• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কোরবানির মাংস সংরক্ষণে যা করবেন


লাইফস্টাইল ডেস্ক  সেপ্টেম্বর ৩, ২০১৬, ০৪:৩৬ পিএম
কোরবানির মাংস সংরক্ষণে যা করবেন

কোরবানির মাংস আমরা অনেকেই সারা বছর সংরক্ষণ করে খাই। আমাদের দেশে সাধারণত গরু, মহিষ, ছাগল, ভড়া এ সব পশু কোরবানি হয়ে থাকে। এসব পশুর মাংসে প্রচুর প্রোটিন থাকে। কোরবানি দেয়ার আগে পশুর কোনো রোগ আছে কিনা তা যাচাই করে নেয়া উচিত। 

পশু জবাইয়ের আগে কোনোভাবেই তাকে পরিশ্রম বা উত্তেজিত করা যাবে না। এর ফলে মাংসের গ্লাইকোজেন বা সঞ্চিত শক্তি হারিয়ে যায়। গ্লাইকোজেন ল্যাকটিক এসিডে পরিণত হতে না পারলে মাংস দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়।

কোরবানির মাংস সংরক্ষণের কিছু প্রয়োজনীয় টিপস্:
১. মাংস পচনশীল খাদ্য তাই এর সংরক্ষণের জন্য ফ্রিজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে সবার আগে আপনার ডিপ ফ্রিজ বা নরমাল ফ্রিজের ডিপ ভালোভাবে পরিস্কার করে মাংস রাখার জায়গা করে রাখতে হবে।

২. সাধারণত জবাইয়ের অন্তত ৩-৪ ঘণ্টা পর্যন্ত মাংসে  রক্ত থাকে। সে অবস্থায় কোনো ভাবেই মাংস ফ্রিজে রাখা যাবে না।

৩. কাঁচা অবস্থায় মাংস ফ্রিজে রাখতে চাইলে ১৮ থেকে ২২ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপে বরফজাত করে রাখতে হবে। এতে করে গরুর মাংস ১২ মাস, খাসির মাংস ৬ মাস, মাথা, কলিজা ৬ মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়।

৪. মাংস ঘরে আনার ৮-১০ ঘণ্টা পর লবণ দিয়ে ভালোভাবে ফুটিয়ে (১০০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা) নিলে মাংস ভালো থাকবে। এর ফলে মাংসের ভেতরের অন্যান্য জীবাণু মরে যায়। এর ফলে গরমকালে ১২ ঘণ্টা এবং শীতকালে ২৪ ঘণ্টা মাংস ভালো থাকে। মাংস ফোটানোর পর অবশ্যই ভালোভাবে ঠাণ্ডা করে রাখতে হবে।

৫. মাংসের টুকরা কাটাচামচ বা ছুরি দিয়ে কেঁচে লবণ ও সাথে লেবুর রসের মিশ্রণে ডুবিয়ে নিন। যাতে ভালোভাবে মিশ্রণ মাংসের ভেতর ঢোকে। এভাবে রাখলে মাংস অনেকদিন ভালো থাকবে।

৬. ফ্রিজে পোটলা করে মাংস না রেখে যদি বিছিয়ে প্যাকেট করা হয় তবে বেশিদিন ভালো থাকে।

৭. মাংসটা যখন ডিপ ফিজে সংরক্ষণ করা হবে তখন প্যাকেটে সেদিনের তারিখ লিখে রাখতে হবে। এতে বোঝা যায় মাংস পুরনো হয়ে নষ্ট হয়ে গেল কিনা।

৮. চর্বিযুক্ত মাংস স্বাস্থ্যেও জন্য ক্ষতিকর তাই মাংস কাটার  সময় চর্বি কেটে নেয়াই ভালো।

৯. মাংস বড় বড় টুকরো ও কিছু মাংস কুচি করে কিমা হিসেবেও সংরক্ষণ করা যায়।

সবার আর্থ সামাজিক অবস্থা এক হয় না। গ্রামে শহরের মত সবার ঘরে ঘরে ফ্রিজ নেই। কাজেই নিচের উপায় দুটি অবলম্বন করলে তারা অনায়াসে অনেক দিন মাংস সংরক্ষণ করতে পারবেন।

জ্বাল দিয়ে মাংস সংরক্ষণ
যদি জ্বাল দিয়ে মাংস সংরক্ষণ করতে হয় তবে সেক্ষেত্রে মাংসে চর্বির পরিমাণ একটু বেশি থাকাই ভালো। কারণ এতে মাংস দীর্ঘদিন ভালো থাকে। প্রথমে মাংস ভালোভাবে ধুয়ে বড় একটা হাড়িতে নিন। এবার হলুদ ও লবণ মিশিয়ে পরিমাণমতো পানি দিয়ে মাংস জ্বাল দিন। এ পদ্ধতিতে দিনে কমপক্ষে ২ বার নিয়ম কওে মাংস জ্বাল দিতে হবে।

রোদে শুকিয়ে মাংস সংরক্ষণ (ফ্রিজ ও জ্বাল ছাড়াও রোদে শুকিয়ে মাংস সংরক্ষণ)

১. রোদে শুকিয়ে মাংস সংরক্ষণ করতে হলে চর্বি ছাড়া মাংস নিতে হবে। প্রথমে মাংস পরিস্কার করে ধুয়ে ছোট টুকরা করে নিন। এরপর একটি লম্বা তারে একটার পর একটা মাংস গেঁথে নিন।

২. কাপড় শুকানোর মতো করে ছাদে বা বারান্দায় গাঁথা মাংস টানিয়ে দিন। এছাড়া চুলার উপরে তার বেঁধেও আগুনের তাপে মাংস শুকানো যায়। এই উপায়ে মাংস সংরক্ষণ করলে মাংসের সমস্ত পানি টেনে মাংস একদম শুকিয়ে যায়, ফলে দীর্ঘদিন তা ভালো থাকে।

৩. ছাদে মাংস শুকাতে হলে পাতলা কাপড় বা নেট দিয়ে মাংস ঢেকে দিন। এতে করে ধুলোবালি পড়ে মাংস নোংরা হবে না।

৪. পরপর ৫-৬ দিন মাংস রোদে দিন। মাংস শুকিয়ে একদম শক্ত হলে মুখ বন্ধ করা পাত্রে বা টিনের কৌটায় মাংস ভরে ভালো করে মুখ বন্ধ করে রাখুন। মাঝে মাঝে কৌটা ধরে মাংস রোদে দিন। তাহলে পোকার আক্রমণ হবে না।

৫. রোদে শুকানো মাংস রান্না করার কমপক্ষে ১ ঘন্টা আগে হালকা গরম পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। এতে মাংস নরম হবে।

গরুর মাংসে ২৩ থেকে ২৭ শতাংশ প্রোটিন থাকে, যা অত্যন্ত উচ্চ মানের। এছাড়া এই মাংসে  লৌহ, ফবফরাস ও ভিটামিন ডি থাকে। তাই মাংসের পুষ্টিগুণ যাতে অতি সহজেই নষ্ট না হয় সেজন্য সঠিক নিয়মে মাংস সংরক্ষণ করা উচিত।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেডআরসি

Wordbridge School
Link copied!