• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কেমন আছেন সেই মার্কিন তরুণী এলিজাবেথ?


নিউজ ডেস্ক জানুয়ারি ২১, ২০১৮, ০৩:২৫ পিএম
কেমন আছেন সেই মার্কিন তরুণী এলিজাবেথ?

ঢাকা: ভালবাসাকে নিজের করে পেতে প্রাসাদ ছাড়ে কুঁড়ে ঘরে উঠার উদাহরণ অনেক আছে। সম্প্রতি তো জাপানের রাজকুমারী তার প্রেমিকের জন্য প্রাসাদ ছেড়ে সাধারণ এক ফ্লাটে উঠেছেন।

শুধু প্রেমিকা নয় অনেক প্রেমিকও এমন দৃষ্টান্ত রেখেছেন- তেমিন মালয়েশিয়ার এক রাজকুমারীকে পেতে ডাচ এক সাধারণ ছেলে মুসলিম হয়ে রাজকুমারীকে বিয়ে করেছেন। এতো গেল বিদেশিদের কথা। প্রেমিককে পেতে সাত সমুদ্র তের নদী পড়ি দিয়ে বাংলাদেশে জীর্ন কুঠিরে এসে ঠাঁই নিয়েছেন আনেক ধনীর দুলাল ও দুলহানিরা।

ভাষা-সংস্কৃতি, ধর্ম-বর্ণসহ নানা সংস্কার ও ভেদাভেদ ভুলে শুধু প্রেমের টানে বাংলাদেশে ছুটে এসেছেন তারা। ঘর ছেড়েছেন ভালোবাসার টানে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পরিচয়ে হাজার হাজার কিলোমিটার দূর থেকে উড়ে এসেছেন বাংলাদেশের গ্রামেগঞ্জে।

সম্প্রতি আমেরিকা থেকে ঝিনাইদহের শ্বশুর বাড়িতে এসে বিবাহবার্ষিকী পালন করেছেন সেই মার্কিন তরুণী এলিজাবেথ। ২০১৭ সালের ৬ই জানুয়ারি তিনি কালীগঞ্জ উপজেলার রাখালগাছি গ্রামের নির্মল বিশ্বাসের ছেলে মিঠুন বিশ্বাসকে বিয়ে করেন। এ

রআগে ২ জানুয়ারি প্রেমের টানে আমেরিকা থেকে বাংলাদেশে চলে আসেন ওই মার্কিন তরুণী। একের পর এক বাধা পেরিয়ে আজ তারা সুখী দম্পতি।
মিঠুনের বাবা মা যেমন বিদেশিনী পুত্রবধূকে বুকে টেনে নিয়েছেন, তেমনি এলিজাবেথের পরিবারও মেনে নিয়েছে বাংলাদেশি জামাইকে। শ্বশুরবাড়িতে ভালোই দিন কাটছে এলিজাবেথের। মাঝে মাঝে সাংবাদিকরা আসছেন, তাদের বিষয়ে খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। এলিজাবেথও হাসি মুখে কথা বলছেন। তার কথা- যুক্তরাষ্ট্রে যদি ফিরে যেতে হয়, তাহলে হৃদয়ে মিঠুনের জন্য ভালোবাসা অটুট থাকবে।

তবে তাদের এই ভালোবাসা প্রথমে সহজ ছিল না। কত যে বাধা এসেছে। শুধু পরিবারেরই নয়, ধর্ম, সমাজ রাষ্ট্র সব মিলিয়ে অনেক বাধা ছিল। তাদের পরিচয় তো ফেসবু‌কেই। অতঃপর প্রেম, ভালোবাসা, মন দেয়া নেয়া। আর সেই ভালোবাসার টানে সুদূর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাবা-মা আত্মীয়দের ছেড়ে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার রাখালগাছি গ্রামে প্রেমিক মিঠুনের কাছে চলে আসেন মার্কিন তরুণী এলিজাবেথ। পরে তারা বিয়ে করেন।

প্রথমে তো মিঠুন ও এলিজাবেথের সম্পর্কের কথা শুনে বেঁকে বসেন এলিজাবেথের বাবা। জঙ্গি হামলার কথা বলে একের পর এক ভয় দেখান এলিজাবেথকে। সম্প্রতি বিভিন্ন জঙ্গি হামলার কথা উল্লেখ করে তার বাবা বলেন- তাকে বাংলাদেশে নিয়ে হত্যা করা হবে। তবুও থেমে থাকেনি এলিজাবেথ। ওয়াশিংটনে হিসাব রক্ষক হিসেবে একটি ফার্মে চাকরি নেন। চাকরির সেই টাকা জমিয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন।

এলিজাবেথ বলেন- ‘দুই বছর আগে ফেসবুকে পরিচয়, আমি অ্যামেরিকায় ভালই ছিলাম, এখনও তাই। আমি মনে করি বাংলাদেশ একটি সুন্দর দেশ। আমি অন্যদেরকেও উৎসাহি করি, আমি বিষয়টিকে আনন্দের সাথে দেখছি। মিঠনের পরিবার আমাকে তাদের মতো করে গ্রহণ করেছে। স্বামী হিসেবে মিঠন অনেক ভালো’।

এলিজাবেথের স্বামী মিঠুন বিশ্বাস বলেন- ‘আমি সিংগাপুরে ছিলাম বেশ কয়েক বছর। মূলত এলিজাবেথের সঙ্গে সম্পর্কটা শুরুই হয় ওখান থেকে। ফেসবুকের মাধ্যমে। ২০১৫ সালে বন্ধুত্ব শুরু। আমরা দুই জনেই খ্রিষ্টান ধর্মের হওয়ায় আমাদের সম্পর্কটা আস্তে আস্তে প্রেমের সম্পর্কে রূপ নেয়। গত ২ জানুয়ারি এলিজাবেথ বাংলাদেশে চলে আসে। আমরা ওকে এয়ারপোর্ট থেকে নিয়ে আসি। পরবর্তীতে ধর্মীয় রীতি মেনে গত ৬ই জানুয়ারি আমাদের বিয়ে হয়।`

তিনি আরও বলেন, এলিজাবেথ আমার সঙ্গে মাঝে মাঝে যোগাযোগ করতে না পারলে হতাশ হয়ে পড়তো। আমাদের সম্পর্কটা ওর বাবা মা ও পরিবার মেনে নেয়নি। একপর্যায়ে তাকে চলে আসতে বলি। সেও আমার প্রস্তাবটা মেনে নিয়ে চলে আসে বাংলাদেশে।

তবে এলিজাবেথ জানান স্বামীকে নিয়ে তিনি ভালো আছেন, তার সিদ্ধান্তের কোন পরিবর্তন হবে না। নিজ দেশে গেলেও কাছে থাকবেন তার ভালোবাসার মানুষ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার রাখালগাছি গ্রামের পঞ্চানন্দ বিশ্বাসের ছেলে মিঠুন বিশ্বাসের প্রেমে পড়েন মার্কিন তরুণী এলিজাবেথ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে তাদের প্রথমে পরিচয়। ধীরে ধীরে এই পরিচয় প্রেমে রূপ নেয়। গত ২ জানুয়ারি এলিজাবেথ তার ভালোবাসাকে বাস্তবে পাওয়ার জন্যে বাংলাদেশে পাড়ি দেন। পরে খ্রিস্টান ধর্ম মতে তাদের বিয়ে হয়।


সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন

Wordbridge School
Link copied!