• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

কে বেশি ভালো শুভগত না নাসির?


রবিউল ইসলাম বিদ্যুৎ, সোনালীনিউজ ডটকম নভেম্বর ৫, ২০১৬, ১০:১৯ পিএম
কে বেশি ভালো শুভগত না নাসির?

ঢাকা: নিউজিল্যান্ড সফরের জন্য ২২ সদস্যের প্রাথমিক দল ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। পুনর্বাসন প্রক্রিয়া শেষে এই সফরে ফিরতে যাচ্ছেন বোলিং বিস্ময় মুস্তাফিজুর রহমান।

এটা অনুমিতই ছিল পুনর্বাসন প্রক্রিয়া শেষে তিনি ফিরবেন। সুযোগ পেয়েছেন একেবারে নতুন তিন মুখ। অনূর্ধ্ব-১৯ দলের বাহাতি ব্যাটসম্যান নাজমুল হোসেন শান্ত, পেসার হান্ট থেকে উঠে আসা এবাদত হোসেন এবং ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে দারুণ পারফর্ম করা লেগ স্পিনার তানভির হায়দার।

সন্দেহ নেই নাজমুল বাংলাদেশের সেরা এক প্রতিভার নাম। পেসার হান্ট থেকে উঠে আসা এবাদত সুযোগটা খুব দ্রুতই পেয়ে গেলেন কি না সে প্রশ্ন উঠতেই পারে। আর লেগ স্পিনারের ঘাটতি মেটাতে তানভিরের ডাক পাওয়া! তার অন্তর্ভুক্তি একটা প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। তাহলে কি জোবায়ের হোসেন লিখনের প্রতি অবিচার করা হচ্ছে না? তবে বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে, ঠিক কী কারণে অল রাউন্ডার নাসির হোসেন ২২ জনের প্রাথমিক দলে জায়গা পেলেন না! তাকে রাখা হয়েছে ৯ জনের স্ট্যান্ডবাই তালিকায়।

ইংল্যান্ডের সঙ্গে মিরপুরে প্রথম ওয়ানডেটি জিততে জিততে হেরে যায় বাংলাদেশ। রান তাড়া করতে গিয়ে বাংলাদেশের এক পর্যায়ে জেতার জন্য দরকার ছিল ৫২ বলে ৩৯ রান। হাতে ছিল ৬ উইকেট। এখান থেকে ম্যাচটি বাংলাদেশ হেরে গেলো ২১ রানে স্রেফ লোয়ার মিডল অর্ডারে কেউ দাঁড়াতে পারেনি বলে। ইংল্যান্ডের ৩০৯ রানের জবাবে বাংলাদেশ তাই অলআউট ২৮৮ রানে। ওই ম্যাচে ৯ রানের মধ্যে বাংলাদেশ হারিয়ে ফেলেছিল ৫ উইকেট। ৪ উইকেটে ২৭১ থেকে মুহূর্তেই স্কোর হয়ে গেলো ৯ উইকেটে ২৮০।

জেতা ম্যাচ হারতে দেখে বিষাদে ছুঁয়ে যায় গোটা বাংলাদেশকেই। নাসির হোসেনের না থাকা নিয়ে ভক্ত-সমর্থক এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। শেষের দিকে নাসির থাকলে হয়তো ম্যাচটি আমরা জিততে পারতাম বা শেষের দিকে তার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে পরদিন বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসানকে প্রশ্ন করেছিলেন সংবাদকর্মিরা। উত্তরে তিনি যা বলেছিলেন, সেটা ছিল হতাশাজনক, ‘এই দলে নাসির কোথায় খেলবে। ওর জায়গা কোথায়?’

কিন্তু সংবাদমাধ্যমের চাপ, শেষের ব্যর্থতার বাস্তবতায় দ্বিতীয় ম্যাচে সেরা একাদশে নাসিরকে উপেক্ষা করতে পারেনি টিম ম্যানেজমেন্ট। রংপুরের অলরাউন্ডারও তার প্রতি টিম ম্যানেজমেন্টের আস্থা রাখার প্রতিদান দিয়েছেন। দ্বিতীয় ম্যাচে ১৬৯ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে ধুকছিল বাংলাদেশ। স্বীকৃত ব্যাটসম্যান বলতে কেবল নাসিরই ছিলেন। বাংলাদেশ দুইশ পর্যন্ত স্কোরটাকে নিয়ে যেতে পারবে কি না সে সংশয়ও জেগেছিল।

মাশরাফিকে নিয়ে এখান থেকেই শুরু নাসিরের ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প। মাশরাফি হয়তো একটা পরিকল্পনা করেই গিয়েছিলেন, তিনি শট খেলবেন আর নাসির উইকেটে থাকবেন। মাশরাফি তার পরিকল্পনা দারুণভাবে কাজে লাগালেন। নাসির সিঙ্গেল নিয়ে যতবেশি সম্ভব স্ট্রাইক দিলেন মাশরাফিকে। তিনিও ভয়ডর না করে চালিয়ে গেলেন। ২৯ বলে দুই চার, তিন ছক্কায় মাশরাফি করলেন ৪৪ রান।

