

জানা গেছে, জেলার সদর উপজেলার ঘোগাদহ ইউনিয়ন, নাগেশ্বরী উপজেলার কালিগঞ্জ, বল্লভের খাষ, উলিপুর উপজেলার থেতরাই, বুড়াবুড়ি ইউনিয়ন, বেগমগঞ্জ এবং রৌমারী উপজেলায় ভিজিএফ কর্মসূচির চাউল বিতরণে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠেছে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মেম্বার ও দলীয় নেতাদের বিরুদ্ধে। ভিজিএফ কর্মসূচির আওতায় উপজেলা ৮৮০ মে. টন চাউল বরাদ্দ দেওয়া হয়। ৬টি ইউনিয়নের ৪৩ হাজার ৯৯৭ পরিবারের মাঝে বিতরণ করার কথা থাকলেও বাস্তবে চেয়ারম্যান, মেম্বার, দলীয় নেতাকর্মী, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের মাঝে নাম ভাগাভাগি করে নেওয়ার কারণে চাউল বিতরণে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।

রোববার সকাল ১১টার দিকে সরেজমিনে যাদুরচর, দাঁতভাঙ্গা, বন্দবেড়, শৌলমারী, রৌমারী ও চরশৌলমারী  ইউনিয়নে গিয়ে দেখা যায়, ভিজিএফ কর্মসূচি চাউল বিতরণের তালিকায় নাম আছে কিন্তু তারা চাউল না পেয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছে। এসব চাউলের নামের স্লিপ বিক্রির অভিযোগ ওঠছে ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বার, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের ব্যক্তিবর্গ, দলীয় নেতাকর্মীসহ একশ্রেণির টাউট-বাটপারদের বিরুদ্ধে।

যাদুরচর ইউনিয়নের চাউল নিতে আসা ধনারচর গ্রামের হযরত আলী, আবু সমা, বাইমমারী গ্রামের শুকুর আলী, ইসরাফিল জানান, তালিকায় নাম আছে চাউলের জন্য আসছিলাম, আমাদের নামে স্লিপ বিক্রি হয়ে গেছে। ইউএনও ও উপজেলা চেয়ারম্যান কাছে বিচার দিলাম কোন লাভ হয় নাই। খালি হাতে বাড়িতে ঘুইড়া যাই। আমাগো গরিব মানুষের চাল বেইচা চেয়ারম্যান মেম্বার দলের নেতা-কর্মীর ঈদ উৎসব করবো। আমরা না খাইয়া থাকুম আল্লাহ্ কাছে একদিন গরিবের চাল খায়ার হিসাব হবে।

রৌমারী সদর ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের মেম্বার বাদশা মিয়া বলেন, প্রতি বস্তায় চাউল কম হয়। আমার আরো এক শ’ পঞ্চাশটি নাম চাউল দেওয়া বাকী আছে চাউল আছে সাত বস্তা। ইউএনও স্যার পরিদর্শন করে ১০ কেজি করে চাউল দিতে বলছে। চাউল নাই তালিকায় নাম আছে তাদের কম বেশি চাউল দিয়ে বিদায় করতে হবে।

যাদুরচর ইউপি চেয়ারম্যান সরবেশ আলী, দাঁতভাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান সামসুল হক, চরশৌলমারী ইউপি চেয়ারম্যান কে এম ফজলুল হক মন্ডল, বন্দবেড় ইউপি চেয়ারম্যান কবির হোসেন, শৌলমারী ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান, রৌমারী ইউপি চেয়ারম্যান (ভার.) লালমিয়া জানান, আমরা অনুমোদিত তালিকা অনুযায়ী চাউল বিতরণ করেছি। তালিকাভুক্ত সবাই চাউল পাবে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তায়ন কর্মকর্তা মো. আজিজুর রহমান বলেন, ভিজিএফ কর্মসূচির চাউল বিতরণে জন্য মিটিং করে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। চেয়ারম্যানরা তালিকা অনুযায়ী চাউল বিতরণ করার কথা। এত নাম মাঠ পর্যায়ে যাচাই করে দেখা সম্ভব না। চাউল না পাওয়ার বিষয়টি ইউনিয়ন চেয়ারম্যানদের জানান।

রৌমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার দীপঙ্কর রায় বলেন, আমি দশ কেজি করে চাউল দিতে বলি নাই। চাউল বিতরণ করে বেশি হলে উপস্থিত লোকজনের মাঝে বিতরণ করতে বলেছি।

রৌমারী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. মজিবুর রহমান বঙ্গবাসী বলেন, প্রতিটি ইউনিয়নে সরেজমিনে গিয়া দেখা যায় শতকরা পঞ্চাশ জন দরিদ্র মানুষ চাউল পায় নাই।  ৪ হাজার ৪০০ পরিবারে মাঝে সঠিকভাবে চাউল বিতরণ করলে একটি গরিব মানুষ বাদ যাবে না। চেয়ারম্যান, মেম্বার, দলীয় নেতাকর্মীরা গরিবের চাউল বিক্রয় করে ঈদের টাকা খরচের ব্যস্ত আছে।

ভিজিএফ কর্মসূচির উপকাভোগীদের নামে তালিকা সঠিকভাবে করা হয় নাই। এক পরিবারে একাধিক মানুষের নাম আছে, পাশে বাড়ি গরিব মানুষটির নাম নাই। ৬টি ইউনিয়নের একাধিক মানুষের অভিযোগ তালিকায় নাম আছে চাউল পায় নাই। ২০ কেজি করে চাউল বিতরণে নিয়ম থাকালেও উপকারভোগীদের দেওয়া করা হচ্ছে ১২/১৩ কেজি করে চাউল।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এইচএআর

Wordbridge School
Link copied!