• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

কেমন দাঁড়াবে চীন-বিএনপি সম্পর্ক!


তাজুল ইসলাম অক্টোবর ১৩, ২০১৬, ১০:৫১ পিএম
কেমন দাঁড়াবে চীন-বিএনপি সম্পর্ক!

ঢাকা: স্বাধীনতাযুদ্ধের সময়ে অক্ষশক্তির প্যাঁচে পড়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অবস্থান ছিল চীনের। তবে সেই অবস্থান খুব বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। পঁচাত্তরের পট পরিবর্তনের পর কূটনীতির পথে বাংলাদেশ পা বাড়ায় পূর্ব দিকে। সেখানে প্রথমেই বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দেয় চীন।

১৯৭৫ পরবর্তী চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেন তখনকার রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। দীর্ঘ সময় এই সম্পর্ক সংহত থাকলেও তা হোঁচট খায় ২০০১ সালে। সে সময়ে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় ঐক্যজোট ক্ষমতায় আসার পর চীনের সঙ্গে সম্পর্কের চরম অবনতি ঘটে। যেখানে মূলত ইস্যু ছিল তাইওয়ান। রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকা বিএনপি দুই চীন নীতি অবলম্বন করে নিজের সর্বনাশ ডেকে আনে। সেদিন যারা ওই কাজটি নিজেদের বাণিজ্যিক স্বার্থে করেছিলেন, তারা অনেকেই এখন বিএনপির নীতিনির্ধারকের দায়িত্ব পালন করছেন।

চীন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ‘স্বাধীন রাষ্ট্র’ হওয়ার দাবি তাইওয়ানের অনেক দিনের। কিন্তু চীন সব সময়ই তাইওয়ানকে তাদের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে ঘোষণা করে আসছে। তাইওয়ান ইস্যুটি তাই চীনের জন্য খুবই স্পর্শকাতর। কিন্তু ২০০১ সালে বিএনপি জোট ক্ষমতায় আসার পর সেই তাইওয়ানকে ‘স্বাধীন রাষ্ট্র’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এরপর ঢাকায় তাইওয়ান কনস্যুলেট অফিস খোলে।

এই ঘটনাটি চীন তাদের সার্বভৌমত্বের ওপর হস্তক্ষেপ মনে করে এবং ঢাকায় তাইওয়ানের কনস্যুলেট অফিস খোলার তীব্র বিরোধিতা করে। তখন থেকেই মূলত বিএনপির ওপর ক্ষিপ্ত চীন। যার ফলে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কেরও অবনতি ঘটে। তখন দেশে-বিদেশে ও বিএনপির ভেতরে এই ঘটনায় ব্যাপক সমালোচনার ঝড় ওঠে।

কেউ কেউ অভিযোগের আঙুল তোলেন তখন রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকা প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমানের দিকে। এ সময় বাণিজ্যিক স্বার্থে যারা কাজটি করেছিলেন, তারা সাফাই গাওয়া শুরু করেন যে, কূটনৈতিক সম্পর্ক নয়, তাইওয়ানকে ঢাকায় বাণিজ্যিক অফিস খুলতে দেয়া হয়েছে। অসাধারণ এই যুক্তি খাড়া করে তখন দেশের মানুষকে বোকা বানানো হয়। অথচ তাইওয়ান ইস্যুতে বাংলাদেশের এক নির্ভরযোগ্য মিত্র ও উন্নয়ন সহযোগী গণচীন মুখ ফিরিয়ে নেয় বিএনপির ওপর থেকে। অনেকটা শীতল হয়ে যায় ঢাকা-বেইজিং সম্পর্ক। অবশেষে ঢাকায় সফররত চীনা রাষ্ট্রপতি শি জিনপিংয়ের সফরকালে ফের রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রশ্ন উঠেছে, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করতে পারবে কি বিএনপি?

