• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ক্রাইম শোর উপস্থাপকই যখন ভয়ঙ্কর খুনি!


আন্তর্জাতিক ডেস্ক ডিসেম্বর ১৭, ২০১৭, ০৩:৪২ পিএম
ক্রাইম শোর উপস্থাপকই যখন ভয়ঙ্কর খুনি!

‌‘ইন্ডিয়াজ মোস্ট ওয়ান্টেড’ ক্রাইম সিরিয়ালের উপস্থাপক সুহাইব ইলিয়াসি

ঢাকা: ঘটনাটি সিনেমার গল্পকেও হার মানায়! দিনের পর দিন ভয়াবহ সব অপরাধের সত্য ঘটনা টিভিপর্দায় তুলে আনছিলেন তিনি। একটি বারের জন্যও কি কেউ ভেবেছিল, টিভিতে ক্রাইম শোর উপস্থাপকই  ভয়ঙ্কর খুনে জড়িত! যদিও এখন তিনি পুলিশের খাঁচায় বন্দি!

যে উপস্থাপক টিভিপর্দায় দাগী আর মোস্ট ওয়ান্টেড অপরাধীদের মুখোশ উন্মোচন করে দিতেন, সেই তিনিই এখন  ভয়ঙ্কর এক খুনি!

‌‘ইন্ডিয়াজ মোস্ট ওয়ান্টেড’ নামে একসময় খুব জনপ্রিয় ক্রাইম সিরিয়ালের উপস্থাপক ছিলেন সুহাইব ইলিয়াসি। তাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিল স্ত্রীকে হত্যার অভিযোগে। এরপর আদালতে উপস্থাপন করা হয়। প্রথমদিকে প্রমাণ হচ্ছিল যে তার স্ত্রী আত্মহত্যা করেছেন। 

ক্রাইম শোর উপস্থাপক সুহাইব ইলিয়াসি

চলে মামলার শুনানি। শেষদিকে ঘটনা মোড় খায় ১৮০ ডিগ্রি। আগামী ২০ ডিসেম্বর ওই মামলায় সাজা শোনাবেন আদালত। পাঠকদের জন্য চাঞ্চল্যকর এ ঘটনার বর্ণনা তুলে ধরা হলো-

রোববার (১৭ ডিসেম্বর) ভারতীয় পত্রিকাগুলো জানায়, ঘটনার শুরু ২০০০ সালের ১০ জানুয়ারি। পূর্ব দিল্লির বাসা থেকে সুহাইবের স্ত্রী আঞ্জু ইলিয়াসিকে মারাত্মক জখমসহ হাসপাতালে নেওয়া হয়। 

পুলিশকে সুহাইব জানান, পারিবারিক ঝগড়া-বিবাদের সূত্রে তার স্ত্রী আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। এ সময় আঞ্জু চাকু দিয়ে নিজের শরীরে একাধিক আঘাত হানে বলে জানান সুহাইব। অপরদিকে, চিকিৎসাধীন অবস্থায় আঞ্জু মারা যান।  

দুইবার করানো হয় ময়নাতদন্ত, বিশেষ ফরেনসিক তদন্ত আর আঞ্জুর বাবা-মার বয়ানে সুহাইবের দাবি সঠিক বলে প্রতীয়মান হচ্ছিল। এ সূত্রে পুলিশও আত্মহত্যা তত্ত্বের ভিত্তিতে মামলা শেষ করার দিকে এগোচ্ছিল।  

কিন্তু সত্যের বুদবুদ যেন গহীন জলের ভেতর থেকে ওপরে উঠে এলো যখন গত ফেব্রুয়ারিতে কানাডা থেকে দেশে ফিরল আঞ্জুর বড় বোন রশ্মি। পেশায় শিক্ষক রশ্মি জানান, মৃত্যুর আগে দিয়ে তার সঙ্গে কথা হয় ছোট বোনের। তখন সুহাইবের অপকর্মের বিষয়ে সবিস্তারে বলেছিলেন আঞ্জু। রশ্মির বয়ানে পুরো মামলা উল্টে যায়।

