• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০
নারায়ণগঞ্জের পাঁচ উপজেলা বিএনপিতে অস্থিরতা

কোন্দলে গতিহীন বিএনপি


নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি জুলাই ২৪, ২০১৭, ১২:৩৪ পিএম
কোন্দলে গতিহীন বিএনপি

নারায়ণগঞ্জ : কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জ বিএনপিতে চলছে অস্থিরতা। এতে করে বিএনপির নেতাকর্মীরা অর্ন্তদ্বন্দ্বে পুড়ছেন। ফলে জেলা ও মহানগর বিএনপি গতিহীন হয়ে পড়েছে। কেন্দ্রীয় নেতাদের সামনে লাঞ্ছিতের ঘটনাও ঘটেছে। এসবই ঘটছে কর্মী-সমর্থকদের পছন্দের প্রার্থীকে যথাযথ পদ না দেয়ায়। যার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপির কর্মী সম্মেলনে। দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সামনে কর্মীরা দফায় দফায় হট্টগোল ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটিয়েছে। পদবঞ্চিত সিনিয়র নেতাদের যোগসাজশে এমন হয়েছে বলে দাবি করেছেন দলটির একাধিক সূত্র।

জানা গেছে, এবার নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপির কমিটিতে স্থান পাওয়া নেতাদের মেনে নিতে পারছেন না পদবঞ্চিত সিনিয়র নেতারা। নতুন কমিটির নেতাদের অযোগ্য প্রমাণ করতে সিনিয়র নেতাদের যোগসাজশে তাদের অনুসারীরা জেলা ও মহানগরীর কর্মী সম্মেলন পন্ড করতে দফায় দফায় সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন, যা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে দলটি। ৭মে জেলা কর্মী সম্মেলন ও ৯ মে মহানগরের কর্মী সম্মেলন পদ পাওয়া ২১ জনের মধ্যে ৬জন উপস্থিত ছিলেন। অন্যদের আমন্ত্রণও করা হয়নি। ফলে সম্মেলনে হট্টগোলের সৃষ্টির জন্য দলের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ওইসব ঘটনায় তৃণমূলের সমালোচনায় সবচেয়ে বেশি উঠে এসেছে সিনিয়র নেতাদের নাম। স্থানীয় পর্যায়ের পদ হারিয়ে তাদের কর্মী-সমর্থকেরা বেসামাল হয়ে পড়েন বলে তৃণমূলের কর্মীরা জানিয়েছেন।

এসব ঘটনার মূলে রয়েছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি ও রূপগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামান, জেলা বিএনপির সহসভাপতি শাহ আলম, সাধারণ সম্পাদক মামুন মাহমুদ, যুগ্ন সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাস, সাংঠনিক সম্পাদক জাহিদ হাসান রোজেল, মহানগর বিএনপির সভাপতি ও সাবেক এমপি এডভোকেট আবুল কালাম, বিএনপির কেন্দ্রিয় নির্বাহী সদস্য নজরুল ইসলাম আজাদ প্রমুখ। তৃণমূলের কর্মীরা বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি এডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার, সাবেক এমপি গিয়াসউদ্দিন আহমেদ, সাবেক প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক রেজাউল করিম, বিএনপির নির্বাহী সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান ভুঁইয়ার ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন।

নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির প্রতিনিধি সম্মেলনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র অধ্যাপক এম.এ মান্নানের উপস্থিতিতে দলের নেতাকর্মীরা দফায় দফায় হট্টগোলের ঘটনা ঘটায়। মঞ্চ দখলের চেষ্টা ও মঞ্চের ব্যানারও ছিঁড়ে ফেলার চেষ্টা করা হয়। এছাড়াও দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের বিদায় দেয়ার পর জেলা বিএনপির সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামান ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মামুন মাহমুদের ওপর হামলার চেষ্টা করেন কমিটির বিরোধীরা। এতে চরম ক্ষুব্ধ দলের কেন্দ্রীয় নেতা থেকে শুরু করে তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকরা।

