• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

কোমরব্যথা ও করণীয়


স্বাস্থ্য ডেস্ক জুন ২৭, ২০১৬, ০২:২৫ পিএম
কোমরব্যথা ও করণীয়

কোমরব্যথা এই পৃথিবীর প্রায় সব মানুষেরই একটি সাধারণ সমস্যা। দুনিয়াতে এমন মানুষ খোঁজে পাওয়া সত্যিই কঠিন যার জীবনে অন্ততঃ একবার কোমরব্যথার অভিজ্ঞতা নাই। মেরুদন্ডের মাংশপেশী, লিগামেন্ট, স্নায়ু, হাড়, জোড়া,তরুনাস্থি বা ডিস্ক এর জটিল যোগাযোগ বিন্যাসের বিভিন্ন প্রকার সমস্যার জন্য কোমর ব্যথা হয়ে থাকে।

প্রধান কারণ সমূহ : 
•    মেরুদন্ডের অবস্থানগত ত্রুটির জন্য। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন কাজের প্রয়োজনে চেয়ারে বসার সময় কোমর সোজা রাখা উচিত। কোমর বাঁকা করে সামনের দিকে ঝুঁকে কাজ করলে মেরুদন্ডের মাংসপেশী, স্নায়ু ও হাঁড়ের উপর বেশি চাপ পড়ে; ফলে কোমর ব্যথা হয়। (পজিশনাল বা পসচারেল ব্যাক পেইন)।
•    মেরুদন্ডের মাংশপেশী বা লিগামেন্ট মচকানো বা আংশিক ছিড়ে যাওয়া (স্প্রেইন/স্ট্রেইন)।
•    কোমরের দুই হাড়ের মধ্যবর্তী তরুণাস্থি বা ডিস্ক সরে যাওয়া (পিএলআইডি)।
•    কোমর থেকে যে স্নায়ুগুলো পায়ের দিকে নামে সেগুলোতে চাপ পড়া (সায়াটিকা)।
•    কোমরের হাড় ভেঙ্গে যাওয়া (ফ্রেকচার) অথবা হাড়সরে যাওয়া (স্পনডাইলোলিসথেসিস)।
•    মেরুদন্ডের হাড়, জোড়া বা ডিস্ক এর ক্ষয় বা বৃদ্ধি (স্পনডাইলোসিস)।
•    মেরুদন্ডে বিভিন্ন প্রকার ইনফেকশন (সেপটিক, যক্ষা)।
•    মেরুদন্ডের বিভিন্ন প্রকার প্রদাহ জনিত রোগ (রিউমেটয়েড আর্থ্রাইটিস, এনকাইলোজিং স্পনডাইলাইটিস)।
•    মেরুদন্ডের তরুনাস্থি বা হাড় এর বৃদ্ধির ফলে স্নায়ুর গতিপথ সংকুচিত হওয়া (স্পাইনাল স্টেনোসিস)।
•    মেরুদন্ডের হাঁড় ক্ষয় প্রাপ্ত হওয়া। এতে মেরুদন্ডের ক্যালসিয়ামের পরিমাণ কমে যায়, হাঁড় ছিদ্রযুক্ত হয় এবং হাঁড়ের গঠন নষ্ট হয়ে যায়। হাঁড়ের বোনমাস ডেনসিটি এর অনুপাতের ভারসাম্যতা নষ্ট হয়; ফলে হাঁড় ধীরে ধীরে ভঙ্গুর হয়। বয়স্ক পুরুষ বা নারী এবং মেনোপোজ পরবর্তী মহিলাদের ক্ষেত্রে এই ক্ষয় প্রাপ্ত হাঁড় কোমর ব্যথার অন্যতম প্রধান কারণ।(অস্টিওপোরোসিস)।
•    মেরুদন্ডের বিভিন্ন স্নায়ুবিক সমস্যা, রক্তবাহী নালীর সমস্যা, টিউমার, ক্যান্সার, ইনফেকশন।
•    ভারী জিনিস তোলা অথবা বহন করা। 
•    শরীরের ওজন বৃদ্ধি অথবা অপুষ্টিজনিত কারণ।
•    মহিলাদের ক্ষেত্রে স্ত্রীরোগজনিত কিছু সমস্যা (যেমন: পেলভিকইনফ্লেমেটরিডিজিস, মূত্রনালী বা মূত্রথলীর প্রদাহ, জরায়ুর টিউমার ইত্যাদি)।

