• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ক্রাইস্টচার্চে মুশফিক বিহীন বাংলাদেশ


ক্রীড়া প্রতিবেদক জানুয়ারি ১৯, ২০১৭, ০৫:৩৯ পিএম
ক্রাইস্টচার্চে মুশফিক বিহীন বাংলাদেশ

ঢাকা: ২০০৫ সালে ইংল্যান্ড সফরে প্রথমবারের মত জাতীয় দলে সুযোগ পান মুশফিকুর রহীম। ইংল্যান্ডের মাটিতে এটাই ছিলো বাংলাদেশের প্রথম সফর। প্রথমবার জাতীয় দলের জার্সী গায়ে চাপিয়ে নিজের জাত চেনান এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান। ২০০৯ সালে জিম্বাবুয়ে সফরে বাংলাদেশের সহ-অধিনায়ক নির্বাচিত হন তিনি। আর ২০১১ সালে পুর্ণাঙ্গ অধিনায়কের দায়িত্ব পান। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এশিয়া কাপে নিজেদের সেরা সাফল্য রানার্সআপ হয়। নিজের যোগ্যতা ও প্রতিভার প্রমাণ দিয়ে একজন নির্ভরযোগ্য মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। দীর্ঘ সাড়ে ৯ বছর পর সেই মুশফিককে ছাড়াই টেস্ট খেলতে নামছে টাইগাররা।

ক্রাইস্টচার্চে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ওয়ানডে ম্যাচে হ্যামস্ট্রিং চোটের কারণে মাঠ ছাড়েন মুশফিক। এরপর অপর দুটি ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টি সিরিজে আর খেলতে পারেননি তিনি। ওই দুই সিরিজে বাংলাদেশের হোয়াইটওয়াশের পেছনে মুশফিকের চোটকেও অন্যতম কারণ মনে করা হয়। ওয়েলিংটন টেস্টের মাধ্যমে আবার মাঠে ফিরে আসেন তিনি। ওই টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে তিনি লড়াকু একটি ইনিংসও খেলেছেন। কিন্তু ওই সময়েই তিনি বাঁ হাতের বুড়ো আঙুল আর ডান হাতের তর্জনিতে আঘাত পান। ওই অবস্থায় মুশফিক টেস্টের চতুর্থ দিনে খেলতেও নেমেছিলেন। কিন্তু আঙুল বাঁচাতে গিয়ে ওইবার আঘাত পান মাথায়। এরপর যে অ্যাম্বুলেন্সে করে তিনি মাঠ ছাড়েন, নিউজিল্যান্ডের মাঠে তার আর ফেরা হয়নি।

মুশফিকের চোটের সর্বশেষ পরিস্থিতি হচ্ছে ব্যথা কমেনি তার চোট আক্রান্ত বাঁহাতের বুড়ো আঙুলের। ওয়েলিংটন টেস্টে তার ঘাড়ের আঘাতটা গত দুদিনে আর কোনও সমস্যাও করেনি। এটি নিয়ে তাই কোনও দুশ্চিন্তাও নেই। কিন্তু ডাক্তারি পরামর্শে এখনই সুযোগ ছিল না তার মাঠে নামার। বিশ্রাম দরকার কমপক্ষে দু’সপ্তাহ। কারণ এখন খেলায় নামলে ভবিষ্যতে যে কোনও সময় ফিরতেও পারে তার ঘাড়ের সমস্যা। এরপরও ডাক্তারি পরামর্শ উপেক্ষা করেই দেশের স্বার্থে ক্রাইস্টচার্চ টেস্টে মুশফিক খেলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু  আঙুলের ব্যথা নিয়ে তার খেলাও ছিল ঝুঁকিপূর্ণ। তাছাড়া সামনে ভারতের সঙ্গে টেস্ট। শ্রীলংকা সফরসহ আরও অনেক ম্যাচ। সে কারণে চোট আক্রান্ত আঙুলে আবার আঘাত লাগলে দল থেকে ছিটকে যেতে পারেন আরও অনেকদিনের জন্য । সে কারণে এই মুহূর্তে তাকে দিয়ে খেলানোর ঝুঁকি নিতে রাজি হয়নি টিম ম্যানেজমেন্ট। তাই দেশের জন্য খেলার ইচ্ছা থাকা স্বত্ত্বেও ক্রাইস্টচার্চ টেস্ট তার খেলা হচ্ছে না। শেষ পর্যন্ত শনিবারই হয়তো দেশে ফিরে যাচ্ছেন মুশি।

তাই শুক্রবার (২০ জানুয়ারি) বাংলাদেশ সময় ভোর চারটায় ক্রাইস্টচার্চ হ্যাগলি ওভালে ৪৯ টেস্ট পর মুশফিকুর রহীমকে ছাড়াই খেলতে নামছে বাংলাদেশ। মুশফিক বিহীন বাংলাদেশ স্বগতিক নিউজিল্যান্ডকে কি ভাবে মোকাবেলা করবে সেটাই দেখার বিষয়।

মাত্র ১৬ বছর ২৬৭ দিনে লর্ডস গ্রাউন্ডে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট ম্যাচ খেলতে নামেন। অপরিচিত কন্ডিশনে আর বাউন্সী ট্র‍্যাকে অনভিজ্ঞতা সব মিলিয়ে শুধু মুশফিকের জন্য না , পুরো বাংলাদেশ দলের জন্যই সফরটি ছিলো একটি চ্যালেঞ্জ। তার উপর খালেদ মাসুদ পাইলটের জায়গায় উইকেটরক্ষকের দায়িত্ব পাওয়া ১৬ বছর বয়সী মুশি কতটুকু কি করতে পারবেন ইংল্যান্ডে, মানিয়ে নিতে পারবেন কিনা সেটা নিয়ে সংশয় তো ছিলোই। কিন্তু সকলের মনের সব সংশয় দূর করে ২০০৫ সালের ২৬ মে লর্ডসের সবুজ ঘাসে অভিষিক্ত হয়ে রেকর্ড গড়লেন ৫ ফুট ৩ ইঞ্চি উচ্চতার মুশফিকুর রহীম।

