• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
হ্যাকিং করে নির্বাচনে ‘হস্তক্ষেপের’ অভিযোগ

ক্ষুব্ধ ওবামার প্রতিশোধ


আন্তর্জাতিক ডেস্ক ডিসেম্বর ৩১, ২০১৬, ০১:২৯ পিএম
ক্ষুব্ধ ওবামার প্রতিশোধ

হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ‘হস্তক্ষেপের’ অভিযোগ নিয়ে তিক্ততার জের ধরে রাশিয়ার ৩৫ কূটনীতিককে বহিষ্কারের নির্দেশ দিয়েছেন বারাক ওবামা। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর রাশিয়ার ওয়াশিংটন দূতাবাস ও সান ফ্রান্সিসকো কনস্যুলেটে কর্মরত ওই কূটনীতিকদের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগের নির্দেশ দিয়েছে বলে রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে।

সেইসঙ্গে রাশিয়ার দুটি গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকাণ্ডেও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। মেরিল্যান্ড ও নিউইয়র্কে রুশ গোয়েন্দা সংস্থার কাজে ব্যবহৃত দুটি কম্পাউন্ড বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ওবামা প্রশাসনের শেষ দিনগুলোতে নেয়া নতুন এ সিদ্ধান্ত এমন এক সময়ে এলো যখন সিরিয়া ও ইউক্রেইন নিয়ে দুই দেশের সম্পর্ক স্নায়ুযুদ্ধের সময়ের পর সবচেয়ে তলানিতে ঠেকেছে বলে বিশ্লেষকদের ধারণা।

বিবিসি জানিয়েছে, রাশিয়া ইতিমধ্যে পাল্টা ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের একজন মুখপাত্র বলেছেন, ক্রেমলিন যে ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে, তাতে যুক্তরাষ্ট্র বড় ধরনের অস্বস্তিতে পড়বে। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর অভিযোগ, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় হওয়া হ্যাকিংয়ের ঘটনায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সরাসরি জড়িত। হাওয়াইয়ে অবকাশে থাকা ওবামা গত বৃহস্পতিবার (২৯ ডিসেম্বর) এক বিবৃতিতে বলেন, ‘প্রতিষ্ঠিত আন্তর্জাতিক নিয়ম লঙ্ঘন করে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের ওপর আঘাতের চেষ্টার বিরুদ্ধে এটি একটি জরুরি ও সঠিক পদক্ষেপ।’ সব আমেরিকানেরই রাশিয়া সম্পর্কে সতর্ক থাকা উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

তবে নতুন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, যিনি বরাবরই রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের প্রশংসা করে আসছেন এবং তার প্রশাসনে রাশিয়া-ঘনিষ্ঠদের জায়গা দিয়েছেন, ২০ জানুয়ারি দায়িত্ব নেয়ার পর তিনি এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করবেন কি না সে প্রশ্ন থাকছেই। সিআইএ ও অন্য যেসব গোয়েন্দা সংস্থা সদ্যসমাপ্ত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাশিয়ার হ্যাকিংয়ের অভিযোগ তুলেছে, ট্রাম্প বরাবরই তাদের সমালোচনা করে আসছেন। অবশ্য গত বৃহস্পতিবার তার সুর নরম ছিল। তিনি বলেছেন, যত দ্রুত সম্ভব তিনি গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করতে চান।

‘আমাদের দেশকে বড় ও ভালো কিছুর দিকে এগিয়ে নিতে এটাই সময়। আমাদের দেশ ও এর অসাধারণ জনগণের স্বার্থে এই পরিস্থিতির হালনাগাদ তথ্য সম্পর্কে জানতে আমি আগামী সপ্তাহে গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের সঙ্গে বসব,’ বলেন তিনি। রয়টার্স বলছে, ট্রাম্প রাশিয়ার বিরুদ্ধে নেয়া ওবামা প্রশাসনের সিদ্ধান্ত পাল্টাতে চাইলে তাকে কংগ্রেসের উভয়কক্ষে তীব্র বিরোধিতার মুখে পড়তে হবে। তার দলের অনেক প্রভাবশালী সদস্যই ওবামার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভের স্পিকার ও প্রভাবশালী রিপাবলিকান পল রায়ান বলেছেন, রাশিয়া ধারাবাহিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থকে উপেক্ষা করে আসছিল, এ কারণে নিষেধাজ্ঞা বকেয়াই ছিল।

