• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

ক্ষতি গাঁজা নাকি অসুস্থতা-পরবর্তী ক্ষুধামান্দ্যের দাওয়াই!


স্বাস্থ্য ডেস্ক জুলাই ১৯, ২০১৮, ০১:৩৭ পিএম
ক্ষতি গাঁজা নাকি অসুস্থতা-পরবর্তী ক্ষুধামান্দ্যের দাওয়াই!

ঢাকা : বিশ্বজুড়ে গাঁজা(মারিজুয়ানা) নিয়ে গবেষণার শেষ নেই। কেউ বলছে গাঁজা মানুষের ক্ষতি করছে আবার কেউ বলছে উপকারি। চলুন তাহলে লোকের কথা বাদ দিয়ে গাঁজার সত্যিকারের রহস্যটা না হয় এবার উদ্ধার করা যাক।

বিশ্বের প্রায় সব দেশেই মাদক হিসেবে পরিচিত ও নিষিদ্ধ উদ্ভিদটির নাম মারিজুয়ানা বা গাঁজা। এর সাইকো-অ্যাক্টিভিটি ও শারীরবৃত্তীয় প্রভাব এবং সহজলভ্যতার কারণেই মাদক হিসেবে জনপ্রিয়তার শীর্ষে এটি। কিন্তু গাঁজা কেবল মাদক হিসেবেই ব্যবহৃত হয় না, ধর্মীয় বা আধ্যাত্মিক আচার-অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবেও গাঁজার ব্যবহার হয়ে আসছে হাজার বছর ধরে। আধুনিককালে নানা রোগের চিকিৎসার ওষুধ হিসেবে ব্যবহূত হয় উদ্ভিদটি। ইতোমধ্যে বিশ্বব্যাপী পরিচালিত বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, ক্যানসার প্রতিরোধে গাঁজার ক্ষমতাও আছে। এ ছাড়া মৃগী বা এ ধরনের কিছু স্নায়ুরোগসহ হূদরোগ নিয়ন্ত্রণে রাখার সক্ষমতাও আছে গাঁজার।

সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, বড় ধরনের অসুস্থতা-পরবর্তী ক্ষুধামান্দ্য দূর করতে গাঁজা বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। ক্ষুধা অনুভবের সঙ্গে গাঁজার একটা সম্পর্কের কথা আগে জানা থাকলেও এবারই প্রথম নির্দিষ্টভাবে জানা গেল, গাঁজা সেবনে কেন ক্ষুধা লাগে।

যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনে গাঁজার ভূমিকা নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে দেখেন, গুরুতর অসুস্থতার পরে যে ক্ষুধামান্দ্যের সৃষ্টি হয়, তা সারানোর সক্ষমতা আছে গাঁজার। গাঁজা ক্ষুধার হরমোনকে প্রভাবিত করে কীভাবে, তাও জানা গেছে ওই গবেষণায়। এ ছাড়া প্রভাবিত হয়ে মস্তিষ্কের যে অংশটি ক্ষুধার অনুভূতি জাগায়, সেটিও নির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করতে পেরেছেন গবেষকরা।

গবেষণা নিবন্ধটি চলতি সপ্তাহেই খাদ্য ও খাদ্যাভ্যাস-বিষয়ক গবেষকদের আন্তর্জাতিক সভা সোসাইটি ফর দ্য স্ট্যাডি অব ইনভেস্টিগেটিভ বিহেভিয়ারে প্রথম উন্মোচন করা হয়েছে।

নতুন এ গবেষণাটি প্রসঙ্গে ওয়াশিংটন রাজ্যের ইন্টিগ্রেটেড ফিজিওলজি ও নিউরোসায়েন্স বিভাগের গবেষক জন ডেভিস বলেন, আমরা আগে থেকেই জানতাম, ক্ষুধা অনুভবের সঙ্গে গাঁজার বিশেষ সম্পর্ক আছে। কিন্তু এখন আমরা জানতে পারলাম, গাঁজার প্রভাবে শরীরের অভ্যন্তরে ঘটে যাওয়া কোনো ঘটনা ক্ষুধা অনুভূতিকে উসকে দেয় বা দমিয়ে দেয়।

তিনি বলেন, চিকিৎসাবিজ্ঞানে গাঁজা মূলত চিকিৎসক-প্রস্তাবিত ভেষজ থেরাপি হিসেবে ব্যবহূত হয়। সারা বিশ্বেই চিত্তবিনোদন ও ওষুধ হিসেবে ব্যবহারের বৈধতা দেওয়ার যে প্রবণতা শুরু হয়েছে, তার কারণেই ভেষজ থেরাপি হিসেবে এর ব্যবহারের বিষয়ে নতুন নতুন আরো গবেষণা শুরু হয়েছে।