খালেদ মাসুদ পাইলট এর পরে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের উইকেট কিপার ব্যাটসম্যান নিসন্দেহে সফল মুশফিকুর রহীম। বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের বর্তমান অধিনায়ক। সাকিব আল হাসানের স্থলভিষিক্ত মুশফিকুর রহিম বাংলাদেশ ক্রিকেটের অন্যতম সফল অধিনায়কও! ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে ২০১১ সালে একমাত্র টি-টোয়েন্টি ম্যাচে শেষ বলে ৬ দিয়ে ম্যাচ জয় ছিনিয়ে এনেছিলেন এই মুশফিক। আবার এশিয়া কাপে ভারতের বিপক্ষে ২৫ বলে ৪৬ রানের ইনিংস। ২০১২ সালে আবার ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে সাহসী ব্যাটিং দিয়ে ৩-২ এ সিরিজ জয় ও সিরিজ সেরা নির্বাচন।

আগষ্ট ২০১১ সালে জিম্বাবুয়ে সফরে টেস্ট ও একদিনের সিরিজ হারের সাথে সাথে ড্রেসিং রুমে অশোভন আচরন ও কোচের সাথে অযাচিত কথাবার্তার কারণে অধিনায়ক সাকিবকে ও তার সহঅধিনায়ক তামিমকে বহিষ্কার করা হয়। সে সময়ে অস্টেলিয়ার কোচ স্টুয়ার্ট ল এর সাথে আলোচনা করে মুশফিকুর রহিমকে অধিনায়ক ও তার ডেপুটি হিসেবে মাহমুদুল্লাহকে দায়িত্ব দেয়া হয়। ২০ সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে তাকে অধিনায়ক ঘোষনা করা হয়। অধিনায়ক হিসেবে নিজের প্রথম ম্যাচেই ঘরের মাঠে ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে ২৬ বলে ৪১ রানের ইনিংসে টি-টোয়েন্টিতে জয় পায় তবে টেস্ট সিরিজ ২-০ তে ও ওয়ানডে সিরিজ ২-১ এ হেরে যায়।

এর পরের গল্পটা পরিশ্রম আর এগিয়ে যাওয়ার গল্প। কীভাবে কঠোর পরিশ্রম একটা মানুষের জীবন বদলে দিতে পারে তার জ্বলন্ত উদাহরণ যেন মুশফিকুর রহীম। করলেন ভারতের বিপক্ষে নিজের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরী। দলকে নিয়ে গেলেন এশিয়া কাপের ফাইনালে, জিতলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ, নিউজিল্যান্ড সিরিজ। শ্রীলংকার মাটিতে করলেন ডাবল টেস্ট সেঞ্চুরি।

২০০৭ সালের জুলাই থেকে এই ক্রাইস্টচার্চ টেস্টের আগ পর্যন্ত বদলে গেছে অনেক কিছু, কিন্তু বাংলাদেশের টেস্ট দলে মুশফিকের নাম ছিল অবিচল। এই সময়ে খেলেছেন বাংলাদেশের ৪৯ টেস্টের সবকটি। তার ফেরার সেই টেস্টের একাদশের একমাত্র তিনি ছাড়া আর কেউ নেই এখনকার দলে। আততায়ী চোট থামাল তাকেও।

এই ৪৯ টেস্টের ৪৬টিতেই মুশফিকের হাতে ছিল কিপিং গ্লাভস। অনেক আলোচনা-সমালোচনা হলেও কিপিং ছাড়েননি তিনি। সবসময়ই বলে এসেছেন, ব্যাটিংয়ের মত কিপিংও তার আবেগ-ভালোবাসার জায়গা। ২০১৫ সালে আঙুলে চোট পেলে তিনটি টেস্টে কিপিং করেছিলেন লিটন দাস। মুশফিক খেলেছিলেন শুধু ব্যাটসম্যান হিসেবে। পরে ফিট হয়ে আবার নিজের করে নেন কিপিং গ্লাভস। নেতৃত্ব দিয়েছেন টানা ২৭ টেস্টে।

টানা এই ৪৯ টেস্ট অনায়াসেই বাংলাদেশের রেকর্ড। ওয়ানডেতেও রেকর্ডটি মুশফিকেরই। এই সফরে ছেদ পড়েছে সেই ধারায়ও। সিরিজের প্রথম ওয়ানডের পর ছিটকে গেলেন হ্যামস্ট্রিংয়ের টানে। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে মুশফিককে ছাড়া খেলতে নেমেছিল বাংলাদেশ ২০১০ সাল থেকে টানা ৯২ ওয়ানডের পর!

বাংলাদেশ দলে এতটাই জুড়ে আছেন মুশফিক। ক্রাইস্টচার্চে নিশ্চিতভাবেই তার অভাব অনুভব করবে দল। আরেকটা ব্যাপারও নিশ্চিত, ক্রিকেট নিয়ে মুশফিকের যা আবেগ, খেলতে না পেরে কষ্টটা সবচেয়ে বেশি হচ্ছে তারই।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেডআই

Wordbridge School
Link copied!