• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

কে এই ভয়ংকর জঙ্গি সোহেল মাহফুজ!


রাফি রহমান চৌধুরী জুলাই ৯, ২০১৭, ০৪:৩৯ পিএম
কে এই ভয়ংকর জঙ্গি সোহেল মাহফুজ!

ঢাকা: সোহেল মাহফুজ কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালি উপজেলার সাদিপুর কাবলি পাড়ার রেজাউল করিমের ছেলে। দুই স্ত্রী ও সাত সন্তানের জনক সোহেল মাহফুজ এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার আগেই লেখাপড়া ছেড়ে দেন। জঙ্গিবাদে যোগ দেওয়ার পর সে নিজেকে শাহাদাত, নসরুল্লাহ, রিমন নানা নামে পরিচয় দিত।

এক হাত না থাকায় সে ‘হাতকাটা  সোহেল’ নামেও পরিচিত। এক হাত না থাকায় তিনি ‘হাতকাটা সোহেল’ নামেও পরিচিত। ২০০৫ সালে নওগাঁর আত্রাই এলাকায় জেএমবি’র সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলাভাইয়ের সঙ্গে বোমা বানাতে গিয়ে সোহেলের একহাত উড়ে গিয়েছিল।

নব্য জেএমবির নুরুল ইসলাম মারজান তার দূর সম্পর্কের আত্মীয়। জেএমবির অন্যতম শীর্ষ নেতা নুরুল ইসলামের সঙ্গে তার আত্মীয়তা রয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ ও দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে তার দুই শ্বশুরবাড়ি। তার দুই শ্বশুরও জেএমবির সমর্থক বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গোয়েন্দারা তথ্য পেয়েছে।

পুলিশের রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি এম. খুরশীদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ, রাজশাহীর গোদাগাড়ী ও তানোরের জঙ্গি আস্তানায় সোহেলের যাতায়াত ছিল। সে দেশের বিভিন্ন স্থানে অস্ত্র ও বিস্ফোরক সরবরাহ করতো। বোমা বানাতেও পারদর্শী সে।

সোহেল মাহফুজের সঙ্গে যে তিনজনকে গ্রেপ্তার হয়েছে, তারা মূলত জঙ্গিদের বিভিন্ন ধরনের সহযোগীতা করে থাকে। গত ঈদে এ অঞ্চলে নাশকতার পরিকল্পনা ছিল জঙ্গিদের। তবে পুলিশের কঠোর তৎপরতায় জঙ্গিরা সেই পরিকল্পনায় সফল হয়নি।

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার বেনীপুর ও তানোরের ডাঙ্গাপাড়ার জঙ্গি আস্তানায় যাতায়াত ছিল সোহেল মাহফুজের। এসব আস্তানা থেকে শক্তিশালী বিস্ফোরক উদ্ধার হয়েছিল। যা তৈরি করেছিল সোহেল মাহফুজ।

গুলশান হামলার অনেক আগে থেকেই জঙ্গি তৎপরতায় চিহ্নিত ছিলেন সোহেল মাহফুজ ওরফে হাতকাটা সোহেল ওরফে নাসিরুদ্দিন ওরফে ভাগিনা সোহেল। তিনি জেএমবির পুরনো ধারার একজন শীর্ষ সদস্য। গুলশান হামলায় অস্ত্র সরবরাহ করেছিলেন নারায়ণগঞ্জে পুলিশের অভিযানে নিহত জঙ্গি নেতা তামিম চৌধুরী।

আর একই হামলায় ব্যবহৃত গ্রেনেড সরবরাহ করেছেন এই সোহেল মাহফুজ। ‘নিউ জেএমবি’ নামে জঙ্গিদের যে নতুন তৎপরতা শুরু হয়েছে, এই তৎপরতার সঙ্গে সোহেল মাহফুজের সম্পৃক্ততার প্রমাণ রয়েছে।

