• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
প্রতি তিনদিনে শতকোটিপতি

কোটিপতি তৈরির আঁতুড়ঘর এখন এশিয়া


নিজস্ব প্রতিবেদক   অক্টোবর ২৯, ২০১৬, ১০:১০ পিএম
কোটিপতি তৈরির আঁতুড়ঘর এখন এশিয়া

ঢাকা: ইউরোপ-আমেরিকাকে পেছনে ফেলে বিশ্বে কোটিপতি তৈরির উর্বর ক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে অপেক্ষাকৃত পিছিয়ে পড়া এশিয়া। বিশ্বের সর্ববৃহৎ এই মহাদেশে এখন প্রতি তিনদিনে তৈরি হচ্ছে একজন করে বিলিয়নিয়ার (শতকোটিপতি)।

গেল বছরে (২০১৫) সারাবিশ্বে নতুন বিলিয়নিয়ারের মর্যাদা পেয়েছেন ২১০ ব্যক্তি। এর মধ্যে ১১৩ জনই হলেন এশিয়ার বাসিন্দা। যার মধ্যে শুধুমাত্র চীনের নাগরিকই রয়েছেন ৮০ জন। যা বিশ্বের নতুন বিলিয়নিয়ারের মর্যাদা পাওয়া ব্যক্তিদের শতকরা ৩৮ ভাগ।

এসব তথ্য উঠে এসেছে একটি গবেষণা থেকে। বহুজাতিক নিরীক্ষা ও প্রযুক্তি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান প্রাইস ওয়াটারহাউস কুপারস (পিডব্লিউসি) এবং সুইজারল্যান্ডের বহুজাতিক আর্থিক ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান ইউবিএস যৌথভাবে ওই গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনের শিরোনাম ‘বিলিয়নিয়াররা কি চাপে আছেন?’

গবেষণার ফলাফলে সবার আগে আলোচনায় উঠে এসেছে এশিয়ার নাম। সে কারণেই এশিয়া মহাদেশকে বলা হচ্ছে বিলিয়নিয়ার বা শত কোটিপতি তৈরির নতুন আঁতুড়ঘর।

চীনে কয়েক বছর ধরে বিলিয়নিয়ারের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি প্রতিবেদনে আলাদাভাবে তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, এশিয়ায় ২০১৪ ও ২০১৫ সালের মধ্যে নতুন করে যত বিলিয়নিয়ার তৈরি হয়েছে, এর ৭০ শতাংশই চীনের নাগরিক। দেশটিতে গত দুই বছরে যত লোক বিলিয়নিয়ারের খাতায় নাম লিখিয়েছেন, তার অর্ধেকই এসেছেন প্রযুক্তি, ভোগ্যপণ্য ও খুচরা ব্যবসা এবং আবাসন এই তিন খাত থেকে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ১৯ শতাংশ এসেছে প্রযুক্তি খাত থেকে। খুচরা ভোগ্যপণ্য ও আবাসন খাত থেকে শতকোটি ডলারের মালিক হয়েছেন ১৫ শতাংশ করে চীনা নাগরিক।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৫ সালে চীনে বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ বেড়েছে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। চীনের বাইরে সবচেয়ে বেশি বিলিয়নিয়ার বেড়েছে ভারত ও হংকংয়ে। দেশ দুটিতে ১১ জন করে নতুন বিলিয়নিয়ারের মর্যাদা পেয়েছেন।

সম্পদ বৃদ্ধির পাশাপাশি বিপরীত চিত্রটিও প্রকট ছিল এশিয়ায়। ২০১৫ সালে বিলিয়নিয়ারের তালিকা থেকে সবচেয়ে বেশি বাদও পড়েছেন এশিয়ার ধনকুবেরেরা। এ সময় বিলিয়নিয়ারের মর্যাদা হারিয়েছেন ৮০ জন এশীয়। ইউরোপে এ সংখ্যা ছিল ৪৪, আর যুক্তরাষ্ট্রে ছিল ৩৬। একক দেশ হিসেবে চীনের ৪০ জন নাগরিক শতকোটিপতির মর্যাদা খুইয়েছেন।

