• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

কেমন আছে সার্বিয়ার মুসলিমরা?


হৃদয় আজিজ নভেম্বর ২৫, ২০১৭, ০২:১০ পিএম
কেমন আছে সার্বিয়ার মুসলিমরা?

ঢাকা: মধ্য ও দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপের একটি স্থলবেষ্টিত দেশ সার্বিয়া। সাংবিধানিক নাম প্রজাতন্ত্র। পানোনীয় সমভূমির দক্ষিণাংশে, বলকান উপদ্বীপের মধ্যভাগে দেশটির অবস্থান। ওসমানী খেলাফতের সময় দেশটি তুরস্কের অধীনেই ছিল। ওই সময়ই মূলত সেখানে ইসলাম প্রচার শুরু করে। সেখানকার অর্থডক্স খ্রিস্টানদের সঙ্গে কোনো সময়ই মুসলিমদের সম্পর্ক ভালো ছিল না। তাই খেলাফতের পতন হওয়ার পর মুসলিমদের ওপর অবর্ণনীয় নির্যাতন নেমে আসে। 

এ পর্যন্ত কত লক্ষ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, তার সঠিক ইতিহাস এখনো পাওয়া যায় না। জাতিসংঘের পরিসংখ্যানে শুধু ১৯৯৩ সালের বসনিয়া গণহত্যার তথ্য উঠে এসেছে-  তখন ৮ হাজার ৩৭২ জন মুসলিমকে হত্যা করা হয়। সেই সময় হাজার হাজার নারীকে ধর্ষণ, বাড়িঘর লুণ্ঠনসহ লাখ লাখ মুসলিমকে বাস্তুচ্যুত করা হয়।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক পিউ রিচার্স সেন্টারের এক পরিসংখ্যানে উঠে এসেছে, বসনিয়া গণহত্যার পর থেকেই মুসলিমরা খ্রিস্টানদের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে চলার চেষ্টা করছে। এমনকি দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে বিবাহবন্ধনও বেড়ে গেছে কয়েকগুণ।

পিউয়ের তথ্য মতে, সার্বিয়ার রাজধানী বেলগ্রেডে প্রায় ২০ হাজার মুসলমানের বসবাস। কিন্তু মসজিদ আছে মাত্র একটি। কর্তৃপক্ষ নতুন মসজিদ নির্মাণের অনুমতি দিচ্ছে না। ফলে বাসাবাড়ি ও রাস্তায় নামাজ আদায় করছেন মুসল্লিরা। বাজরাকলি নামের একমাত্র মসজিদটি ১৫৭৫ সালে নির্মিত হয়। বেলগ্রেড তখন ওসমানী খেলাফতের অংশ ছিল।

গত রমজানের আগে একটি পারিবার তাদের বাড়ি মসজিদ হিসেবে ব্যবহারের জন্য দান করেছিল। কিন্তু তা অবৈধভাবে নির্মাণ করা হয়েছে এই অভিযোগ এনে তা ভেঙে দেয় কর্তৃপক্ষ। সেই সময় মুসল্লিরা বাঁধা দিলে রাতের অন্ধকারে পুলিশসহ বুলডোজার এনে তা গুড়িয়ে দেয়া হয়। এখন সেই ভাঙা বাড়ির সামনের রাস্তায় নামাজ পড়েন মুসল্লিরা।

ইসলামিক কমিউনিটি অফ সার্বিয়ার মুফতি মোহামেদ হামদি জুসুফসপাহিক বলছেন, কয়েক দশক ধরে বিভিন্ন স্থানে মসজিদ নির্মাণের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে অনমুতি চেয়ে আবেদন করা হচ্ছে, কিন্তু অনুমতি মেলেনি এখনও।

তবে বেলগ্রেডের শহর পরিকল্পনা কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, তাদের কাছে ইসলামিক কমিউনিটি অফ সার্বিয়ার কোনো আবেদনের রেকর্ড নেই। সার্বিয়ার মুসলিম সম্প্রদায় বলছেন, মসজিদ নির্মাণের অনুমতি না দেয়ায় সংখ্যালঘুদের অধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে।

সার্বিয়া ইউরোপিয় ইউনিয়নের সদস্য হতে চায়। এ লক্ষ্যে আলোচনা চলছে। আলোচনার অগ্রগতি নিয়ে গতবছর প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে ইইউ বলেছে, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে তাদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নির্মাণ ও নিবন্ধনের অনুমতি দিতে হবে।

সার্বিয়ায় মোট ২ লাখ ৩০ হাজার মুসলমানের বাস। অর্থাৎ মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩ দশমিক ১ শতাংশ মুসলমান। তাদের বেশিরভাগই থাকেন বসনিয়া, কসোভো ও মন্টেনেগ্রোর সীমান্ত সংলগ্ন সার্বিয়ায় স্যান্ডজাক রাজ্যে।

যুগোস্লাভিয়ার পতনের পর বসনিয়ায় মুসলিম বসনিয়াকদের হত্যায় সমর্থন জানিয়েছে সার্বিয়া। এছাড়া দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য কসোভোর মুসলিম আলবেনীয়দের বিরুদ্ধেও যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিল সার্বিয়া।

গত অক্টোবরে দুই দিনের সফরে সার্বিয়া গিয়েছিলেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেব এরদোয়ান। এ সময় তিনি তিনি মুসলিম অধ্যুষিত সবনিয়া ও নভি পাজারে ভ্রমণ করেন। এ সময় তার সঙ্গে ছিল সার্বিয়ার প্রেসিডেন্ট আলেক্সজেন্ডার ভুকিক। সেখানে প্রায় ২০ হাজার লোকের বিশাল সমাবেশ ঘটে। প্লাকার্ড, পতাকা হাতে সমাবেশে আসে মানুষ। ‘আল্লাহু আকবার’, ‘স্বাগতম সুলতান’  এই জাতীয় নানা স্লোগান লেখা ছিল প্লাকার্ডে।

সমাবেশে আসা ইসমাইলোভিক নামের একজন রয়টার্সকে জানান, ‘এরদোয়ান আমাদের জাতির নেতা, ভুকিক আমাদের দেশের নেতা। দুজনই মুসলিমদের জন্য বন্ধুসুলভ।’

এরদোয়ানের এই সফরকে বলকান অঞ্চলে তুরস্কের প্রভাব ফিরিয়ে আনার প্রথম পদক্ষেপ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

সোনালীলিনিউজ/ঢাকা/এআই

Wordbridge School
Link copied!