• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

কে এই ভয়ংকর জঙ্গি মুসা?


বিশেষ প্রতিনিধি মার্চ ২৮, ২০১৭, ০৬:৪০ পিএম
কে এই ভয়ংকর জঙ্গি মুসা?

ঢাকা: গুলশান হামলার ‘মাস্টারমাইন্ড’ ও নব্য জেএমবির প্রতিষ্ঠাতা তামিম আহমেদ চৌধুরী নারায়ণগঞ্জে নিহত হওয়ার পর সংগঠনের হাল ধরেছিল তানভীর কাদেরী। গত ১০ সেপ্টেম্বর লালবাগের আজিমপুরে জঙ্গিবিরোধী অভিযানে গ্রেপ্তার এড়াতে আত্মহুতি দেয় সে।

এরপর আশুলিয়ায় র‌্যাবের অভিযানে মারা যায় আরেক শীর্ষ জঙ্গি সারোয়ার জাহান। আর ভারতে পালিয়ে গেছে আরেক শীর্ষ জঙ্গি মামুনুর রশিদ রিপন। গুলশান হামলার অন্যতম সমন্বয়ক নূরুল ইসলাম মারজানও বন্দুকযুদ্ধে নিহত আর আরেক শীর্ষ জঙ্গি রাজীব গান্ধী গ্রেপ্তারের পর এখন পুলিশের রিমান্ডে। তবে এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে প্রধান জঙ্গি সাবেক মেজর জিয়া ও বাশারুজ্জামান চকলেট।

সিলেট অভিযানের আগ পর্যন্ত নব্য জেএমবির নেতৃত্ব ছিল জঙ্গি নেতা মাঈনুল ওরফে মুসার কাঁধেই। গত ২৩ ডিসেম্বর তাকে ধরতেই আশকোনায় অপারেশন রিপল-২৪ অভিযান চালায় কাউন্টার টেররিজম (সিটি) ইউনিট। কিন্তু সিলেটের আাতিয়া মহলে কমান্ডো অভিযানে নিহত চার জঙ্গির একজন নব্য জেএমবির শীর্ষ নেতা মুসা।

অভিযানের সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আঁচ করেছিল সিলেটের আস্তানায় শীর্ষ জঙ্গি রয়েছে। তাদের ধারণা ছিল, এই আস্তানায় মেজর জিয়া ও মুসা দু’জনকেই হয়ত পাওয়া যাবে। মুসাকে পাওয়া গেছে ঠিকই, তবে মৃত অবস্থায়।

সিটি সূত্র জানায়, তাদের কাছে তথ্য ছিল মুসার পরিকল্পনায় ‘বড় হামলা’র ছক কষছিল নব্য জেএমবি। এই মুহূর্তে মুসাই ছিলেন নব্য জেএমবির ধারক ও বাহক। তাকে ধরতে পারলে অন্য জঙ্গিদের সহজেই গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হবে পুলিশ। ইতিমধ্যে একাধিক আস্তানায় জাল ফেলেও মুসাকে ধরতে পারেনি পুলিশ।

তানভীর কাদেরীর সঙ্গে মুসার দীর্ঘদিনের পরিচয় ছিল। নিহত জঙ্গি মেজর (অব.) জাহিদ, তানভীর ও মুসা উত্তরা এলাকায় দীর্ঘদিন একসঙ্গে ছিল। তারা উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরে নিয়মিত একত্রিত হতো। এক সময় মুসা তানভীরের দুই ছেলে তাহরীম কাদেরী (বর্তমানে কারাগারে) ও আফিফ কাদেরীকে (আশকোনায় নিহত) বাসায় গিয়ে পড়াতো।

কাউন্টার টেররিজম ইউনিট প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, গোপন সংবাদ ছিল- পূর্ব আশকোনা এলাকায় মুসা বাসা ভাড়া নিয়ে আস্তানা গড়ে তুলেছে। তাই সেখানে অভিযান চালানো হয়। তবে মুসাকে পাওয়া যায়নি।

সিটি সূত্র জানায়, মুসার পরিকল্পনা ছিল ‘বড় হামলা’র। এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিচ্ছিল সে। তাই আশকোনার ভাড়া বাসায় বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরকদ্রব্য মজুদও করছিল সে। সেগুলো দিয়ে হ্যান্ডমেইড গ্রেনেডও তৈরি করেছিল। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। নিজে আত্মগোপনে থাকলেও রাজধানীর আশকোনায় তার আস্তানায় কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট (সিটি) অভিযান চালিয়ে সব পরিকল্পনা ভণ্ডুল করে দেয়।

গোয়েন্দারা মুসার বিষয়টি প্রথম জানতে পারেন, গত ১০ সেপ্টেম্বর আজিমপুরে অভিযানের পর। আজিপুরের জঙ্গি আস্তানা থেকে তানভীর কাদেরীর কিশোর ছেলে আদালতে দেওয়া তার জবানবন্দিতে মাঈনুল ওরফে মুসার কথা বলে।