চলতি বছরের ১৩ ফেব্র“য়ারি সোমবার নারায়ণগঞ্জ জেলা ও ও মহানগর বিএনপির আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। ওই কমিটিতে মহানগরের সভাপতি করা হয় সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট আবুল কালাম এবং সাধারণ সম্পাদক করা হয় এটিএম কামালকে। আর জেলা বিএনপির সভাপতি করা হয় রূপগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামান ও সাধারণ সম্পাদক করা হয় সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মামুন মাহামুদকে। তাদের নেতৃত্বে জেলা ও নগরের পৃথকভাবে প্রথম প্রতিনিধি ও কর্মী সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

নারায়ণগঞ্জ বিএনপির দুই দিনের সম্মেলনে সংঘর্ষের ঘটনার জন্য কাজী মনির, মামুন মাহমুদ, আবুল কালাম, এটিএম কামালকে দায়ী করে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তৃণমূলের একটি ইউনিট কমিটির সভাপতি বলেন, সম্মেলনে তাদের ভূমিকা অনেকটাই স্পষ্ট ছিল। ত্যাগী ও তৃণমূলের নেতাদের আমন্ত্রণ না জানানোর কারণেই পরিকল্পিতভাবে সম্মেলনে ওইসব ঘটনা ঘটানো হয়েছে।

কিন্তু এসব ঘটনা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার বলেন, দলের ভাল মনে করেই কাজী মনিরকে জেলা কমিটিতে সভাপতি ও মামুন মাহমুদকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন করা না করা এটা কমিটির ব্যাপার। জেলা কমিটির সম্মেলনে আমাকেসহ বিএনপির কেন্দ্রিয় নেতা মোস্তাফিজুর রহমান ভুঁইয়া দিপু, সাবেক প্রতিমন্ত্রী রেজাউল করিম, নারায়ণগঞ্জ জেলা ওলামাদলের সভাপতি মুন্সি সামছুর রহমান খান বেনুকে আমন্ত্রণ করা হয়নি। এটাও জেলা কমিটির হয়তো সিদ্ধান্ত ছিলো। তবে সম্মেলণে হামলার বিষয়টি সম্পূর্ণ অস্বীকার করেন। এ বিষয়ে তিনি আর কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে নারায়ণগঞ্জে রাজনীতির মাঠে বিএনপি সক্রিয় নেই বলে তিনি দাবি করেন।

বিগত দিনেও বিএনপির আন্দোলন সংগ্রামে কাজী মনিরুজ্জামান, অধ্যাপক মামুন মাহমুদ, সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট আবুল কালাম তেমন কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি। সামনেও বিএনপির আন্দোলনে ফটোসেশন ছাড়া এসব নেতাদের রাজপথে পাবে না বলে তৃণমূলের কর্মীরা মনে করছেন। তবে রূপগঞ্জ বিএনপি চাঙ্গা করতে মাঠে রয়েছেন কেন্দ্রিয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান ভুঁইয়া দিপু, আড়াইহাজারে রয়েছেন নির্বাহী কমিটির ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক বদরুজ্জামান খান খসরু ও নজরুল ইসলাম আজাদ, সোনারগাঁয়ে নির্বাহী সদস্য ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান, ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জ উপজেলায় আলহাজ গিয়াসউদ্দিন আহমেদ, বন্দরে রয়েছেন অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার ও আবুল কালাম।

এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামান জানান, দলীয় কোন্দলের কারণে বিগত দিনে বিএনপির আন্দোলন চাঙ্গা হয়নি। তবে এখন দলে কোনো কোন্দল নেই। অথচ নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির প্রতিনিধি সম্মেলন প্রধান অতিথির বক্তব্যে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র এম.এ মান্নান বলেছেন নারায়ণগঞ্জ বিএনপির কোন্দল রয়েছে।

ঈদের পর রূপগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামান দলীয় কয়েকজন নেতাকর্মীদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। মনিরপন্থি তৃণমূলের কর্মীরাও তার প্রতি বেশ ক্ষুদ্ধ। এদিকে মোস্তাফিজুর রহমান ভুঁইয়া দিপু তার নিজস্ব অর্থায়নে উপজেলা বিএনপির ব্যানারে ঈদপুর্নমিলনী ও ১৫ হাজার নেতাকর্মীকে আমন্ত্রণ করে মেজবানী অনুষ্ঠানে করে ব্যাপক আলোচিত হয়েছেন। ঈদের পর থেকে বিএনপিতে এখন মোস্তাফিজুর রহমান ভুঁইয়া দিপুই টক অব দ্যা রূপগঞ্জ।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!