• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ক্লিনিকে অভিযান, মালিকদের ধর্মঘট


রাজশাহী প্রতিনিধি জানুয়ারি ২৪, ২০১৭, ০৮:৫১ পিএম
ক্লিনিকে অভিযান, মালিকদের ধর্মঘট

রাজশাহী: রাজশাহীর বেসরকারি ক্লিনিক, হাসপাতাল ও রোগ নির্ণয় কেন্দ্রগুলোতে ধর্মঘট শুরু হয়েছে। নগরীর লক্ষ্মিপুর এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান শুরুর পর মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) দুপুর ২টার পর থেকে তালা ঝোলানো হয় ক্লিনিক, হাসপাতাল ও রোগ নির্ণয় কেন্দ্রে। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে ওই এলাকার ওষুধের দোকানগুলো। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন হাজারো রোগী। 

মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত চালানো ওই অভিযানে আট লাখ ২৫ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করে ভ্রাম্যমাণ আদালত।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দুপুরে র‌্যাবের একটি ভ্রাম্যমাণ আদালত নগরীর লক্ষ্মিপুর এলাকায় আমানা হাসপাতালে অভিযান চালায়। এ সময় সেখান পাওয়া যায় সরকারি ও সার্জিক্যাল সরঞ্জাম এবং ভারতীয় ওষুধ।এছাড়া ধরা পড়ে নানা অব্যবস্থাপনাও। পরে ওই হাসপাতালটিকে সাড়ে ৩ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।

একই অভিযোগে তিন লাখ ৭৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে পাশের র‌্যায়াল হাসপাতালকে। এছাড়া ফাকা রিপোর্ট ফাইলে চিকিৎসকের স্বাক্ষর নিয়ে রাখায় জেনারেল ডায়গনেস্টিক সেন্টারকে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। পরে গ্রীণ ডায়াগনেস্টিক সেন্টারে অভিযান চালালেও সেখানে তেমন অনিয়ম পায়নি ভ্রাম্যমাণ আদালত।

এরআগে অভিযান শুরুর পর থেকে ক্ষুব্ধ হয়ে ধর্মঘট শুরু করেন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক মালিকরা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিশেষ ওই অভিযানে নেতৃত্ব দেন র‌্যাব সদর দপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম। তিনি জানান, বেসরকারি ক্লিনিকগুলোতে অভিযান চালিয়ে তারা ভারতীয় ওষুধ, সরকারি ওষুধ ও সার্জিক্যাল সরঞ্জাম পেয়েছেন। এছাড় পাওয়া গেছে নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা। সব মিলিয়ে ওই অভিযানে তিনটি ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে আট লাখ ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এর আগে সোমবার (২৩ জানুয়ারি) বিএসটিআইয়ের সঙ্গে রাজশাহী জুড়ে আলাদা অভিযান চালানো হয়।

ওই অভিযানে এক বেকারী কারখানাসহ ছয়টি ইটভাটাকে ১২ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। জনস্বার্থে এ অভিযান চলবে বলে জানান সারওয়ার আলম।

এদিকে, ধমর্ঘট বিষয়ে রাজশাহী বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার মালিক সমিতির সহসভাপতি ডা. ফয়সাল কবীর চৌধুরী বলেন, তাৎক্ষনিকভাবে বৈঠক করে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটে যান তারা। পরে দুপুর ২টা থেকে রাজশাহীর সব বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ রয়েছে। এনিয়ে রাতে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকের কথা রয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে বড় চিকিৎসা কেন্দ্র রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল। এখানে ২৪ ঘন্টায় ভর্তি হচ্ছে রোগী। প্রতিদিন হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ রোগী। কিন্তু সার্বক্ষনিক পরীক্ষা-নীরিক্ষার ব্যবস্থা নেই, নেই পর্যাপ্ত শয্যাও। আর এ সুযোগে হাসপাতাল এলাকায় গড়ে উঠেছে কয়েকশ ক্লিনিক, হাসপাতাল ও রোগ নির্ণয় কেন্দ্র। দীর্ঘদিন ধরেই চিকিৎসার নামে নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা চলে আসছে এগুলোতে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে এ অভিযানে নামে র‌্যাব।

দুপুরে প্রসব ব্যাথা নিয়ে রামেক হাসপাতালের ভর্তি হয়েছে জেলার দুর্গাপুর উপজেলার তেবিলা এলাকার গৃহবধু চাইনা বেগম (২৪)। প্রথমেই তার আল্ট্রাসনোগ্রাম করানোর পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসক। কিন্তু দুপুর ২টার পর হাসপাতালে আল্ট্রাসন বন্ধ। পরে নগরীর লক্ষ্মিপুর এলাকায় তাকে নিয়ে গিয়েছিলেন স্বজনরা। সেখানকার ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টার গুলো বন্ধ থাকায় তাকে নেয়া হয় নগরীর নওদাপাড়া এলাকার ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

একই অবস্থা চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলের ওয়াকিল আহমেদের। তার স্বজনরা জানান, স্ট্রোক করায় দুপুরে তাকে রামেক হাসপাতালে নেয়া হয়। বর্তমানে তিনি হাসপাতালের ৩২ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি। চিকিৎসকের পরামর্শে তার সিটি স্ক্যান করাতে নওদাপাড়ায় নিয়ে এসেছেন স্বজনরা।

রামেক হাসপাতালে আরো কয়েকজন রোগির স্বজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হাসপাতালে ভর্তি বিপুল সংখ্যক রোগীর বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্ট আটকে আছে ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক সেন্টার গুলোয়। ফলে বন্ধ রয়েছে চিকিৎসা। এতে চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছে রোগীরা। সংকট মোকাবেলায় রামেক হাসপাতালের সক্ষমতা বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমএইচএম

Wordbridge School
Link copied!