• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ক্যাপিটাল ড্রেজিং বন্ধ চার বছর, চর জেগেছে কর্ণফুলীতে


চট্টগ্রাম ব্যুরো মার্চ ১৫, ২০১৮, ১২:৩৫ পিএম
ক্যাপিটাল ড্রেজিং বন্ধ চার বছর, চর জেগেছে কর্ণফুলীতে

চট্টগ্রাম : দেশের অর্থনীতির প্রাণ হিসেবে পরিচিত কর্ণফুলী নদী। এ নদীর তীরেই অবস্থিত ‘সমৃদ্ধির স্বর্ণদ্বার’ খ্যাত চট্টগ্রাম বন্দর। দীর্ঘদিন ধরে ড্রেজিং বন্ধ থাকায় পলিতে ভরাট হয়ে নদীতে জেগে উঠছে বিশাল চর। এর ফলে আদি ব্যবসা-বাণিজ্যের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত ঐতিহ্যবাহী নদীটি ক্রমশ ছোট হয়ে আসছে।

দীর্ঘদিন ড্রেজিং না হওয়ার কথা স্বীকার করে চট্টগ্রাম বন্দর কর্মকর্তারা বলছেন, ক্যাপিটাল ড্রেজিং প্রকল্প নিয়ে সৃষ্ট জটিলতার কারণে গত চার বছর সেখানে বড় ধরনের কোনো খনন কাজে হাত দেওয়া সম্ভব হয়নি। ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের বিকল্প হিসেবে ভিন্ন নামে নতুন ২৫৮ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। চলতি মাসের মধ্যেই প্রকল্পের কাজ শুরুর সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।

লুসাই পাহাড় থেকে নেমে আসা বাংলাদেশ অংশ থেকে বঙ্গোপসাগরের মোহনা পর্যন্ত ১৮৫ কিমি দৈর্ঘ্য কর্ণফুলী নদী। এ নদীকে ঘিরে রয়েছে অনেক ইতিহাস। রচিত হয়েছে আনন্দ-বেদনার অনেক গান। এ নদীর তীরেই গড়ে উঠেছে দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর ও বন্দরনগরী। কর্ণফুলী নদীকে কেন্দ্র করে স্থাপিত হয়েছে প্রায় এক হাজার শিল্প কারখানা। দেশের আমদানি-রফতানির ৯০ শতাংশ পরিচালিত হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। আর চট্টগ্রাম বন্দরের পণ্যবাহী জাহাজ চলাচল নির্ভর করে এই কর্ণফুলী নদীর নাব্যের ওপর।

বন্দর সূত্র জানায়, কর্ণফুলী নদীর নাব্য রক্ষায় আট বছর আগে ২৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে ক্যাপিটাল ড্রেজিং প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। ২০১১ সালের ৫ এপ্রিল ‘মালয়েশিয়ান মেরিটাইম অ্যান্ড ড্রেজিং করপোরেশন’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে এ প্রকল্প বাস্তবায়নের কার্যাদেশ দেয় বন্দর কর্তৃপক্ষ। প্রকল্পের আওতায় ৩৬ লাখ ঘনমিটার ড্রেজিং, ৪শ’ মিটার জেটি নির্মাণ, ২ হাজার ৬১৫ মিটার বেড়িবাঁধ এবং বেড়িবাঁধের পাশে ড্রেজিংকৃত মাটি ভরাট করে ১০ মিটার চওড়া ওয়াকওয়ে নির্মাণের কথা ছিল। শুরুতে ২০১৩ সালের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা থাকলেও পরে প্রকল্পের মেয়াদ ২০১৪ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়। কিন্তু ২০১৩ সালের আগস্টে অসমাপ্ত অবস্থায় কাজ বন্ধ করে দেয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

সূত্র জানায়, এরপর থেকে নানা আইনি জটিলতায় পড়ে চার বছর ধরে বন্ধ রয়েছে কর্ণফুলীর ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের কাজ। এর ফলে পলি জমে ভরাট হয়ে গেছে নদীর তলদেশ। সদরঘাট থেকে বাকলিয়া পর্যন্ত নদীর বিভিন্ন স্থানে জেগে উঠেছে চর। জোয়ারের সময় নদী দিয়ে লাইটার জাহাজ চলাচলে সমস্যা না হলেও ভাটার সময় নাব্য না থাকায় লাইটার জাহাজ চলাচলেও বিঘ্ন হয়।

চট্টগ্রাম বন্দর উপদেষ্টা কমিটির একাধিক বৈঠকে কর্ণফুলীর ক্যাপিটাল ড্রেজিং বন্ধ থাকার বিষয়টি আলোচনায় আসে। নাব্য সঙ্কটে পড়ে নদীটিতে জাহাজ চলাচল বিঘ্নের ঘটনায় বিভিন্ন সময় উদ্বেগ প্রকাশ করেন বন্দর ব্যবহারকারীরা। এ অবস্থায় বুয়েটের সমীক্ষা দল দিয়ে সমীক্ষা শেষে ‘সদরঘাট টু বাকলিয়ার চর ড্রেজিং’ নামে নতুন ড্রেজিং প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয় বন্দর কর্তৃপক্ষ।

জানা গেছে, ২৫৮ কোটি টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্পের আওতায় সদরঘাট থেকে বাকলিয়ার চর পর্যন্ত নদী খনন করে ৪২ লাখ ঘনমিটার মাটি তোলার কথা রয়েছে। এ খননের পর সেখানে পানির গভীরতা চার মিটার পর্যন্ত বাড়বে। এতে নদীতে লাইটারেজ জাহাজ চলাচলে বিদ্যমান বাধা দূর হবে। ড্রেজিংয়ে উঠে আসা মাটি দিয়ে বাকলিয়া হামিদচর এলাকয় তিনশ’ একর জমি ভরাট করা হবে। এ জমির ওপর ‘বঙ্গবন্ধু মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা রয়েছে। ডাইরেক্ট প্রকিউরমেন্ট মেথড (ডিপিএম) অনুসরণ করে বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে এ কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বন্দর সচিব ওমর ফারুক বলেন, কর্ণফুলীর ক্যাপিটাল ড্রেজিং নিয়ে মালয়েশিয়ান মেরিটাইম অ্যান্ড ড্রেজিং করপোরেশনের সঙ্গে নানা আইনি জটিলতার কারণে দীর্ঘদিন খনন করা যায়নি। তাই কর্ণফুলী নাব্য রক্ষায় বন্দর কর্তৃপক্ষ নতুন প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে। ৪ জানুয়ারি সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়েছে। এরপর বন্দর কর্তৃপক্ষ নৌবাহিনীর বরাবর নোটিফিকেশন অব অ্যাওয়ার্ড (কার্যাদেশ) দিয়েছে। আশা করছি চলতি মাসের মধ্যেই নৌবাহিনীর সঙ্গে চূড়ান্ত চুক্তি সম্পন্ন হবে। চুক্তির পর পরই খনন কাজ শুরু করবে তারা।

সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, খনন কাজ শুরু করার জন্য নৌবাহিনী চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেডের কাছ থেকে প্রযুক্তি সহায়তা নেবে। খনন কাজ শুরু করার জন্য ইতোমধ্যে তারা সদরঘাট এলাকায় পাইপ বসানোসহ প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!