২০১৫ সালে যারা নতুন বিলিয়নিয়ার হয়েছেন তাদের বেশিরভাগই পেশায় উদ্যোক্তা। ১৫০ ব্যক্তি এ সময় নিজ উদ্যোগে শতকোটি ডলারের মালিক হয়েছেন। এর মধ্যে এশিয়ার ১১৩ নাগরিক আছেন। উত্তরাধিকার সূত্রে সবচেয়ে বেশি বিলিয়নিয়ার হয়েছেন ইউরোপ মহাদেশ থেকে। প্রতিবেদনে এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, নিজের চেষ্টায় যারা বিলিয়নিয়ার হয়েছেন তাদের সম্পদ উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া সম্পদধারীদের তুলনায় অনেক বেশি।

যুক্তরাষ্ট্রের বিলিয়নিয়ার পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত এক বছরে দেশটিতে নতুন শতকোটিপতির সংখ্যা বেড়েছে মাত্র ১ শতাংশ। এ সময়ে বিলিয়নিয়ারের খাতায় যোগ হয়েছেন ৪১ জন মার্কিন নাগরিক, আর বাদ পড়েছেন ৩৬ জন। যদিও সারা বিশ্বে বিলিয়নিয়ারদের হাতে মোট যত সম্পদ আছে, তার ৪৭ শতাংশ আছে মার্কিন ধনকুবেরদের হাতে।

দেশটিতে শীর্ষ ধনীর সংখ্যা তেমন বৃদ্ধি না পাওয়ার কারণ সম্পর্কে বলা হয়েছে, বিশ্বে পণ্যের বাজারে মন্দা ও পারিবারিক সম্পত্তির হাতবদল হওয়ায় এ সময়ে নতুন সম্পদ বাড়েনি। আবার প্রযুক্তি ও আর্থিক খাতের উদ্যোক্তাদের জন্য ২০১৫ সালটা খুব একটা সুখকর ছিল না। এ সময়ে মার্কিন ধনকুবেরদের গড় সম্পদের পরিমাণও কমে গেছে। ২০১৪ সালে দেশটিতে গড়ে একজন বিলিয়নিয়ারের হাতে ছিল ৪৭০ কোটি ডলার, ২০১৫ সালে যা কমে ৪৫০ কোটি ডলার হয়েছে।

প্রতিবেদনে ইউরোপে নতুন ধনী সে হারে বাড়ছে না বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, ইউরোপে কয়েক পুরুষ ধরে সম্পদ ঘুরে ফিরে কিছু ব্যক্তি ও পরিবারের মধ্যে আটকে আছে। যারা আগে থেকে ধনী তারাই সম্পদ বাড়াতে অথবা ধরে রাখতে পারছেন। ২০১৫ সালে এ অঞ্চলে নতুন করে বিলিয়নিয়ার হয়েছেন ৫৬ জন, আর এ তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন ৪৪ জন।

আগামী ২০ বছরে বিশ্বে বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ হাতবদলের ক্ষেত্রে একটি পরিবর্তন শুরু হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে পিডব্লিউসি-ইউবিএসের প্রতিবেদনে। এ সম্পর্কে বলা হয়েছে, আগামী ২০ বছরে ৫০০ বিলিয়নিয়ার ব্যক্তি তাদের পরবর্তী প্রজন্মের কাছে দুই লাখ ১০ হাজার কোটি ডলারের সমপরিমাণ সম্পদ হস্তান্তর করবেন। এই অর্থ ভারতের মোট দেশজ উৎপাদনের সমান। এশিয়ায় প্রতি তিন দিনে তৈরি হচ্ছে একজন বিলিয়নিয়ার ২০১৫ সালে এশিয়ায় ১১৩ জন নতুন বিলিয়নিয়ারের মর্যাদা পেয়েছেন। এই সংখ্যা সারা বিশ্বের নতুন বিলিয়নিয়ারের সংখ্যার ৫৪ শতাংশ।

মার্কিন ধনকুবেরদের সম্পদ আগের মতো বাড়ছে না। ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে নতুন বিলিয়নিয়ারের সংখ্যা মাত্র ১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৫৩৮ হয়েছে। এই ধনকুবেরদের সম্মিলিত সম্পদের পরিমাণ এ সময় দুই লাখ ৬০ হাজার কোটি ডলার থেকে কমে দুই লাখ ৪০ হাজার কোটি ডলারে নেমে এসেছে।

সোনালীনিউজ/এমএন

Wordbridge School
Link copied!