জঙ্গি তানভীরের কিশোর ছেলে তার জবানবন্দিতে বলে,  ‘মেজর জাহিদ ও মাঈনুল ওরফে মুসার সঙ্গে আমার বাবার দীর্ঘদিন আগে থেকে পরিচয় ছিল। আমার বাবা, মেজর জাহিদ ও মুসাসহ উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরের একটি মসজিদে নামাজ পড়তো। তারা প্রায়ই উত্তরার লাইফ স্কুলের মসজিদে ফজরের নামাজ পড়ে একসঙ্গে জগিং করতো।’

ওই কিশোর আরও বলে,  ‘বাবার মাধ্যমেই মেজর জাহিদ ও মুসার সঙ্গে পরিচয় হয় তার। আমাকে ও আমার ভাইকে মুসা অংক, ইংরেজি ও বিজ্ঞানের বিষয় পড়াতো।’ কিশোরটি জবানবন্দিতে আরও বলে,  ‘প্রায়ই আমার বাসায় জাহিদ আংকেল, আন্টি (জাহিদের স্ত্রী জেবুন্নাহার), মেয়ে জুনায়রা ওরফে পিংকি এবং মুসা আংকেল আন্টিসহ যাতায়াত করতো। জাহিদ আংকেলের বাসা ছিল উত্তরা ১৩নং সেক্টরে। তাদের বাসায় আমরাও যেতাম। মুসা আংকেল, আন্টিসহ ওই বাসায় যেত।’

সিটির এক কর্মকর্তা জানান, উত্তরার লাইফ স্কুলে এক সময়ে শিক্ষকতা করতো মাঈনুল ওরফে মুসা। সেখান থেকেই নব্য জেএমবির শীর্ষ নেতা মেজর (অব.) জাহিদুল ইসলাম ও তানভীর কাদেরীর সঙ্গে তার পরিচয়। এক পর্যায়ে নব্য জেএমবির দলে ভিড়ে যায় মুসা। ধীরে ধীরে সে নব্য জেএমবির গুরুত্বপূর্ণ নেতা হয়ে ওঠে। গুলশানের হলি আর্টিজানে হামলার পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িত ছিল এই মুসা।

তামিম চৌধুরীসহ নব্য জেএমবির তানভীর কাদেরী, জাহিদ, রাশেদ, জাহাঙ্গীর, মারজান, বাসারুজ্জামানের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ হতো। আজিমপুরে আস্তানা থেকে উদ্ধারের পর জাহিদের মেয়ে পিংকি ওই সময় সিটির কর্মকর্তাদের জানিয়েছিল, তার মা মুসা আংকেলের বাসায় গিয়েছে। তাহরীম ও পিংকির দেওয়া তথ্যের সূত্র ধরেই মুসাকে খুঁজতে শুরু করে পুলিশ।

সূত্র জানায়, আশকোনার আস্তানায় মুসার স্ত্রী-সন্তান থাকলেও সে নিয়মিত এখানে থাকতো না। অন্য জঙ্গিদের স্ত্রীদের নিজের বাসায় রেখে সে অন্য একটি আস্তানায় থাকতো। প্রতি মঙ্গল ও শুক্রবার সে আশকোনার বাসায় আসতো। সেই হিসেবে গত শুক্রবার তার আশকোনার আস্তানায় আসার কথা থাকলেও সে আসেনি। মাঝে মধ্যে তার সঙ্গে বছর চল্লিশ বয়সী দাড়িওয়ালা এক ব্যক্তিও আসতো। পুলিশ কর্মকর্তাদের ধারণা, মুসা অন্য কোনও আস্তানাতেও একইভাবে বিস্ফোরকদ্রব্য দিয়ে হ্যান্ডগ্রেনেড তৈরি করছিল।

অনুসন্ধানের এক পর্যায়ে উত্তরার লাইফ স্কুল থেকে মুসার জীবনবৃত্তান্ত ও ছবি সংগ্রহ করা হয়। পরবর্তী সময়ে দক্ষিণখানের এক মসজিদের ইমামের সঙ্গে তার সখ্যের তথ্য পাওয়া যায়। গোয়েন্দারা ধারণা করেন, মুসা দক্ষিণখান এলাকার কোথাও আত্মগোপন করে রয়েছে।

এরই ধারাবাহিকতায় মুসার আশকোনার আস্তানার সন্ধান পায়। সূত্র আরও জানায়, নব্য জেএমবির অনেক নেতাকর্মী নিহত ও গ্রেপ্তার হলেও মুসা নিজে দায়িত্ব নিয়ে সংগঠন গোছানোর কাজ করছিল।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেডআরসি/এইচএআর

Wordbridge School
Link copied!