জেএমবির প্রতিষ্ঠাকালীন শূরা সদস্য ছিলেন সোহেল মাহফুজ। ২০১০ সালে নিষিদ্ধ সংগঠনটির আমির সাইদুর রহমান গ্রেপ্তার হওয়ার পর তিনি নিজেকে আমির হিসেবে ঘোষণা করেন। কিন্তু কারাগারে থেকেও সাইদুর আমিরের পদ ছাড়তে না চাওয়ায় তাদের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়।

সোহেল মাহফুজ গুলশান হামলার আরেক মাস্টারমাইন্ড নুরুল ইসলাম মারজানের ঘনিষ্ঠ। নিহত তামিম চৌধুরী গ্রেনেড ও অস্ত্র-সংক্রান্ত বিষয়ে সোহেল মাহফুজের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। বোমা তৈরি করতে গিয়ে সোহেলের বাম হাত বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তিনি এক হাত দিয়ে আগ্নেয়াস্ত্র চালাতে পারেন।

এদিকে কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, ‘সোহেল মাহফুজ গুলশান হামলায় পলাতক পাঁচ জঙ্গির একজন। ওই হামলায় জড়িত আরো চার জঙ্গি হলেন রাশেদুল ইসলাম ওরফে র্যাশ, বাশারুজ্জামান ওরফে চকলেট, ডাক্তার রোকন ও ছোট মিজান। বাংলাদেশের পাশাপাশি সোহেল মাহফুজ ভারতেও মোস্ট ওয়ান্টেড।

২০১৪ সালে বর্ধমানের খাগড়াগড় বিস্ফোরণের পর তাকে ধরতে ১০ লাখ রুপি পুরস্কার ঘোষণা করে ভারতীয় সরকার। তিনি ২০০৬ সালে ভারতে পালিয়ে যান। ২০০৯ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত তিনি জেএমবির ভারতীয় শাখার আমির ছিলেন’।

মনিরুল ইসলাম বলেন, সোহেল মাহফুজ ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে ফের বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। এরপর তিনি পুরনো জেএমবি ছেড়ে নব্য জেএমবিতে যোগ দেন। তিনি বলেন, হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা পরিকল্পনার সময় তিনি উপস্থিত ছিলেন, হামলার আগে তিনি অস্ত্র ও গ্রেনেড নিয়ে আসেন।

গুলশানের হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলায় ব্যবহৃত গ্রেনেড নিষিদ্ধ জেএমবির নিজস্ব তৈরি। আর ইমপ্রোভাইসড হ্যান্ড গ্রেনেড তৈরির মূল কারিগর এই সোহেল মাহফুজ। নব্য জেএমবির নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন তিনি।

এর আগে ২০১৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে ময়মনসিংহ আদালতে নেওয়ার পথে হামলা চালিয়ে জঙ্গিরা সালাউদ্দিন সালেহীনসহ তিন জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেয়। অপর দুই জঙ্গি হলেন বোমা মিজান ও হাফেজ মাহমুদ। কিন্তু জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়ার মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন সোহেল মাহফুজ।

দীর্ঘদিন ধরে আত্মগোপনে থেকে তিনি পুরনো ধারার জেএমবিকে সংগঠিত করার চেষ্টা করছিলেন। নারায়ণগঞ্জে নিহত নব্য জেএমবির সমন্বয়ক তামিম আহমেদ চৌধুরীর সঙ্গে দুই বছর আগে যোগাযোগ হওয়ার পর তিনি নতুন ধারায় যুক্ত হয়। সোহেল মাহফুজ নব্য জেএমবির অস্ত্র ক্রয়, গ্রেনেড তৈরি এবং সরবরাহসহ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছিলেন।

গত বছরের ১ জুলাই রাতে হলি আর্টিজান বেকারি রেস্তোরাঁয় জঙ্গিরা হামলা চালিয়ে দুইজন পুলিশ ছাড়াও জিম্মি ২০ দেশি-বিদেশিকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। ২০ জিম্মির মধ্যে ১৭ জনই ছিলেন বিদেশি। পরদিন ভোরে সেনাবাহিনীর অভিযানে পাঁচ জঙ্গিও নিহত হয়।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেডআরসি/এইচএআর

Wordbridge School
Link copied!