• ঢাকা
  • বুধবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

কোন পথে বিএনপি!


সোনালী বিশেষ অক্টোবর ২৪, ২০১৭, ০৩:৫০ পিএম
কোন পথে বিএনপি!

ঢাকা : তিন মাসেরও বেশি সময় লন্ডনে অবস্থান শেষে সম্প্রতি দেশে ফিরেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এরপর আদালতে হাজিরা দিয়েছেন। মাঝে দুদিন তিনি বিশ্রাম নিয়েছেন।

আর রোববার (২২ অক্টোবর) রাতে রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে ঢাকায় সফররত ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষামা স্বরাজের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নিয়েছেন। এরপর সোমবার (২৩ অক্টোবর) রাতে তার গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠক করেছেন।

জানা গেছে, বৈঠকে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামে বিএনপির পরবর্তী করণীয় এবং দেশের বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থা নিয়ে আলাপ-আলোচনা হয়েছে। লন্ডনে অবস্থানকালে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে বিভিন্ন শলাপরামর্শের ফলোআপ স্থায়ী কমিটির সদস্যদের দিয়েছেন বিএনপি প্রধান। এদিকে, দেশে ফিরে কি দিক নির্দেশনা দেন, সেই অপেক্ষায় আছেন দলটির কেন্দ্র থেকে শুরু করে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।

দীর্ঘদিন ধরে দলীয় প্রধানের অনুপস্থিতিতে অনেকটা ঝিমিয়ে পড়া নেতাকর্মীরা এখন ক্ষণ গুণছেন কখন নতুন দিক নির্দেশনা দেবেন বিএনপি চেয়ারপারসন। কারণ খালেদা জিয়া দেশে ফিরে আসার পর সহায়ক সরকার ও আগামী নির্বাচন নিয়ে দলের রাজনৈতিক অবস্থান কি হবে, তা নিয়ে নেতাকর্মীদের মাঝে কৌত‚হল বিরাজ করছে।

এছাড়া ছাত্রদল, কৃষকদলসহ বিএনপির কয়েকটি অঙ্গ সংগঠনে নতুন নেতা নির্বাচনের বিষয় নিয়ে তৃণমূলে আলোচনা চলছে। এদিকে, মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) বৈঠকের বিষয়ে ব্রিফিংয়ের কথা ছিল দলটির। কিন্তু দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ারের মৃত্যুতে তা স্থগিত করা হয়।

অপরদিকে, অনেকদিন ধরেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে বিএনপি। বিএনপিকে নিয়ে আলোচনার যেন শেষ নেই। জিয়া অরফানেজ ও চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার সাজা হবে- এমন কথা বাজারে ভাসছে। গুজবের ডালপালাও গজাচ্ছে!

খালেদা জিয়ার সাজা হবে, কী হবে না কিংবা সাজা হলে দল কীভাবে পরিচালিত হবে, এসব নিয়ে এখন রাজনৈতিক ময়দান সরগরম। আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খালেদা জিয়া অংশ নিতে পারবেন কিনা। কিংবা খালেদা জিয়াকে বাদ দিয়ে বিএনপি ওই নির্বাচনে অংশ নেবে কিনা- এসব প্রশ্ন এখন ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে।

এসবের সঙ্গে আরো যুক্ত হয়েছে লন্ডন থেকে খালেদা জিয়ার সম্প্রতি দেশে ফেরা। আর দেশে ফেরার পরের দিন গত বৃহস্পতিবার আদালতে হাজিরাও দিয়েছেন তিনি। এছাড়া আজ রাতে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যদের নিয়ে তার গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বৈঠক করবেন বিএনপি চেয়ারপারসন। এরপর দলের অন্যান্য সিনিয়র নেতা এবং ২০ দলীয় জোটের নেতাদের সঙ্গেও বৈঠক করবেন তিনি।

সবকিছু মিলে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে একটি প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে, তা হলো খালেদা জিয়া এবার কি নতুন কোনো বিশেষ বার্তা দেবেন? জানা গেছে, লন্ডনে থাকাকালে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে দল পরিচালনা এবং পরবর্তী আন্দোলন-সংগ্রাম নিয়ে বিশেষ শলাপরামর্শ করেছেন খালেদা জিয়া। ফলে বিএনপির নেতাকর্মীরা এখন অপেক্ষায় আছেন দলীয় প্রধানের পরবর্তী পদক্ষেপের দিকে।