জন ডেভিস ডেইলি সায়েন্স সাময়িকীকে জানান, আমরা জানি গাঁজার প্রধান সাইকো-অ্যাক্টিভ উপাদান হলো টেট্রাহাইড্রোক্যানাবিনল (টিএইচসি)। তবে আরেকটি সাইকো-অ্যাক্টিভ উপাদান হলো ক্যানাবিনোয়ডস, যা মূলত ডেল্টা-৯ টিএইচসি। নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, এ ডেল্টা-৯ টিএইচসির সাইকো-অ্যাক্টিভ সামর্থ্যের কারণে ক্ষুধার অনুভূতির পরিবর্তন হয়। দীর্ঘদিন রোগে ভুগে ক্ষুধামান্দ্য হলে ধীরে ধীরে সেটির উপশম করতে পারে গাঁজার ধোঁয়া।

নতুন এ গবেষণাটি পরিচালিত হয়েছে একটি বিশেষ জায়গায় আবদ্ধ কয়েকটি ইঁদুরের ওপর। এজন্য তারা এমন একটি যন্ত্র যার মধ্যে নিয়ন্ত্রিতভাবে গাঁজার ধোঁয়া চালিত করেন এবং এরপরে ইঁদুরের খাওয়া নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেন। তারা দেখেন, গাঁজার ধোঁয়া দেওয়ার পরে কিছুক্ষণ আগে আহার করা ইঁদুরগুলো আবার খাদ্য গ্রহণ করছে।

জন ডেভিস বলেন, আমরা দেখেছি গাঁজা সেবনের পরে ইঁদুরগুলো আগের তুলনায় অনেক বেশিবার খাদ্যগ্রহণ করছে। তবে গাঁজার এ ধরনের প্রভাব পড়তে কিছুটা সময় লাগছে।

ডেভিসের মতে, এ সময়ের তফাতই নতুন তথ্যটি উদঘাটনের সূত্র দিয়েছে। সাধারণত আমাদের পাকস্থলী যখন খালি থাকে তখন ঘ্রেলিন নামের এক ধরনের হরমোন মস্তিষ্কের কাছে খাদ্য গ্রহণের বার্তা পাঠায়।

তিনি জানান, গবেষণায় তারা দেখেছেন গাঁজা সেবনের পরে ইঁদুরগুলোর ঘ্রেলিন হরমোনের নিঃসরণ বেড়ে যায়। ইঁদুরের খাবার গ্রহণের প্রবণতাও বেড়ে যাচ্ছে। কিন্তু গাঁজার প্রভাব কাটাতে এক ধরনের অ্যান্টিডোট ব্যবহারের পরে ঘ্রেলিন নিঃসরণ কমে যাচ্ছে।

গবেষকরা এ সময় ঘ্রেলিন হরমোনের নিঃসরণের মাত্রা বদলের সঙ্গে মস্তিষ্ক কীভাবে সাড়া দেয়, তাও দেখেন।

সাধারণত থাইপোথ্যালামাসের একটি অংশ ঘ্রেলিন হরমোনের বার্তা অনুধাবন করে কিন্তু গাঁজা সেবন মস্তিষ্ক কোষের সেই ক্রিয়া বদলে দেয়। বদলে যায় পাকস্থলী থেকে পাঠানো বার্তার ধরনও।

গবেষকদের আশা- নতুন এ আবিষ্কার অসুস্থতা-পরবর্তী ক্ষুধামান্দ্যের কার্যকর ওষুধ তৈরিতে বিশেষ সহায়তা করবে।

তবে লন্ডনের কিংস কলেজের গবেষক ড. মার্টা ডি ফোর্টি সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, গাঁজার উপকারী দিক থাকলেও অধিক ব্যবহারের কারণে মানসিক ক্ষমতা হ্রাস, মস্তিষ্ক বিকৃতি ও অন্যান্য মানসিক রোগ হতে পারে। কিশোর বয়সে প্রতিদিন গাঁজা সেবন করলে সিজোফ্রেনিয়া হতে পারে। আবার যেসব মা গর্ভাবস্থায় সেবন করেন তাদের সন্তানদের আচরণগত সমস্যাও দেখা দিতে পারে।

এ ছাড়া স্বল্পমেয়াদি স্মৃতি হ্রাস, মুখগহ্বরে শুষ্কতা, চোখ লাল হওয়াসহ উদ্বেগ অনুভূত হতে পারে বলেও সতর্ক করে দিয়েছেন ড. মার্টা।


সোনালীনিউজ/আরজে

Wordbridge School
Link copied!