তিনি তার বয়ানের সমর্থনে পুলিশের কাছে আঞ্জুর লেখা একটি ডায়েরিও দেন। তাতে অনেক ঘটনার বর্ণনা আছে। এবার আত্মহত্যা তত্ত্ব সন্দেহের আতশী কাচের নিচে পড়ে যায়। পুলিশ ও আঞ্জুর বাবা-মা পুরনো ঘটনার জাবর কেটে বুঝতে পারেন- আসলে আঞ্জুকে হত্যা করা হয়েছিল।

স্ত্রী আঞ্জু ইলিয়াসির সঙ্গে সুহাইব ইলিয়াসি

নয়া তদন্তের সূত্রে পুলিশ চলতি বছরের ২৮ মার্চ সুহাইব ইলিয়াসিকে গ্রেপ্তার করে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়, প্রতারণা ও যৌতুকের দাবিতে হত্যা এবং অপরাধের আলামত মেটানোর অপরাধে।  

পূর্ব দিল্লি পুলিশের তৎকালীন এসিপি (অপরেশন্স) রাজিব রঞ্জন জানান, ট্রায়াল কোর্ট সুহাইব ইলিয়াসির ওপর থেকে হত্যার অভিযোগ তুলে নিয়েছিল। তবে আমরা তার বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আরজি জানাই এবং হত্যার অভিযোগ ফের যোগ করা হয়।  

মামলার তদন্তে যুক্ত অপর এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, শুরু থেকেই আমার মনে হচ্ছিল এই মামলাটি যেমন দেখাচ্ছে আসলে তেমন না। আমি হত্যা ও আত্মহত্যার অনেক মামলা তদন্ত করেছি। এ জন্য আমার জন্য এটা বিশ্বাস করা কঠিন হচ্ছিল যে (ছুরি দিয়ে) আত্মহত্যার ঘটনায় শরীরে একের অধিক আঘাত হতে পারে!

বাদীর আইনজীবী সত্যেন্দ্র শর্মা জানান, আঞ্জুর হত্যাকে আত্মহত্যা প্রমাণে সুহাইব লাগাতার চেষ্টা করেছেন। এ জন্য নিজের বয়ানে একের পর এক বদল এনেছেন আর এতেই একপর্যায়ে সে ফেঁসে যায়।  

জানা গেছে, নিহতের মা রুকমা সিং এর আগে যৌতুকের জন্য হত্যার অভিযোগে মামলাও করেছিলেন। রুকমা জানান, টিভি সূত্রে খ্যাতি পাওয়া মেয়ের জামাই ইলিয়াসি দেখতে যেমন বাস্তবে আসলে তা না। নানা বেআইনি কাজে সে জড়িত ছিল। সে তার মেয়েকে যৌতুকের জন্য নির্যাতন করত। এ জন্য আঞ্জু কানাডা চলে যেতে চেয়েছিল যাতে বাধা দিচ্ছিল জামাই।  

এদিকে, নয়া মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করে শুরু থেকে হত্যা মামলা তদন্তের পুলিশি উদ্যোগ ঠেকাতে ইলিয়াসি হাইকোর্টে কড়া নেড়েছিলেন। কিন্তু তার আরজি খারিজ হয়ে যায়। এরপর সুপ্রিম কোর্টে যান। সেখানেও তাকে হতাশ হতে হয়। সর্বশেষ ট্রায়াল কোর্ট প্রাপ্ত সাক্ষ্য-প্রমাণাদির সূত্রে সুহাইল ইলিয়াসিকে দোষী সাব্যস্ত করেছে। আগামী ২০ ডিসেম্বর তার অপরাধের সাজা শোনানো হবে। 

সোনালীনিউজ/জেএ/জেডআরসি

Wordbridge School
Link copied!