• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কয়লা আমদানিতে ভারতনির্ভরতা কমছে


নিজস্ব প্রতিবেদক জানুয়ারি ২৯, ২০১৬, ০৭:৩১ পিএম
কয়লা আমদানিতে ভারতনির্ভরতা কমছে

বিশেষ প্রতিনিধি

দেশের কয়লা খাতে বিগত এক বছরের ব্যবধানে ভারতনির্ভরশীলতা বহুলাংশে হ্রাস পেয়েছে। পক্ষান্তরে ইন্দোনেশিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে কয়লা আমদানি বেড়েছে। ওই দুটি দেশ থেকে আমদানি করা কয়লার দাম তুলনামূলক কম হওয়ার কারণেই এদেশের কয়লা খাত সংশ্লিষ্টরা ভারতের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। চলতি ২০১৫-১৬ মৌসুমে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ইন্দোনেশিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ২৩ লাখ টন কয়লা আমদানি হয়েছে। এর বিপরীতে সিলেটের বিভিন্ন শুল্ক স্টেশন দিয়ে ভারত থেকে কয়লা আমদানি হয়েছে মাত্র ১ লাখ টন। অথচ আগের বছরগুলোয় এসময়ে ভারত থেকে স্বাভাবিক কয়লা আমদানির পরিমাণ ছিল ১৭-২০ লাখ টন। কয়লা খাত সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, কয়লার ক্ষেত্রে বদলে যেতে শুরু এদেশের আমদানি বাণিজ্যের ভরকেন্দ্র। অতিরিক্ত মূল্যের কারণে এদেশের ব্যবসায়ীরা এখন ভারত থেকে কয়লা আমদানি কমিয়ে দিয়েছে। এর বিপরীতে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ইন্দোনেশিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে তুলনামূলক কম দামে কয়লার আমদানি বেড়েছে। এই সুবিধা নিতে গিয়ে এখন থেকে পণ্যটির আমদানি বাণিজ্যে নাম লিখিয়েছেন সংশ্লিষ্ট গ্রুপগুলোসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা। তবে এদেশের আমদানিকারকরা শিগগিরই কয়লার উচ্চমূল্যের বিষয়ে ভারতের রফতানিকারকদের সাথে আলোচনায় বসতে যাচ্ছেন। ওই আলোচনার ফল সন্তোষজনক না হলে রফতানিকারকরা অন্য দেশ থেকে কয়লা আমদানি শুরু করবেন।

সূত্র জানায়, ভারতের উচ্চ আদালতের নির্দেশে গতবছর ওই দেশ থেকে কয়লা আমদানি বন্ধ ছিল। এর আগ পর্যন্ত বাংলাদেশ এই জ্বালানি পণ্যটির সরবরাহের জন্য ভারতের ওপরই বেশি নির্ভরশীল ছিল। ফলে ওই সময়ে দেশে কয়লার সংকট তীব্র হয়ে দেখা দেয়। বিপাকে পড়ে দেশের কয়লানির্ভর শিল্প খাতগুলো। এ অবস্থায় নিরুপায় হয়েই আমদানিকারকরা কয়লার বিকল্প উৎস খুঁজতে থাকে। তখন থেকেই শুরু হয় ইন্দোনেশিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে কয়লা আমদানি। ভারত থেকে প্রতি টন কয়লা কিনতে খরচ হতো ৮৫ ডলার (প্রায় ৬ হাজার ৬৯২ টাকা)। আর দেশে আনার পর খনিজ জ্বালানিটি বিক্রি হতো প্রতি টন সাড়ে ৭ হাজার টাকায়। বর্তমানে ইন্দোনেশিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আমদানিকৃত প্রতি টন কয়লার দর ৫২ ডলার (প্রায় ৪ হাজার ৯৪ টাকা)। দেশে এর বিক্রিমূল্য দাঁড়ায় ৬ হাজার টাকা। দামের এ তারতম্যই ভারতের বদলে দক্ষিণ আফ্রিকা ও ইন্দোনেশিয়া থেকে কয়লা আমদানিতে ব্যবসায়ীদের আগ্রহ বাড়ার মূল কারণ। ইতিপূর্বে এদেশে ভারত থেকে কয়লা আমদানি ব্যবসার পুরোটাই ছিল সিলেটনির্ভর। কিন্তু এখন ভারত থেকে কয়লা আমদানি হ্রাস পেয়ে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে কয়লা করা আমদানি হচ্ছে।

এদিকে ভারতের ওপর কয়লা নির্ভরতা হ্রাস প্রসঙ্গে সিলেট কয়লা আমদানিকারক সমিতির সভাপতি ফালাউদ্দিন আলী আহমদ বলেন, কয়লার ব্যবসা ধরে রাখতে সম্প্রতি ভারতীয় ও বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের মধ্যে বৈঠক হয়েছে। আবারো এদেশের ব্যবসায়ীরা ভারতীয় কয়লা রফতানিকারকদের সাথে আলোচনায় বসবে। বৈঠকে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে ৫০ ডলারে কয়লা বিক্রির প্রস্তাব দেয়া হবে। তারা রাজি হলে ভারত থেকেই কয়লা আমদানি করা হবে। আর রাজি না হলে অন্য দেশ থেকে কয়লা আমদানি বাড়ানো হবে। কারণ বিশ্বব্যাপী এখন জ্বালানি পণ্যের দাম কমছে। এসময়ে ভারতীয় কয়লার মূল্য বাড়ানোর বিষয়টি একেবারেই অযৌক্তিক। কয়লার জন্য এখন বাংলাদেশ আর ওই দেশটির মুখাপেক্ষী নয়। অনেক বিকল্প তৈরি হয়েছে। ভারতীয় ব্যবসায়ীদের নিজেদের স্বার্থেই এটা বুঝতে হবে। অন্যথায় নিজেদের দোষেই তারা বাজার হারাবে।

সোনালীনিউজ/এমএইউ

Wordbridge School
Link copied!