• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

কোন দিকে যাচ্ছে মেধাবীদের ভবিষ্যৎ?


আবু সাঈদ সজল এপ্রিল ২১, ২০১৮, ০৪:৩৮ পিএম
কোন দিকে যাচ্ছে মেধাবীদের ভবিষ্যৎ?

ঢাকা: বর্তমানে সরকারি চাকুরি পেতে সকল কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান চায় প্রাকটিক্যাল অভিজ্ঞতা। কিন্তু পরিসংখ্যানে দেখা গেছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের তুলনায় প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই এগিয়ে। তার অন্যতম কারণ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চালু থাকা সান্ধ্যকালিন কোর্স। এই কোর্সে অভিজ্ঞতা ছাড়াই অর্থের বিনিময়ে মিলছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেট। ফলে সহজে সার্টিফিকেট পেতে সান্ধ্যকালীন কোর্সে ভিড় জমাচ্ছে প্রাইভেটের শিক্ষার্থীরা। আর শিক্ষকরা মানসম্মত শিক্ষা না দিয়েই অর্থের বিনিময়ে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দিচ্ছে ভারী ডিগ্রীর সার্টিফিকেট। ফলে শিক্ষার বাণিজ্যিক কার্যক্রমে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্থ হলেও যেন ক্রমেই সান্ধ্যকালীন কোর্সে আসক্ত হয়ে পড়ছেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালগুলোর শিক্ষকরা। তারা নিয়মিত শিক্ষার্থীদের ক্লাস, পরীক্ষায় অবহেলা ও ফলাফল দিনের পর দিন আটকে রাখলেও পেশাদারীদের কাছ থেকে শিক্ষার নামে হাতিয়ে নিচ্ছে নগদ টাকা। বিদ্যার কারীগরদের এরকম লালসার বিষয়টা খুবই হতাশা ও দুঃখজনক। তাদের জোগসাজসে চাকুরির বাজারে তারা আনায়াসে অতিক্রম করছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থীদের। ফলে জাতি হারাচ্ছে যোগ্য জনশক্তি। অযোগ্যদের দখলে চলে যাচ্ছে দেশ। অপরদিকে সরকারি চাকুরিতে বিদ্যমান কোটার ফলে একই রকম ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে দেশ। সম্প্রতি দেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনে বর্তমান সরকার শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিয়ে সম্পূর্ণরূপে বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু তা কার্যকর এখনও প্রক্রিয়াধীন। অপরদিকে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য পরীক্ষা হওয়ার কথা থাকলেও সান্ধ্যকালীন তার কোনো বালাই নেই। আর কোথাও কোথাও পরীক্ষা হলেও চলে নকলের মহোৎসব। এ ক্ষেত্রে সহায়তা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাই। বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছে সান্ধ্যকালীন কোর্সের বাজিমাত। সত্যিই কোন দিকে যাচ্ছে মেধাবীদের ভবিষ্যৎ?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) :
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বাণিজ্য অনুষদের ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ, অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম, মার্কেটিং, ফিন্যান্স, ব্যাংকিং, ম্যানেজমেন্ট ও ইনফরমেশন সিস্টেম, ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট ও ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, উন্নয়ন অধ্যয়ন, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র অধ্যয়ন, তথ্য ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা, সমাজকল্যাণ ইন্সটিটিউটে সান্ধ্যকালীন মাস্টার্স কোর্স রয়েছে। তবে এসব কোর্সে নামমাত্র শিক্ষায় সনদ দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ফলে নিয়মিত কোর্সের শিক্ষার্থীরাও এসব কোর্স নিয়ে ক্ষুদ্ধ। এছাড়া বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন প্রগতিশীল ছাত্রজোটের ব্যানারে ক্যাম্পাসে বাণিজ্যিক কোর্স বন্ধের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে আসছে। তবে আন্দোলনের কোন তোয়্ক্কা না করে শিক্ষকরা তাদের কার্যক্রম অব্যহত রেখেছে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) :
