• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

কেন দেউলিয়ার পথে ‘সেক্স সম্রাজ্ঞী’র ব্যবসা (ভিডিও)


ফিচার ডেস্ক ডিসেম্বর ১৯, ২০১৭, ০৪:১৯ পিএম
কেন দেউলিয়ার পথে ‘সেক্স সম্রাজ্ঞী’র ব্যবসা (ভিডিও)

ঢাকা: সেক্স বা যৌনতা প্রকাশ্য নিয়ে আসার প্রচেষ্টা উনবিংশ শতাব্দির মাঝামাঝি প্রথম ঘটিয়েছিলেন জার্মান মনবিজ্ঞানী ও চিকিৎসক সিগমুন্ড ফ্রয়েড তার বিখ্যাত মানুষের যৌনক্ষুধা তত্ত্বের মাধ্যমে। তার আগেও মানুষ যৌনতা প্রকাশ্যে নিয়ে এসেছে তাবে তার ওই তত্ত্বের মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি পাবার মত ঘটনা ঘটেছে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিষয়টি আরো খোলামেলা করে তুলেছেন আরেক জার্মান নাগরিক। তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নারী পাইলট ছিলেন, এবং সেক্স চেইন শপের প্রতিষ্ঠাতা। অনেকই হয়তো এখন বুঝে ফেলেছেন কার কথা বলছি। হ্যাঁ, তিনি বেয়াটে উহসে রোটেরমন্ড।

তার প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিখ্যাত সেক্স চেইন শপ বেয়াটে উহসে দেউলিয়া হওয়ার পথে। এমনকি তারা আদালতের মাধ্যমে একটি দেউলিয়া ত্রাণ (সাহায্য পাওয়ার) পরিকল্পনা দাখিল করেছে। 

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বৈমানিক হিসেবে কাজ করেছেন বেয়াটে উহসে, এমনকি স্টান্ট পাইলটও ছিলেন। এই অসমসাহসী নারীর একটি বিতর্কিত কাজ ছিল, যুদ্ধ শেষ হবার পরেই ১৯৪৬ সালে তার সেক্সশপ চেইন প্রতিষ্ঠা করা। 

কিছু কিছু সমাজতাত্ত্বিকের দাবি, বেয়াটে উহসের এই ইরোটিক বা যৌন উত্তেজক বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড জার্মানসহ বিশ্ব নারীদের যৌনজীবনকেই বদলে দিয়েছে। ২০০১ সালে মারা যান বেয়াটে উহসে।

বেয়াটে উহসে রোটেরমন্ড

মৃত্যুর দু’দশকের মধ্যেই তার ‘ইরোটিক’ সাম্রাজ্য অস্ত যেতে বসেছে। শুক্রবার (১৪ ডিসেম্বর) ফ্লেন্সবুর্গে হোল্ডিং কোম্পানি ‘বিইউ’ দেউলিয়া হওয়ার নোটিশ দাখিল করে– তবে নিজের নিয়ন্ত্রণে ও আদালতের তত্ত্বাবধানে থেকে।

প্রতিষ্ঠানটির কর্মীসংখ্যা এখন মাত্র ১০, কিন্তু ইউরোপ জুড়ে তাদের যে ৪৩টি সেক্সশপ আছে – কোম্পানির প্রশাখাগুলি যেসব বিপণী চালিয়ে থাকে– সেখানে আজও প্রায় ৩৪৫ জন কর্মী নিযুক্ত।

সেক্স চেইন শপ কী?
এটি মূলত সেক্সের প্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রির প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানে সাধারণত- ডিলডো, আন্তর্বাস, গর্ভনিরোধক, সেক্স ডলি, যৌন উত্তেজক ওষুধ, পর্নো মুভি ইত্যাদি।

যে কারণে দেউলিয়া হচ্ছে বিইউ:
‘বিইউ’ হোল্ডিং-এর মূল সমস্যা হলো বিনিয়োগকারীদের হাতে কোম্পানির প্রায় তিন কোটি ইউরো মূল্যের বন্ড বা কাগজ, যা ২০১৯ সালের মধ্যেই ফেরত দিতে হবে। ওদিকে কোম্পানি ২০১৬ সালে ১০ কোটি ইউরোর বেশি আয় করলেও, লোকসান হয়েছে সাকুল্যে প্রায় ৬২ লাখ ইউরো।

