• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

কে এই ‘সান্তা ক্লজ’?


হৃদয় আজিজ ডিসেম্বর ২৫, ২০১৭, ১১:৩৮ এএম
কে এই ‘সান্তা ক্লজ’?

ঢাকা: বছর ঘুরে আবারও আবারো এলো বড় দিন। কেক, উপহার আর ক্রিসমাস ট্রি সহ বিভিন্ন আয়োজনে প্রতিবছর বিশ্বজুড়ে উৎযাপন করা হয় খ্রিস্টান ধর্মের সবচেয়ে বড় এই ধর্মীয় উৎসব।

আর এই ক্রিসমাসের অন্যতম একটি আকর্ষণ হচ্ছে ‘সান্তা ক্লজ’ এবং তার উপহার। তাকে না দেখলে যেন ক্রিসমাসই পালন করা হয় না। বাচ্চারা বিশ্বাস করে, সান্তা ক্লজ জাদু জানেন। জাদু দিয়ে উড়ে এসে তাদের নানা রকম উপহার দিয়ে যায়।

ক্রিসমাসের আগের রাতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে বাচ্চাদের নানা ধরণের উপহার দিয়ে আসার প্রচলন বহুবছর ধরেই চলে আসছে।

কিন্তু কে এই সান্তা ক্লজ?
আজ যাকে আমরা সান্তা ক্লজ হিসেবে চিনি সেই মানুষটির রয়েছে এক সুদীর্ঘ ইতিহাস। লাল পোশাক, লাল টুপি পরা সাদা ধবধবে দাড়িওয়ালা এই লোকটির ইতিহাস খুঁজে পাওয়া যায় খ্রিষ্টীয় ৩ শতকের দিকে।

সান্তা ক্লজের কিংবদন্তী শুরু হয় সেন্ট নিকোলাস নামক এক সন্ন্যাসীকে ঘিরে। ২৮০ সালের দিকে এশিয়া মাইন বা বর্তমান তুরস্কের পাতারা নামক অঞ্চলে তার জন্ম হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়।

সততা এবং দয়ার জন্য সবাই তাকে পছন্দ করতো। সম্পদশালী এই মানুষটি সবসময় গরীব-দুখি এবং অসহায় মানুষজনকে সাহায্য করতেন। শোনা যায়, একবার তিনি দাস হিসেবে বিক্রি হওয়া থেকে ৩টি মেয়েকে রক্ষা করেন এবং তাদের বিয়ের জন্য যৌতুক ও যাবতীয় খরচ প্রদান করেন।

সেন্ট নিকোলাসের এসব দান-দক্ষিণা এবং মহানুভবতার খবর চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে এবং তিনি মানুষের রক্ষক হিসেবে পরিচিতি পান।

তার মৃত্যুর দিন ৬ ডিসেম্বরকে সবাই বিয়ে করার বা কেনাকাটা করার দিন হিসেবে পালন করতো। রেনেসা পর্যন্ত ইউরোপে বেশ জনপ্রিয় ছিলেন সেন্ট নিকোলাস।

সেন্ট নিকোলাস আমেরিকায় পরিচিতি পান ১৮শ শতকের শেষের দিকে। ১৭৭৩ ও ১৭৭৪ সালে পরপর দুইবার একটি পত্রিকায় এক ডাচ পরিবারের সেন্ট নিকোলাসের মৃত্যুবার্ষিকী উৎযাপন করার খবর আসে।

ডাচ ভাষায় সেন্ট নিকোলাসকে ডাকা হতো সিন্টার ক্লাস (সেন্টনিকোলাসের সংক্ষিপ্ত রূপ)। এই সিন্টার ক্লাস থেকেই মূলত সান্তা ক্লজ নামটির উৎপত্তি। ক্রিসমাসে সবাইকে বিশেষ করে বাচ্চাদেরকে উপহার দেয়ার রীতি শুরু হয় ১৯শ শতকের শুরু দিকে।

