• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
গাজীপুর সিটি নির্বাচন

কোন্দলই পরাজয়ের অন্যতম কারণ


বিশেষ প্রতিনিধি জুন ২৮, ২০১৮, ০২:২৬ পিএম
কোন্দলই পরাজয়ের অন্যতম কারণ

ঢাকা : শুধু ‘ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং’ নয় সাংগঠনিক দুর্বলতায় গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী পরাজিত হয়েছেন বলে মনে করেন গাজীপুর জেলা বিএনপির কোনো কোনো নেতা। তাদের মতে, সব কেন্দ্রে এজেন্ট দিতে না পারা, প্রার্থী নির্বাচনে ভুল সিদ্ধান্ত, সাবেক মেয়রের অসহযোগিতা, নেতাকর্মীদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা, কেন্দ্রে কেন্দ্রে নেতাকর্মীদের অনুপস্থিতিই বিএনপি প্রার্থীর পরাজয়ের নেপথ্যে।

তবে দলের সাংগঠনিক দুর্বলতার কথা মানতে নারাজ বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলন। তিনি বলেন, সংগঠন শক্তিশালী আছে। নির্বাচনের আগে শুধু এজেন্ট না, থানা-ওয়ার্ড কমিটি, কেন্দ্র কমিটি করা হয়েছিল। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সরাসরি সরকারি দলের প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নেওয়ায় বিএনপি প্রার্থীর পরাজয় হয়েছে। রাষ্ট্রযন্ত্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া কঠিন।  

তিনি বলেন, খুলনা টু গাজীপুর। তিন শ কিলোমিটারের বেশি দূরত্ব দুই সিটির। খুলনায় ভোট হয়েছিল ১৫ মে। এর ৪০ দিন পর গত ২৬ জুন ভোট হয় গাজীপুরে। তবে দুই সিটির ভোটে দারুণ মিল দেখা গেছে। উভয় ভোটেই ব্যালট ছিনতাই, জাল ভোটের উৎসব আর কেন্দ্র দখলে রেখে পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে ভোট দেওয়ার চিত্র দেখা গেছে দিনভর।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, প্রতিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ তাদের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে নতুন নতুন কৌশল নেয়। খুলনায় এক ধরনের কৌশল নিয়েছিল। সেখানকার কৌশলে কিছু ভুল ছিল। সেগুলো শুধরে নিয়ে গাজীপুর নির্বাচনে আরেক কৌশল প্রয়োগ করে। পাশাপাশি খুলনা নির্বাচনে সাংবাদিকরা কিছু তথ্য তুলে ধরতে পেরেছিলেন। কিন্তু এবার তাও পারেননি। কারণ গণমাধ্যমের কর্তাব্যক্তিদের ডেকে ধমক দেওয়া হয়েছিল যাতে তারা কোনো অনিয়মের তথ্য তুলে ধরতে না পারে। নিজ নিজ প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যেতে পারে এমন আতঙ্কে অনিয়মের তথ্য তুলে ধরতে পারেনি মিডিয়াগুলো।  

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গাজীপুর জেলা বিএনপির এক নেতা বলেন, সংগঠন শক্তিশালী না হলে ভোটে কী অবস্থা হয় তা গাজীপুর সিটি নির্বাচনে দেখা গেছে। নেতাকর্মীরা দায়িত্ব নিয়ে স্থানীয় জনগণের সহযোগিতায় ভোট কেন্দ্রে অনিয়ম ঠেকাতে পারেনি। সে সুযোগ নিয়েছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। কোনো কোনো কেন্দ্রে এজেন্টরা যায়নি। আবার কোথাও কোথাও গেলেও তারা কিছুক্ষণ অবস্থান করে চলে গেছে। ৪২৫টি কেন্দ্রের মধ্যে মাত্র দুটি কেন্দ্রে স্থানীয় বিএনপি নেতারা প্রতিরোধ করতে গেলে পুলিশ গুলি করেছে। এভাবে সবগুলো কেন্দ্রে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারলে বিএনপি যে কারণে নির্বাচনে যাচ্ছে তার সুফল পাওয়া যেত।  

তবে ওই নেতার সঙ্গে একমত নন জেলা বিএনপি সভাপতি ফজলুল হক মিলন। তিনি বলেন, ভোর ৫টা থেকে তিনি সকল এজেন্টের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলেছেন। তারা কেন্দ্রে গেছেন। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কেন্দ্রে কেন্দ্রে গিয়ে এজেন্টদের বের করে দিয়েছে মামলার ভয় দেখিয়ে।

দুটি কেন্দ্রে প্রতিরোধ হওয়ার বিষয়টি তাকে জানালে তিনি বলেন, কার সঙ্গে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে নেতাকর্মীরা। প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগ হলে তাদের বিরুদ্ধে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলা যায়। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে তো আর প্রতিরোধ গড়ে তোলা যায় না। অস্ত্রের বিরুদ্ধে অস্ত্র নিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা নামতে পারে না। রাষ্ট্রযন্ত্র অনিয়মের সঙ্গে জড়ালে তো নেতাকর্মীদের পক্ষে কিছু করা সম্ভব হয় না।

এদিকে গত মঙ্গলবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করে বলেন, সোমবার গাজীপুরে ৪২ নম্বর ওয়ার্ডে কেন্দ্র দখল করতে গেলে ধানের শীষে পক্ষে ভোটারদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ বাঁধে। এ সময় পুলিশ লাঠিচার্জ এবং গুলিবর্ষণ করে। এতে প্রায় ২০ জন নেতাকর্মী গুরুতর আহত হন এবং জাকির হোসেন সরকার গুলিবিদ্ধ হন। তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় ঢাকা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রিজভী গুলিবিদ্ধের ঘটনার কথা বললেও বিষয়টি জানেন না ফজলুল হক মিলন।

তিনি বলেন, গুলির কোনো ঘটনা তিনি জানেন না। তবে একজনকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা পিটিয়েছে। তাকে ঢাকার ক্রিসেন্ট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাকে তিনি দেখতে গিয়েছিলেন।  

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদের নেতৃত্বে বিএনপির একটি সাংবাদিক প্রতিনিধিদল গাজীপুর নির্বাচনে বিভিন্ন কেন্দ্রে ঘুরেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তাদেরই একজন বলেন, যে কেন্দ্রেই তারা গেছেন ধানের শীষের ব্যাজ পরিহিত নেতাকর্মীদের খুব একটা দেখেননি। আক্ষেপ করে তিনি বলেন, এভাবে নির্বাচনে গিয়ে কোনো লাভ হবে না। জেলায় জেলায় দলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করতে হবে। সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী হলে দুটি কেন্দ্রে নয় সবগুলো কেন্দ্রেই শক্তভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারতেন নেতাকর্মীরা।     

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নির্বাচন মনিটরিং করার জন্য একাধিক কমিটি গঠন করা হয়েছিল। তাদের কাজের কোনো সমন্বয় ছিল না। প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার সকালে ১০টি কেন্দ্রে অনিয়মের অভিযোগ আনেন। কেন্দ্রীয়ভাবে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দুপুরে বলেন, দুই শতাধিক কেন্দ্র দখল করে নিয়েছে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সমর্থকরা। এর আগে বিএনপির যে প্রতিনিধিদল নির্বাচন কমিশনে গিয়েছিল তারা ২১টি কেন্দ্রে অনিয়মের অভিযোগ করে। ভোটগ্রহণ শেষে প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার বলেন, ৪০০ কেন্দ্রই দখল করে নিয়েছিল আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সমর্থকরা।   

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!