১৯৯৯ সালে বেয়াটে উহসে কোম্পানির শেয়ার যখন প্রথম বাজারে আসে, তখন তার মূল্য ছিল শেয়ার প্রতি ৭ ইউরো ২০ সেন্ট। পরে সেই শেয়ারের দাম দাঁড়িয়েছিল ২৮ ইউরো ২০ সেন্টে। ২০০৫ সালেও বেয়াটে উহসে কোম্পানি সবচেয়ে বেশি আয় করে। তা সত্ত্বেও ২০০৮ সালের মধ্যে কোম্পানির শেয়ারের মূল্য গিয়ে দাঁড়ায় ৫৮ সেন্টে। গত সপ্তাহান্তে সেই শেয়ার বেচাকেনা হয়েছে মাত্র পাঁচ সেন্টে।

শুধু একটি ভুলে?
কেন এভাবে গ্রাহক খোয়াল বেয়াটে উহসে? বিশ্লেষকরা বলছেন, কোম্পানিটি ই-কমার্সের প্রবণতা ঠিক উপলব্ধি করতে পারেনি; সেই অবকাশে ‘আইস.ডিই’ বা ‘আমোরেলি’-র মতো নবাগত কোম্পানিরা বিশেষ করে নারী ও দম্পতিদের জন্য অভিনবত্বের পসরা খুলে তাদের ‘তরতাজা আবেদনের’ জোরে বাজার মাত করেছে। 

বেয়াটে উহসে যেভাবে বিখ্যাত হলেন:
বেয়াটে উহসে তার স্টান্ট পাইলটের লাইসেন্স পান ১৯৩৮ সালে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে তিনি জার্মানির হয়ে মেসারস্মিট জঙ্গিবিমান চালিয়েছেন। ১৯৪৬ সালে তার প্রথম বাণিজ্যিক উদ্যোগ ছিল নারীরা কিভাবে গর্ভবতী হওয়া থেকে রেহাই পেতে পারেন, সে বিষয়ে একটি প্রচারপত্রিকা।

তার মেইল অর্ডার ব্যবসা খুব ভালোই চলতে থাকে; ফলে বেয়াটে উহসে-র ‘বৈবাহিক স্বাস্থ্যবিধি প্রতিষ্ঠানের’ প্রথম বিপণীটি খোলে ১৯৬২ সালে, ফ্লেন্সবুর্গে – যেখানে নারীদের অন্তর্বাস ও গর্ভনিরোধক বিক্রি করা হতো, নৈতিকতা নিয়ে চিন্তিত নাগরিকদের দায়ের করা বহু মামলা সত্ত্বেও। সত্তরের দশকে জার্মানি যখন অবশেষে তার পর্নোগ্রাফি আইন শিথিল করে, ততদিনে বেয়াটে উহসের নাম জার্মানির সব প্রাপ্তবয়স্কের জানা হয়ে গিয়েছে।

ইতোমধ্যেই একটি টেলিভিশন সেক্স চ্যানেলও খুলে ফেলেন। ১৯৮৯ সালে বার্লিন প্রাকারের পতনের পর সাবেক পূর্ব জার্মানির বাসিন্দারাও বেয়াটে উহসের খদ্দের হন, যার ফলে তার ‘ইরোটিক’ পণ্যের বিক্রি বাড়ে দারুণভাবে। কিন্তু বেয়াটে উহসে সংস্থার একাধিপত্যে প্রথম আঁচড় কাটে ইন্টারনেট ভিত্তিক ভিডিও ক্লিপ – যার সঙ্গে ইন্টারনেট ভিত্তিক মেইল অর্ডার যুক্ত হয়ে যৌন পণ্য সংক্রান্ত ব্যবসায়ের ধারাপ্রকৃতিই বদলে যায়।

বেয়াটে উহসে যে সময়ের সঙ্গে পা মিলিয়ে চলার চেষ্টা করেনি, এমন নয়। ২০০৪ সালে সংস্থাটি হামবুর্গে শুধুমাত্র নারীদের জন্য তাদের প্রথম সেক্সশপ খোলে, এমনকি কোম্পানির লোগো-তেও নারীসুলভ ছোঁয়া আনে। কিন্তু এ সব সত্ত্বেও এই বাজারে টিকতে পারছে না বিইউ। হয়তো রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ওই কথায় সত্য হতে চলছে, একটি বিখ্যাত আদর্শ ১০০ বছরের বেশি টিকসই হয় না।

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিইউ অতিমাত্রায় ‘ইরোটিক’ হওয়ার চেষ্টা করেছে। কিন্তু, বাজারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারছে না। আর মানুষের চাহিদাও এখন দিন দিন এসব থেকে প্রাকৃতিক বিষয়ের প্রতিই আকর্ষণ বাড়ছে। সেসবও এই ব্যবসার প্রতিবন্ধক হতে পারে। সূত্র: রয়টার্স, দ্য লোকাল, ওয়াশিংটন পোস্ট, ডিডাব্লিউ

ভিডিও:

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এআই

Wordbridge School
Link copied!