• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

কেমন সরকারের অধীনে নির্বাচন চায় আ.লীগ-বিএনপি


হৃদয় আজিজ জানুয়ারি ১৪, ২০১৮, ০২:০৮ পিএম
কেমন সরকারের অধীনে নির্বাচন চায় আ.লীগ-বিএনপি

ঢাকা: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ‘নির্বাচনকালীন’ সরকারের অধীনে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে, নির্বাচনকালীন সরকারের ‍রূপরেখা কেমন হবে তা এখনো পরিষ্কার করা হয়নি দলটির পক্ষ থেকে। 

এদিকে সংসদের বাইরের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি বলছে ‘অন্তবর্তী’ সরকারের কথা। যা নিয়ে তারা ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে বসতেও চায়। তবে তারাও অন্তবর্তী সরকারের রূপরেখাও জনগণের কাছে প্রকাশ করেনি। দলটি বলছে সময় হলেই বিষয়টি জানিয়ে দেবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতা গ্রহণের চার বছর পূর্তি উপলক্ষে শুক্রবার (১২ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে বরাবরের মতোই বিএনপির সঙ্গে আলোচনার বিষয়টি নাকোচ করে সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনের কথা বলেছেন।

‘সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনের আগে নির্বাচনকালীন সরকার গঠিত হবে। সেই সরকার সর্বতোভাবে নির্বাচন কমিশনকে নির্বাচন পরিচালনায় সহায়তা দিয়ে যাবে।’

সেই ‘নির্বাচনকালীন’ সরকার রূপরেখা কী হবে?
আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ এক নেতা বলছেন, বর্তমান সরকারই হবে নির্বাচনকালীন সরকার। এতে বিএনপির ঠাঁই হবে না। অপর দিকে বিএনপি চায় এমন একটি সরকার, যারা রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা বজায় রেখে সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে।

নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে সংবিধানে সরাসরি কিছু বলা নেই। তবে ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে মন্ত্রিসভার সদস্যসংখ্যা কমিয়ে নতুন-পুরোনো মিলিয়ে ‘নির্বাচনকালীন সরকার’ গঠন করে আওয়ামী লীগ। এই সরকারে জাতীয় পার্টি, ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ ও জাতীয় পার্টিকে (জেপি) রাখা হয়েছিল। 

অন্য দল থেকে তিনজনকে উপদেষ্টা হিসেবে রাখা হয়, যারা নির্বাচিত ছিলেন না। এর আগে প্রধানমন্ত্রীসহ আওয়ামী লীগের নেতারা নির্বাচনে অংশ নিলে বিএনপিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ কয়েকটি মন্ত্রণালয় ছেড়ে দেয়ার কথা বলেছিলেন। কিন্তু এবার নির্বাচনকালীন সরকার কেমন হবে, তা নিয়ে নিশ্চিত নন আওয়ামী লীগের নেতারাও। নির্বাচন কমিশনের সামনেও এর কাঠামো স্পষ্ট নয়।

বিষয়টি আরো পরিষ্কার করেছেন আওয়ামী লীগের জেষ্ঠ্য নেতা তোফায়েল আহমেদ, ‘সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান সরকারই হবে নির্বাচনকালীন সরকার। অন্য কিছু না। অন্য দল থেকে লোক নিয়ে সরকার গঠন করতে হবে এমন কথা প্রধানমন্ত্রী বলেন নি।’

তবে শেষ পর্যন্ত সরকার যদি বিএনপির সঙ্গে আলোচনায় যায়, তাহলে কীভাবে তারা নির্বাচনকালীন সরকারে বিএনপিকে রাখবে? সেক্ষেত্রে টেকনোকেট কোটায় বিএনপিকে সরকারের একটি অংশ করতে পারে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা।

বিএনপির ‘আন্তবর্তী’ সরকার
২০১১ সালে সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাদ দেয়ার পর থেকে নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে তীব্র মতপার্থক্য তৈরি হয়। এর ফলে ২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জন করে বিএনপিসহ দলটির নেতৃত্বাধীর জোটসহ আরো অনেক দল। বিএনপি চায় এমন একটি সরকার, যারা রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা বজায় রেখে সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে। আর আওয়ামী লীগ তাদের আমলে সংশোধিত সংবিধানের বাইরে যেতে রাজি নয়। 

বিএনপি সেই সরকাটির নাম দিয়েছে ‘আন্তবর্তী সরকার’। তারা বলছে সেটা হবে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার। তবে তার রূপরেখা কী হবে তা এখনো বলা হয়নি।

একটি বিদেশি সংবাদ মাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাতকারে দলটির মহাসচিব জানিয়েছেন যে, ‘আমরা মনে করি, সরকার যদি সাধারণ মানুষের কথা ভাবে তাহলে তাদের আলোচনার পথে আসতেই হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।’

যদি আওয়ামী লীগ আলোচনা না করে তাহলে বিএনপি কি করবে? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমরা এখনো কোন সিদ্ধান্ত নেইনি।’ তবে একটি অন্তবর্তী সরকারের রূপরেখা দেয়ার পরিকল্পনার কথা জানান তিনি।

‘সময় হলেই আমরা রূপরেখা দেব। তবে আমরা মনে করি নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে আলোচনার উদ্যোগ নিতে পারে সরকার। আমরা সে আহ্বানই জানাই।’

তবে বিএনপি নেতাদের কথায় বোঝা যায় যে তাদের আন্তবর্তী সরকারের ধারণা মূলত অনেকটাই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মত। যেখানে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখা হসিনাকে বাদ দিয়ে নির্দলীয় একজনকে সরকার প্রধান করে তার অধীনে নির্বাচনে যাওয়া। তবে, সরকার প্রধান যিনি হবেন, তাকে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হতে হবে।

যেহেতু আওয়ামী লীগ বলছে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে সেখানে নির্দলীয় বিষয়টি আদৌ আওয়ামী লীগ গ্রহণ করবে কী না তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। 

বিশ্লেষকদের শঙ্কা
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, দুইদলের অনমনীয়তার কারণে সব দলের অংশগ্রহণে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে কি-না তা অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার মনে করেন, এবারো একটি একতরফা নির্বাচনের শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

‘এবার প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে যে কথা বলেছেন, ২০০৬ সালেও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ভাষণে খালেদা জিয়াও একই কথা বলেছিলেন। ২০১৩ সালেও শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে একই কথা বলেছিলেন। তারা বলেছিলেন সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে। এতে দেখা গেছে, ২০০৭ সালে নির্বাচন হলো না, অন্য সরকার এলো। ২০১৪ সালেও একতরফা নির্বাচন হল, যা কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। এবারও প্রধানমন্ত্রী একই কথা বললেন। যার ফলে যদি একতরফা একটা নির্বাচন হয়ে যায়, তা আমাদের বিপর্যয়ের দিকে নিয়ে যাবে।’

একই কথা বলেছেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজ উদ্দিন খানেরও। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে অনেক কিছুই পরিষ্কার হয়নি। নির্বাচনকালীন এই পার্লামেন্ট ভেঙে দেয়া হবে কি না, না এই পার্লামেন্টই থাকবে তা পরিষ্কার নয়। তাই কেমন নির্বাচন হতে যাচ্ছে, সে ব্যাপারে আমরা কিছুই বুঝতে পারছি না।’

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এআই

Wordbridge School
Link copied!