ব্যাটকে তলোয়াড় বানানো মাশরাফি পরে বল হাতেও আগুন ঝরিয়েছেন। এই ম্যাচের আসল নায়ক যদি হন মাশরাফি তবে অবশ্যই পার্শ্বনায়ক নাসির। তার ২৭ বলে অপরাজিত ২৭ রানের ইনিংসটি অন্য সময়কার ফিফটির চেয়েও বেশি কাজে দিয়েছে। নাসির ছিলেন বলেই মাশরাফি অতো শট খেলতে পেরেছেন।

২৩৮ রান নিয়ে বদলে যাওয়া ইংল্যান্ডের সঙ্গে লড়াই করা সহজ ছিল না। এদিন বল হাতেও নেতৃত্ব দিলেন মাশরাফি। তুলে নিলেন ২৯ রানে ৪ উইকেট। নাসিরকে দিয়ে পুরো ১০ ওভার করে নিলেন মাশরাফি। একটি মেডেনসহ তুলে নিলেন মঈন আলীর উইকেট। রান দিয়েছেন মাত্র ২৯। নাসিরের কাছে যেরকম বোলিং চেয়েছিলেন সেরকমই পেয়েছেন অধিনায়ক। ইংল্যান্ড অলআউট ২০৪ রানে। বাংলাদেশ জিতে গেল ২১ রানে। চট্টগ্রামে তৃতীয় ম্যাচে ব্যাট হাতে সুবিধা করতে পারেননি নাসির। তবে বল হাতে ৫৩ রানের বিনিময়ে পেয়েছিলেন ১টি উইকেট।

সবচেয়ে বড় কথা, নাসির বাংলাদেশের ক্রিকেটে পরীক্ষিত পারফরমার। ম্যাচের দাবি অনুয়ায়ী খেলতে পারেন বলে তার নামই ‘ফিনিশার’ হয়ে গেছে। ব্যাট হাতে লোয়ার মিডল অর্ডারে দলকে ভরসা দিতে পারেন। আবার কার্যকরী বোলিংও করেন। ক্যারিয়ারে ৫৩ ওয়ানডেতে ৩৪.০০ গড়ে নাসির রান করেছেন ১১৯০। ছয় ফিফটির বিপরীতে একটি সেঞ্চুরিও আছে তার। উইকেট পেয়েছেন ১৫টি। ১৬ টেস্টের ক্যারিয়ারে নাসির রান করেছেন ৯৫৮। গড় ৩৬.৮৪। এখানেও ছয় ফিফটি সমেত একটি সেঞ্চুরি করেছেন। উইকেট নিয়েছেন ৮টি।

ওয়ানডে ও টেস্টে যার ৩৫-এর ওপর গড় সেই নাসির কেন নিউজিল্যান্ড সফরের ২২ জনের দলে জায়গা পেলেন না সেটা সবার মনে প্রশ্ন চিহ্ন এঁকে দিয়েছে। দেশের বাইরে অন্তত ৫টি বা তার বেশি টেস্ট খেলেছে এমন ক্রিকেটারদের মধ্যে তার গড় তৃতীয় সর্বোচ্চ ৩৪.৬০। শুধু টেস্টেই নয়, ওয়ানডেতেও দেশের বাইরে ১০টি ম্যাচ খেলেছেন এমন ক্রিকেটারদের মধ্যে নাসিরের গড় সবচেয়ে বেশি। ১৬ ওয়ানডেতে গড় ৪৪.৮০। অথচ পারফরম্যান্স আহামরি নয় তারপরও শুভগত হোমকে দলে না রাখলে টিম কম্বিনেশন যেন ঠিকঠাক দাঁড়ায় না!

মিরপুর টেস্টে শফিউল ইসলামকে বাদ দিয়ে তাকেই নামিয়ে দেয়া হলো। প্রথম ইনিংসে ব্যাট হাতে ৬, দ্বিতীয় ইনিংসে ২৫*। ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংসে মাত্র ৪ ওভার বল করে ৮ রান দিয়ে উইকেট পাননি। দ্বিতীয় ইনিংসে ছয় ওভার বল করে ২৫ রান দিয়েছেন। শুভগত যথারীতি থেকেছেন উইকেটশূন্য।

শুভগতের টেস্ট ক্যারিয়ারও বলছে, তিনি কেন বাংলাদেশ দলে? ছয় টেস্ট খেলে ২২.৬৬ গড়ে রান করেছেন ২০৪। সেঞ্চুরি নেই। একটি ফিফটি করেছেন। উইকেট নিয়েছেন ৮টি। চার ওয়ানডে খেলে রান করতে পেরেছেন মোটে ৭০। একটি উইকেটও পাননি। এই শুভগতকে দলে নিতে গিয়ে নাসিরের মতো পরীক্ষিত পারফরমার উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছেন- এর ব্যাখ্যা কি কারো কাছে আছে?

সোনালীনিউজ/এমএন

Wordbridge School
Link copied!