১৮২০ সালের দিক থেকে ক্রিসমাস উপলক্ষ্যে দোকানগুলো বিজ্ঞাপন দিত, পত্রিকায় বিশেষ সংখ্যা বের হতো যেগুলোতে প্রায়ই সান্তা ক্লজের ছবিও ছাপা হতো।

১৮৪১ সালে ফিলাডেলফিয়ার একটি দোকানে একটি মানুষ আকৃতির সান্তা ক্লজ তৈরি করা হয় যা দেখতে হাজার হাজার বাচ্চা ভিড় জমিয়েছিল। এরপর থেকে বাচ্চা এবং তাদের বাবা-মাদের আকৃষ্ট করতে দোকানগুলোতে জীবন্ত সান্তা ক্লজ সাজানো হয়।

১৮২২ সালে ক্লেমেন্ট ক্লার্ক মুর নামক একজন ক্রিসমাস উপলক্ষ্যে একটি কবিতা লেখেন যার শিরোনাম ছিল ‘An Account of a Visit from St. Nicholas.’। আজকে আমরা সান্তা ক্লজের যে রূপ দেখি সেটা আসলে এই কবিতা থেকেই শুরু হয়েছিল।

লাল পোশাক পরা সাদা দাড়িওয়ালা এক সন্ত ৮টি হরিণ টানা গাড়িতে উড়ে উড়ে বাচ্চাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে উপহার বিতরণ করছে- এমনই এক চিত্র ফুটে উঠেছিল তার কবিতায়। খুব শীঘ্রই এই কবিতা জনপ্রিয়তা পায় গোটা আমেরিকাজুড়ে।

১৮৮১ সালে থমাস নাস্ট মানক একজন কার্টুনিস্টের আঁকা একটি ছবি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এতে দেখা যায়, সান্তা ক্লজ হরিণ টানা গাড়িতে চড়ে কাঁধে উপহারের ঝোলা নিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে বাচ্চাদের উপহার দিচ্ছে।

এভাবে সারা বিশ্ব জুড়ে ক্রিসমাসের আগের রাতে বাচ্চাদের ঝোলানো মোজা উপহারে পরিপূর্ণ হয়ে যাওয়ার রীতিটি জনপ্রিয় হয়ে উঠে। সান্তা ক্লজ আসলে মিথ হলেও শিশুরা বিশ্বাস করে সান্তা সত্যি সত্যি আছে এবং বড়দিনের আগের রাতে সে উপহার নিয়ে আসে।

আমেরিকা ও কানাডায় শিশুরা সান্তার জন্যে এক গ্লাস দুধ ও এক প্লেট বিস্কুট আলাদা করে রেখে দেয়। ব্রিটেন ও অস্ট্রেলিয়ায় সান্তা ক্লজকে দেয়া হয় বিয়ার অথবা মিষ্টি পিঠে।

ডেনমার্ক, নরওয়ে ও সুইডেনে দেয়া হয় পায়েশ ও দারুচিনি। আয়ারল্যান্ডে সান্তার জন্যে আলাদা করে রাখা হয় ক্রিসমাসের বিশেষ পুডিং ও দুধ।

এসব দেশে সাধারণত বাচ্চারা ক্রিসমাসের আগের দিন বাড়ির সদর দরজায় মোজা ঝুলিয়ে রাখে। ফ্রান্স, মেক্সিকো, আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের অনেক জায়গায় বাচ্চারা ঘরের বাইরে জুতো রেখে দেয়।

কথিত আছে, সান্তা ঘরের চিমনী দিয়ে ঘরের ভেতরে ঢুকে এগুলোতে ক্রিসমাসের উপহার রেখে যায়। বাচ্চাদের দুষ্টুমি থামানোর জন্যে এই বলে ভয় দেখানো হয় যে দুষ্টু বাচ্চাদের জন্যে সান্তা ক্লজ উপহার নিয়ে আসেন না।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এআই

Wordbridge School
Link copied!