বাচ্চাদের ক্ষেত্রে :
•    জন্মগত ভাবে মেরুদন্ড বাঁকা হওয়া(কনজেনিটাল স্কুলিওসিস)।
•    জন্মগত ভাবে মেরুদন্ডের হাড় সরে যাওয়া।
•    মেরুদন্ডের বিভিন্ন প্রকার ইনফেকশন (সেপটিক, যক্ষা)।
বৃদ্ধ বয়সে :
•    মেরুদন্ডের হাড় ক্ষয় (অস্টিওপোরোসিস)।
•    মেরুদন্ডের হাড়, জোড়া বা ডিস্ক এর ক্ষয় বা বৃদ্ধি (স্পনডাইলোসিস)।
•    মেরুদন্ডের বিভিন্ন প্রকার ক্যান্সার (সেকেন্ডারী, মাল্টিপোলমাইলোমা)।


প্রকারভেদ :
•    কোমরব্যথা কোমরেই সীমাবদ্ধ থাকা (এক্সিয়ালব্যাক পেইন, যেমন: মেরুদন্ডের মাংস পেশী মচকানো)।
•    কোমর ব্যথা বা টক, উরু, পা হয়ে পায়ের পাতা পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। পায়ের পাতা অবশ অবশ ভাব অথবা ঝিঝি হতে পারে। ইহাকে সায়াটিকা বলা হয় (রেডিকুলারব্যাক পেইন যেমন: মেরুদন্ডের ডিস্ক প্রলাপস্)।
•    কোমর ব্যথা কুঁচকি, পেলভিস, বা টক হয়ে উরুর উপরি ভাগ পর্যন্ত বিস্তৃত হয় (রেফারর্ড ব্যাক পেইন, যেমন: মেরুদন্ডের ডিস্ক ক্ষয়প্রাপ্ত হওয়া)।


পরীক্ষা নিরীক্ষা :
-    রক্তের কিছু রুটিন পরীক্ষা।
-    প্রসাব পরীক্ষা
-    ব্লাডসুগার, ইউরিক এসিড, আর.এ. ফ্যাক্টর।

মেরুদন্ডের :
-    এক্স-রে
-    সিটি স্ক্যান
-    এম. আর. আই.
-    মাইলোগ্রাম


চিকিৎসা
-    প্রতিরোধ মূলক :

-    প্রথমতঃ কোমরে ব্যথা না হওয়ার জন্য সঠিক জীবন যাত্রার কিছু নিয়ম মেনে চলা-
-    নিয়মিত ব্যায়াম করা।
-    শরীরের ওজন কমানো। 
-    ধূমপান ও অ্যালকোহল বর্জন করা। 
-    মেরুদন্ড সোজা রাখার ব্যাপারে সচেতন হওয়া।
-    সামনের দিকে ঝুঁকে কাজ না করা।
-    শক্ত বিছানায় শোয়া
-    হাঁটু ভাজ করে বসে কোমর সোজা রাখা।
-    হাইকমোড ব্যবহার করা।

সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা
-    পরিমিত বিশ্রাম নেওয়া।
-    চিকিৎসকের পরামর্শ মত NSAID, Muscle relaxant, Vitamin, Pregabalin জাতীয় ঔষধ সেবন করা।
-    পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ‘ডি’ সমৃদ্ধ খাবার যেমন: হাঁড়সহ ছোটমাছ, দুধ, ডিম খাওয়া।-    পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ‘ডি’ সমৃদ্ধ খাবার যেমন: হাঁড়সহ ছোটমাছ, দুধ, ডিম খাওয়া।
-    সঠিক মাত্রায় ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ‘ডি’ জাতীয় ঔষধ যেমন: LabcalD সেবন করা যেতে পারে।
-    বয়স্ক পুরুষ বা নারী এবং মেনোপোজ পরবর্তী মহিলাদের ক্ষেত্রে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ‘ডি’ এর পাশা পাশি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী হাঁড় ক্ষয় প্রতিরোধকারী ঔষধ  যেমন: বিসফসফোনেট, এলেনড্রোনিক এসিড, ইবানড্রোনিক এসিড, জোলেনড্রোনিক এসিড জাতীয় ঔষধ গ্রহণ করা যেতে পারে।
-    প্রয়োজন অনুসারে কোমরের বেল্ট (লাম্বোসেকরালকরসেট) ব্যবহার করা।
-    ফিজিওথেরাপী
-    কিছু কিছু ক্ষেত্রে অপারেশনের প্রয়োজন হতে পারে (যেমন: কোমরের ডিস্ক বেশি পরিমাণে বের হয়ে স্নায়ুতে চাপ দেওয়া, মেরদন্ডের হাঁড় ভেঙ্গে পা অবশ হয়ে যাওয়া, মেরুদন্ডের যক্ষ্মা ইত্যাদি)

কোমর ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী ও তীব্র হলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করা উচিৎ। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী কোমরব্যথার মূল কারণ নির্ণয় করে চিকিৎসা করা উচিত।

ডা. এ.সি. সাহা
এমবিবিএস, এম.এস. (অর্থো)
কনসালটেন্ট
অর্থোপেডিক সার্জারি বিভাগ
E-mail: [email protected]

সোনালীনিউজ/ঢাকা/ ওএফ

Wordbridge School
Link copied!