• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কেরোসিন-ডিজেলের দাম কমানোর সুপারিশ সিপিডির


নিজস্ব প্রতিবেদক এপ্রিল ১৬, ২০১৭, ০৬:৩৩ পিএম
কেরোসিন-ডিজেলের দাম কমানোর সুপারিশ সিপিডির

ঢাকা: জাতীয় নির্বাচনের সময় আছে দুই বছরেরও কম। আগামী বছর হলো নির্বাচনের আগের বছর। ফলে আগামী ২০১৭-১৮ অর্থ-বছরের বাজেট হবে নির্বাচনী বড় আকারের বাজেট। এজন্য রাজনৈতিক অর্থনীতি খুব গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে। গরিবের জ্বালানি কেরোসিন ও ডিজেলের দাম কমানো দরকার। এমন মতামত দিয়েছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)।

রোববার (১৬ এপ্রিল) রাজধানীর ব্র্যাক ইন সেন্টারে আগামী অর্থ-বছরের বাজেট উপলক্ষ্যে সুপারিশ দিতে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে সংস্থাটি। আর মাত্র দেড় মাস পর আগামী ১ জুন জাতীয় সংসদে উপস্থাপিত হবে ২০১৭-১৮ অর্থ-বছরের জাতীয় বাজেট। সেই বাজেটের প্রস্তুতি নিচ্ছে অর্থমন্ত্রণালয়।

প্রতিবারই জাতীয় বাজেট প্রণয়নের পূর্বে দেশের অর্থনীতি নিয়ে গবেষণাকারী সংস্থা সিপিডি সরকারের কাছে বেশ কিছু সুপারিশ তুলে ধরে। এবারো সেই সুপারিশ উপস্থাপনের বিষয়ে জানাতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

সিপিডি বলছে, প্রতিবছর বড় বাজেট হচ্ছে বলে যে কল্পকাহিনি বাজারে ছড়ানো হচ্ছে, তা একধরনের আর্থিক ভ্রম। বাজেট বড় বলা হচ্ছে, কিন্তু তা আসলে বড় নয়। কেননা, কর জিডিপি অনুপাত কিংবা ব্যয় জিডিপি অনুপাত আগের চেয়ে খুব বেশি বাড়েনি। গত কয়েক বছরে কর সংগ্রহে সফলতা এলেও ব্যয় করার সামর্থ্য বাড়েনি। এটি একটি অদ্ভুত বিষয়।

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও সিপিডির ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, আমাদের দেশে বাজেট করার আগে গণমানুষের সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়, সেটা দেখিনি। জনপ্রতিনিধি বা সংসদ সদস্যদের অংশগ্রহণ না থাকায় বাজেট বাস্তবায়ন হয় না। নির্বাচনের আগে সরকার বড় ধরনের কোনো সংস্কার কাজে হাত দেবে কিনা সেটা নিয়ে সংশয় রয়েছে। তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, ব্যয় করার সামর্থ্য না বাড়িয়ে সরকার কেন বড় বাজেটে যাবেন? 

অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমরা বাজেট অনেক বড় করছি। কিন্তু এই বড় বাজেট বাস্তবায়নের সক্ষমতা নিয়ে এখন প্রশ্ন রয়েছে। তবে গুণগত মান দেখতে হবে। বাড়াতে হবে বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোর দক্ষতা। সরকার এখন বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে এখন প্রশ্ন আসবে। তাই আগামীতে এসবের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বরাদ্দ রাখতে হবে। তিনি বলেন, জনগণ বাজেট থেকে যাতে সুফল পায়, সেজন্য বাজেটকে বিকেন্দ্রীয়করণ করতে হবে। যেটা অনেক আগে থেকেই বলা হচ্ছে।

দেবপ্রিয় বলেন, বরাদ্দ বাড়ানো হচ্ছে কিন্তু সময় হয়েছে রাজনৈতিক অর্থনীতিকে গুরুত্ব দেয়ার। রাজনৈতিক অর্থনীতি যদি ঠিক করা না যায় তাহলে বরাদ্দ বৃদ্ধি ও প্রবৃদ্ধির আকারে কোনো আসে যায় না। রাজনীতি যদি সঠিক পথে এগোয় তাহলে অর্থনীতির সুবিধা তৃণমূল মানুষ পাবে।

সিপিডির এই ফেলো বলেন, বাস্তবভিত্তিক পর্যালোচনা ছাড়াই আমাদের বাজেট তৈরি করা হয়। বড় বাজেট নামে কল্পকাহিনী ছড়ানো হচেছ বাজারে। আমাদের আর্থিক সামর্থ্য কিছুটা বাড়লেও ব্যয়ের সক্ষমতা বাড়েনি। পরোক্ষ করের বিপরীতে প্রত্যক্ষ কর বাড়ানো না হলে, ন্যায়বিচারের ব্যাঘাত ঘটবে।

ব্যক্তি খাতকে প্রতিযোগিতামূলক রাখতে হলে উৎপাদন ব্যয়ে সরকারকে সমর্থন দিতে হবে। জ্বালানি তেলের দাম কমাতে হবে, মাঝারি শিল্পে সমর্থন দিতে কর রেয়াত দিতে হবে, বিশেষ অর্থনৈতিক জোনের (ইজেড) কাজ দ্রুত করতে হবে। সামাজিক নিরাপত্তায় বরাদ্দ বাড়াতে হবে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে মাথাপিছু প্রকৃত ব্যয় সাম্প্রতিক সময়ে কমে গেছে। এটাকে বাড়াতে হবে বলে মতামত তুলে ধরেন দেবপ্রিয়।

সিপিডি মনে করছে বাজেট বাস্তবায়নের সরকারের দুর্বলতা রয়েছে। এই দুর্বলতা কাটাতে সংস্থাটির পক্ষ থেকে পাঁচটি সুপারিশ দেয়া হয়। এগুলো হচ্ছে কেরোসিন ও ডিজেলের দাম কমানো, রপ্তানি ও প্রবাসী আয় খাতকে সুবিধা দিতে স্বল্প মেয়াদে টাকার মূল্যমান কমানো, সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানো, চালের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং ব্যাংকিং খাতের দুর্বলতা দূর করতে স্বাধীন আর্থিক খাত সংস্থার কমিশন গঠন।

সিপিডি বলছে, দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিতে মুদ্রাস্ফীতি নিম্নগামী রয়েছে। তবে খাদ্যে মুদ্রাস্ফীতি বাড়বে আগামীতে। গত মৌসুমে আমনের সময় উৎপাদন ভালো হয়নি। ফলে চালের মজুদও কম হয়েছে। এ কারণে চালের আমদানি বৃদ্ধি করতে হবে এবং চালের দামও বাড়বে।

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুনের সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য দেন সংস্থাটির অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম ও তথ্য উপস্থাপ করেন রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান।
 
সোনালীনিউজ/ঢাকা/তালেব

Wordbridge School
Link copied!