সান্ধ্যকালীন কোর্স নিয়ে রাবি শিক্ষার্থীরা ইতোমধ্যেই বিভিন্ন আন্দোলন করেছে। এ নিয়ে ২০১৪ সালের ২রা ফেব্রুয়ারি উত্তাল হয়ে ওঠে রাবি ক্যাম্পাস। এসব কোর্স বাতিলের দাবিতে ‘বর্ধিত ফি প্রত্যাহার ও বাণিজ্যিক সান্ধ্য কোর্স বিরোধী শিক্ষক-শিক্ষার্থী’ব্যানারে একাডেমিক ভবনগুলোতে তালা ঝুলিয়ে ধর্মঘট পালন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছিল শিক্ষার্থীরা। বিভিন্ন সময় শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনও ঘেরাও করে। এর ফলে সমাজবিজ্ঞান অনুষদের প্রায় সব বিভাগেই বাণিজ্যিক এসব কোর্সের প্রভাবে সেশনজটে আটকে যায় শিক্ষা কার্যক্রম। বিবিএ অনুষদভূক্ত বিভাগ ছাড়া কোন বিভাগে ভর্তি পরীক্ষা নেয়নি। গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সান্ধ্যকালীন কোর্সে স্থানীয় সাংবাদিকরা অনেকক্ষেত্রে কিছু না শিখেই ভারী ডিগ্রী হাতিয়ে নিচ্ছেন। রাবি বিজনেস স্টাডিস অনুষদের চারটি বিভাগে, আইন এবং সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সমাজ বিজ্ঞান, সমাজকর্ম, অর্থনীতি, লোকপ্রশাসন ও ইনফরমেশন সায়েন্স এন্ড লাইব্রেরী ম্যানেজম্যান্ট বিভাগে মাস্টার্সে সান্ধ্যকালিন কোর্স চালু রয়েছে।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) :
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদভুক্ত হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য পদ্ধতি, ব্যবস্থাপনা এবং ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগে সান্ধ্যকালীন কোর্স চালু রয়েছে। এছাড়াও রাষ্ট্রনীতি ও লোকপ্রশাসন বিভাগের অধীনে ডেভেলপমেন্ট স্ট্যাডিজ, গণিত, ইসলামের ইতিহাস, আল হাদীস, আল কোরআন বিভাগে সান্ধ্যকালীন কোর্স চালু রয়েছে। লোক প্রশাসন ছাড়া সব বিভাগেই দুই থেকে তিন বছরের জট থাকলেও মোটা অংকের টাকার লোভে অসাধু শিক্ষকরা শিক্ষা বাণিজ্য টিকিয়ে রেখেছেন। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদভুক্ত বিভাগগুলোতে ভর্তিতে পরীক্ষা হলেও অন্য বিভাগগুলোতে ভর্তির জন্য পরীক্ষা নেয়া হয়না। অনেক বিভাগ শিক্ষার্থীই খুজে পায়না। সব বিভাগেরই চুড়ান্ত পরীক্ষায় পরীক্ষা কেন্দ্রে নকলের ছড়াছড়ি দেখা যায়। অনেকক্ষেত্রে শিক্ষকরা আগেই প্রশ্ন ফাঁস করে দেন। এছাড়াও আল হাদীস, আল কোরআন বিভাগের সান্ধ্যকালীন কোর্সগুলোর পরীক্ষায় শিক্ষকরাই শিক্ষার্থীদের নকলে সহায়তা করেন বলে জানিয়েছে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিসের এক কর্মকর্তা। এসব বিভাগে শুধু মোটা অংকের টাকার বিবেচনায় মেধাহীনরা উচ্চতর ডিগ্রী অর্জন করছে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) : জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন ও বাণিজ্য অনুষদের সন্ধ্যাকালীন কোর্সের মাধ্যমে শিক্ষার বাণিজ্যিকরণ করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রগতিশীল ছাত্র জোটের নেতা-কর্মীরা দীর্ঘদিন ধরে এর বিরুদ্ধে আন্দোলন করে আসছেন। নেতাকর্মীদের অভিযোগ মতে, জ্ঞান বিতরণ নয় বরং বাণিজ্যের উদ্দেশ্য নিয়েই ইভেনিংয়ের কোর্সগুলো চালু করা হয়েছে। এখানে মেধার চেয়ে ‘টাকা যার শিক্ষা তার’ নীতি পালন করা হয়। এতে বিভাগের শিক্ষকরা মূল একাডেমিক কার্যক্রমের চেয়ে ইভেনিংয়ের প্রতি বেশি মনোনিবেশ করে থাকেন। জানা গেছে, বাণিজ্য অনুষদের ইভেনিং এমবিএর জন্য চারটি বিভাগে অন্তত চারশত শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হয়েছে। আর এই কোর্সে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে প্রায় দেড় লাখ টাকা ফি নেওয়া হয়। একইভাবে গত বছর থেকে ইভেনিং এলএলএম কোর্স চালু করেছে আইন অনুষদ। এছাড়াও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চট্ট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সান্ধ্যকালীন কোর্স চালু রয়েছে। তবে প্রগতিশীল ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীরা ও স্টুডেন্ট রাইটস এসোসিয়েশন-বাংলাদেশ সেচ্ছাসেবী সংগঠন সাধারন শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়ে এসব কোর্স বন্ধে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে। 
লেখক: শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। 

লেখক : আবু সাঈদ সজল, শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

সোনালীনিউজ/জেএ

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব ভাবনার প্রতিফলন। সোনালীনিউজ-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে লেখকের এই মতামতের অমিল থাকাটা স্বাভাবিক। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য সোনালীনিউজ কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না। এর দায় সম্পূর্ণই লেখকের।

Wordbridge School
Link copied!