এদিকে, আইনগত ও রাজনৈতিক এই দুই কারণে দেশে ফিরেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন। দলের সিনিয়র নেতাদের পরামর্শে গত ১৮ অক্টোবর বিকেলে এমিরেটসের একটি ফ্লাইটে তিনি দেশে ফেরেন। আইনগত কারণ হলো- খালেদা জিয়া আদালতে হাজির হয়ে জামিন নিতে চান।

আর রাজনৈতিক কারণ হলো- প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার কথিত অসুস্থতা এবং তার ছুটিতে যাওয়ার ঘটনাসহ বিভিন্ন কারণে দেশে এক ধরনের অস্থিরতা চলছে বলে মনে করে দলটি। এ কারণে দেশজুড়ে নানা গুঞ্জনও ছড়িয়েছে। ফলে সার্বিক পরিস্থিতিতে বিএনপি মনে করে খালেদা জিয়ার এই পরিস্থিতিতে দেশে থাকা উচিত।

দলীয় একটি সূত্র জানায়, আগামী একাদশ জাতীয় নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী চ‚ড়ান্ত করছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। লন্ডনে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে পরামর্শ করে আগামী নির্বাচনে দল থেকে যাদের মনোনয়ন দেয়া হবে, সেই নামের তালিকার খসড়া তিনি চ‚ড়ান্ত করছেন।

জানা গেছে, চলতি বছরের শুরুতে গুলশান কার্যালয় এবং তারেক রহমান সারাদেশের বিএনপি ঘরানার এনজিও’র মাধ্যমে পৃথক দুটি জরিপ চালান। জরিপে প্রতিটি আসনে তিনজন করে দলীয় প্রার্থীর তালিকা চাওয়া হয়।

সেই মোতাবেক ৩০০ আসনে ৯০০ প্রার্থীর নামের তালিকা করা হয়। পৃথক দুই তালিকা থেকে যাচাই-বাছাই করে আগামী নির্বাচনের জন্য প্রার্থী তালিকা চ‚ড়ান্ত করা হবে, যা লন্ডনে বসে দলের দুই হাইকমান্ড চ‚ড়ান্ত করেছেন।

প্রায় ১০ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপির প্রার্থী হয়ে যারা বিগত নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন তাদের অনেকেই মারা গেছেন। আবার অনেকেই বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় ভুগছেন। কেউ কেউ আবার দলীয় কর্মকাণ্ডে নিষ্ক্রিয় রয়েছেন। ফলে ওই সব আসনে নতুন প্রার্থী দিতে যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে বলেও জানা গেছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির অন্যতম ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু একটি গণমাধ্যমকে বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন এবং দলীয় প্রার্থীদের মনোনয়ন দেয়ার ব্যাপারে তারা আলোচনা করতেই পারেন। এছাড়া দলের সাংগঠনিক বিষয় নিয়েও আলোচনা করবেন এটাই স্বাভাবিক। তবে কোন কোন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বা করেছেন তা নির্দিষ্ট করে বলা যাবে না।

ক‚টনৈতিক সূত্র জানায়, যে কোনো মূল্যে আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে চাপ বাড়ছে বিএনপির ওপর। গত নির্বাচন বর্জন যে ‘ভুল’ ছিল তা এখন ঐতিহাসিক সত্য। এবার প্রশাসনের ভেতরের শুভাকাঙ্খীরাও আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে পরামর্শ দিচ্ছে বিএনপিকে। অতিসম্প্রতি দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ‘বিশেষ দূত’ মারফত এবং বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানাদিতে দেখা-সাক্ষাৎকালে এ পরামর্শ দিচ্ছেন তারা।

এছাড়া দলের নীতিনির্ধারক সূত্র জানায়, গত নির্বাচনের ব্যর্থতা ও অভিজ্ঞতাকে মাথায় রেখেই এবার বাঁচামরার লড়াইয়ে নামবে বিএনপি। ইতিমধ্যে ‘নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারে’র রূপরেখার খসড়া প্রণয়ন করেছে তারা।

শিগগিরই দলের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে বৈঠক করে তা চ‚ড়ান্ত করবেন চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এরপর রূপরেখার স্বপক্ষে জনমত তৈরি করতে মাঠে নামবেন তিনি। পাশাপাশি প্রভাবশালী প্রতিবেশী ও পশ্চিমা দেশগুলোর সমর্থন আদায়েও লবিং-তদবির চালাবে বিএনপি।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!