রিপাবলিকান সিনেটর জন ম্যাককেইন ও লিন্ডসে গ্রাহাম বলেছেন, তারা ‘রাশিয়ার ওপর আরো কঠোর নিষেধাজ্ঞা’ আরোপের ব্যবস্থা নিতে কংগ্রেসে চেষ্টা চালাবেন। এসব কারণে ওবামার সিদ্ধান্ত বদলাতে গেলে দায়িত্ব নেয়ার শুরুতেই ট্রাম্প ডেমোক্রেট-রিপাবলিকান উভয় দলের চাপের মুখে পড়বেন বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা।

‘প্রেসিডেন্টের অভিষেকের পর এটাই উত্তেজনার মুখ্য উৎস হতে পারে,’ বলেন ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি নেটওয়ার্কের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এরিক লরবার। এরিক রাশিয়ার ব্যাংকগুলোর ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপের পক্ষে। রয়টার্স আরো জানায়, রাশিয়ার দুটি গোয়েন্দা সংস্থা জিআরইউ ও এফএসবি, চার জিআরইউ কর্মকর্তা এবং তিনটি আলাদা কোম্পানি ‘যারা জিআরইউ’র সাইবার অপারেশন চালানোর সময় বস্তুগত সহযোগিতা’ করেছিল তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ওবামা প্রশাসন।

যুক্তরাষ্ট্রের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, মেরিল্যান্ড ও নিউইয়র্কের কম্পাউন্ড দুটিতে শুক্রবার (৩০ ডিসেম্বর) বিকেলের পর আর কোনো রুশ কর্মকর্তা ঢুকতে পারবেন না। রাশিয়ার গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন ও ট্রাফিক পুলিশ মস্কোতে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিকদের হয়রানি করে আসছে বলে যুক্তরাষ্ট্র অনেকদিন ধরেই অভিযোগ করে আসছিল। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী সার্গেই ল্যাভরভকে বারবার এ বিষয়টি জানালেও কোনো সমাধান হয়নি বলে জানায় রয়টার্স।

গত বৃহস্পতিবারের সিদ্ধান্তে যে ৩৫ কূটনীতিককে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়তে বলা হয়েছে, তার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত সার্গেই কিসলিয়াক নেই। তবে ওবামা বলেছেন, এটা কেবল শুরু। ‘রাশিয়ার আক্রমণাত্মক আচরণের প্রেক্ষিতে এটিই আমাদের পদক্ষেপ নয়, ইচ্ছা অনুযায়ী আমরা বিভিন্ন সময় ও স্থানে নানা ধরনের পদক্ষেপ নেব, কিছু কিছু এমনকি প্রকাশ্যেও আসবে না,’ হুমকি বিদায়ী প্রেসিডেন্টের। শেষ হয়ে যাওয়া নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপ এবং সাইবার হামলার প্রতিবেদন কংগ্রেসকে দেয়া হবে বলেও জানান তিনি।

রাশিয়ার সাইবার অ্যাটাকের বিরুদ্ধে এটাই যুক্তরাষ্ট্রের নেয়া সবচেয়ে বড় সিদ্ধান্ত বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন  প্রশাসনের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা। অবশ্য ট্রাম্প দায়িত্ব নেয়ার পর এ সিদ্ধান্তগুলো বদলে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তিনি। নির্বাচনী প্রচারে গত অক্টোবরে ট্রাম্প বলেছিলেন, প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেয়ার প্রথম দিনই তিনি ‘ওবামার নেয়া অসাংবিধানিক নির্বাহী নির্দেশ, চুক্তি ও আদেশ বাতিল’ ঘোষণা করবেন। তবে বিদায়ী প্রেসিডেন্টের কোনো কোনো নির্বাহী আদেশ ‘অসাংবিধানিক’ তা বলেননি তিনি।

রাশিয়া জানিয়েছে, তারা ওবামা প্রশাসনের সিদ্ধান্তের পাল্টা পদক্ষেপ নেবে। তবে এর জন্য ‘তাড়াহুড়ো’ নেই বলে মন্তব্য করেছেন ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ। তিনি বলেন, ‘এই সিদ্ধান্ত ওবামা নিয়েছেন, আর তিন সপ্তাহের মধ্যে ট্রাম্প দেশটির প্রধান হবেন; সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে এগুলোকেও অবশ্যই বিবেচনায় নিতে হবে।’ 

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমটিআই

Wordbridge School

আন্তর্জাতিক বিভাগের আরো খবর

Link copied!