• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কৃত্রিম মুনাফা: তালিকা তৈরি করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক


নিজস্ব প্রতিবেদক জানুয়ারি ৩০, ২০১৭, ১০:৩৫ পিএম
কৃত্রিম মুনাফা: তালিকা তৈরি করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

ঢাকা: বিনিয়োগ মন্দায় চলছে দেশের আর্থিক খাত। খেলাপি ঋণের লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না। ফলে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মধ্যে অধিকাংশের মুনাফায় টান পড়েছে। তারপরেও কিছু ব্যাংক মুনাফা কমানোর পরিবর্তে বাড়িয়ে দেখিয়েছে। এর প্রভাব পড়ছে শেয়ারবাজারে। বাড়ছে এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম, ভুল তথ্যে বিভ্রান্ত হচ্ছেন গ্রাহক। এসবের বিরুদ্ধে এবার তদন্তে নামবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

তবে ব্যাংকিং খাতের যেকোনো ধরনের অনিয়ম বন্ধে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, যেসব ব্যাংক আর্থিক প্রতিবেদনে মুনাফার উল­ম্ফন দেখিয়েছে তাদের একটি খসড়া তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তালিকাভুক্ত এসব ব্যাংকের আর্থিক প্রতিবেদনে অসংগতির প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী বর্তমানে ব্যাংক খাতে অবলোপনসহ মোট খেলাপি ঋণ এক লাখ আট হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে ৯৬ হাজার কোটি টাকা আদায় প্রায় অনিশ্চিত হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়া বেসরকারি খাতের বিনিয়োগে স্থবিরতায় ব্যাংকে অলস পড়ে আছে প্রায় এক লাখ ২৩ হাজার কোটি টাকা।
 
ব্যাংকগুলোতে সুদের হার প্রায় ১২ থেকে ১৬ শতাংশ। এর বাইরেও রয়েছে বিভিন্ন ধরনের উচ্চহারের সার্ভিস চার্জ। তবুও ব্যাংকগুলোর পরিচালন মুনাফা বেড়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সদ্য বিদায়ী বছরে ৫৭টি ব্যাংকের মধ্যে ৩৫টি ব্যাংক প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা মুনাফা করেছে, যা ২০১৫ সালে ছিল প্রায় সাড়ে ১৪ হাজার কোটি টাকা। অতিরিক্ত মুনাফা দেখালে সরাসরি প্রভাব পড়ে শেয়ারবাজারে। এতে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের শেয়ারের দর চাঙ্গা হয়। এ ছাড়া এসব কারণে আমানতকারীরাও ভুল তথ্যের ওপর ভিত্তি করে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে আমানত রাখতে প্রলুব্ধ হন।

অতীতে প্রকৃত খেলাপি ঋণ গোপন করারও অভিযোগ রয়েছে বেশকিছু ব্যাংকের বিরুদ্ধে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, ব্যাংকগুলো সাধারণত গ্রাহক বাড়াতে পরিচালন মুনাফা বাড়িয়ে দেখাতে পারে। তবে পরবর্তী ঋণ রিকভারি করার সময় তা ধরা পড়ে যাবে। এ ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কঠোর নজরদারি প্রয়োজন।

এদিকে ব্যাংকের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একটি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ যত বেশি থাকে ওই ব্যাংকের নিট বা প্রকৃত মুনাফা তত কমে যায়। খেলাপি ঋণের
বিপরীতে প্রভিশন সংরক্ষণের বাধ্যবাধকতা মেনে চললে কোনো ব্যাংকের বেশি মুনাফা হবার কথা নয়। এ ছাড়া ব্যাংকের উলে­খযোগ্য আয় আসে এলসি কমিশন থেকে। পণ্য আমদানির জন্য ঋণপত্র খুলে ব্যাংকগুলো উলে­খযোগ্য মুনাফা করে। কিন্তু বিদ্যুৎ-গ্যাস সংকটের পাশাপাশি চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিনিয়োগ স্থবির হয়ে পড়েছে। আমানতকারীদের প্রাপ্য লভ্যাংশ, খেলাপি ঋণের প্রভিশন ও প্রাপ্য কর পরিশোধের পর এসব ব্যাংকের অতিরিক্ত মুনাফার আসল চিত্র ফুটে উঠবে। 

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, এটাকে মুনাফা না বলে ব্যাংকের আয়-ব্যয়ের আংশিক চিত্র বলা যায়। উচ্চ সুদের কারণে
বিনিয়োগ হচ্ছে না। আমানতের সুদ ২ থেকে ৩ শতাংশে নামিয়ে একদিকে গ্রাহককে ঠকানো হচ্ছে, অন্যদিকে ঋণের সুদ এখনো ১০ থেকে ১৬ শতাংশে আটকে আছে। তবে ব্যাংকগুলো
সাময়িক গ্রাহকের আস্থা ফেরাতে পরিচালন মুনাফা বেশি দেখিয়ে থাকতে পারে বলে উলে­খ করেন সাবেক এই গভর্নর। 

সূত্রে জানা গেছে, এসব ব্যাংকের একটি খসড়া তালিকা তৈরি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরই ধারাবাহিকতায় এসব ব্যাংকের অস্বাভাবিক মুনাফা বাড়ার কারণ খতিয়ে দেখছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর অভিযোগ প্রমাণিত হলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

সোনালীনিউজ/তালেব

Wordbridge School
Link copied!