এদিকে, শেষবার ক্ষমতা হারানোর পর চীনের সঙ্গে সেই সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের জন্য নতুন উদ্যোগ নেয় বিএনপি। চীনের কমিউনিস্ট পার্টির আমন্ত্রণে ২০১০ ও ২০১২ সালে বেইজিং সফরে যান বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। দু’দফায় খালেদা জিয়া বেইজিংয়ে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ দেশটির কমিউনিস্ট পার্টির নেতাদের সঙ্গে বৈঠকও করেন। কিন্তু এরপরও চীন-বিএনপি সম্পর্কের বরফ গলেনি। বরং গত বছরের মে মাসে চীনের উপপ্রধানমন্ত্রী লিউ ইয়ান বাংলাদেশ সফরে এলেও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তার দেখা পাননি। এ কারণে ঢাকায় সফররত চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিংয়ের সঙ্গে খালেদা জিয়ার দেখা-সাক্ষাতের বিষয়টিকে ব্যাপক গুরুত্ব দিচ্ছে বিএনপি।

বিএনপির কূটনৈতিক বিষয়াদি দেখাশোনা করেন সংশ্লিষ্ট এমন নেতারা ইতিমধ্যে জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন শি জিনপিংয়ের সঙ্গে খালেদা জিয়ার সাক্ষাতের জন্য। তারা বলছেন, এই দু’জনের সাক্ষাতে চীনের সঙ্গে হারানো সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের একটি সুযোগ আসতে পারে।

সংশ্লিষ্ট নেতাদের দাবি, শি জিনপিং-খালেদা জিয়া সাক্ষাতে চীনের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটবে, বাড়বে দুই দেশের মানুষের মধ্যে যোগাযোগ। নেতারা বলছেন, বিএনপি ক্ষমতায় এলে আগামীতে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া হবে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক সেনাপ্রধান মাহবুবুর রহমান বলেন, চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিংয়ের ঢাকা সফরকে আমরা স্বাগত জানাই। আমরা আশাবাদী চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং ও বিএনপি চেয়ারপারসনের মধ্যে সাক্ষাৎ হবে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, অবশ্যই খালেদা জিয়ার সঙ্গে শি জিনপিং দেখা করবেন।

মাহবুবুর রহমান বলেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আমল থেকেই চীনের সঙ্গে আমাদের দলের সুসম্পর্ক রয়েছে। তাই আমি মনে করি, ‘শি জিনপিং-খালেদা জিয়া সাক্ষাৎ’ বিশেষ ফলপ্রসূ হবে।

এ ছাড়া চীনের রাষ্ট্রপতির ঢাকা সফরকে স্বাগত জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, চীনের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ভালো ছিল, এখনো আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে। আগামীতে বাংলাদেশে যে সরকারই আসুক, সব সরকারেরই চীনের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক থাকবে।

কখন, কোথায় ‘শি জিনপিং ও খালেদা জিয়ার মধ্যে ওই দেখা-সাক্ষাৎ’ হবে-এ বিষয়টি বিএনপির তরফ থেকে গোপন রাখা হয়েছে। তবে দলটির কূটনৈতিক বিষয়াদি দেখেন এমন একজন সিনিয়র নেতা জানান, চীনের রাষ্ট্রপতি ঢাকায় যে হোটেলে থাকবেন, সেখানেও শি জিনপিং ও খালেদা জিয়ার মধ্যে দেখা হতে পারে। অথবা ঢাকায় চীনা দূতাবাসেও হতে পারে এই সাক্ষাৎপর্ব। 
এদিকে, বৃহস্পতিবার রাতে বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ও চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিংয়ের মধ্যে শুক্রবার বিকেল ৫টায় রাজধানীর হোটেল লা মেরিডিয়ানে সাক্ষাৎ হবে। এ সময় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলের বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতা উপস্থিত থাকবেন বলে জানান শায়রুল কবির খান।

সোনালীনিউজ/এমএন

Wordbridge School
Link copied!