• ঢাকা
  • বুধবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

খাদ্য সংকট তৈরি করে রোহিঙ্গা নিধনের পরিকল্পনা!


আন্তর্জাতিক ডেস্ক অক্টোবর ৮, ২০১৭, ০৯:২২ এএম
খাদ্য সংকট তৈরি করে রোহিঙ্গা নিধনের পরিকল্পনা!

ঢাকা: মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলিমদের নিধনযজ্ঞে নতুন অস্ত্র হিসেবে কৃত্রিম খাদ্য সংকট তৈরি করছে অং সান সু কির সেনাবাহিনী! সম্প্রতি তারা রাখাইনে বাড়ি, ফসল, দোকানপাট ও মজুদ খাদ্যের গুদাম পুড়িয়ে দেয়ার পরিমান বাড়িয়েছে। ফলে ওই এলাকায় তীব্র খাদ্য সংকট তৈরি হয়েছে বলে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীরা জানিয়েছে।

সদ্য বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা  বলছেন, প্রতিদিন কোনও না কোনও এলাকায় পড়ে থাকা খালি বসত বাড়িগুলো পুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। বিভিন্ন দোকানপাট ও বাজারগুলোতেও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ধ্বংস করা হচ্ছে মজুদ থাকা চালের গুদাম ও দোকান। গ্রামের নলকূপ থেকে শুরু করে পুকুরের পানিও নষ্ট করে দিচ্ছে মিয়ামারের সেনাসদস্যরা। এতে করে তীব্র খাদ্য সংকটে পড়েছেন আত্মগোপনে থাকা রোহিঙ্গারা।

আশঙ্কা করা হচ্ছ, বাংলাদেশে আরো রোহিঙ্গারা পালিয়ে আসবেন।  জাতিসংঘের মতে, আগামী ছয় মাসে আরো তিন লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশ পালিয়ে আসতে পারে। সংস্থাটির এমন আশংকার পর বাংলাদেশ সরকার বলছে, তারা খাদ্য এবং আবাসনের সুযোগ আরো বাড়াচ্ছে।

শুক্রবার (৬ আক্টোবর) জাতিসংঘের মানবিক ত্রাণ দফতরের প্রধান মার্ক লোকেক নতুন করে রোহিঙ্গাদের ঢল নামার একটি আশঙ্কা প্রকাশ করেন।

জাতিসংঘের হিসেবে মিয়ানমারের সাম্প্রতিক সহিংসতায় বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত আসা রোহিঙ্গাদের সংখ্যা প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ। তাদের এবং এর আগের রোহিঙ্গাসহ মোট আট লাখ শরণার্থীদের জন্য ৬ মাস ত্রাণ সাহায্য এবং আবাসনের একটি পরিকল্পনা এরই মধ্যে করা হয়েছে। সাহায্য সংস্থাগুলো এজন্য প্রায় সাড়ে ৪৩ কোটি ডলারের তহবিল আহ্বান করেছে। 

বাংলাদেশের ত্রাণ এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের সচিব শাহ কামাল বলেন, ঢল নামার সম্ভাবনা তারা কম মনে করলেও তারা আগের ধারণার তুলনায় কিছুটা বেশি শরণার্থী আসবে বলে প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

‘আমরা আগে ৮৪ হাজার পরিবারের থাকার বিষয়ে পরিকল্পনা করেছিলাম, কিন্তু এখন আমাদের পরিকল্পনায় আছে ১ লক্ষ ৫০ হাজার পরিবার। স্যানিটেশনের ক্ষেত্রেও আমরা আগের চিন্তাভাবনার চেয়ে একটু বাড়িয়ে চিন্তা করছি।’

তিনি বলেন, জাতিসংঘের খাদ্যবিষয়ক সংস্থা ডব্লিউএফপির সাথেও ৮ লাখ মানুষকে টার্গেট করেই খাদ্য ব্যবস্থাপনার পরিকল্পনা করা হয়েছে।

এদিকে মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গাদের আগমন এখনো চলছে। প্রতিদিনই সীমান্ত পাড়ি দিয়ে শরণার্থীরা বাংলাদেশে প্রবেশ করছেন।

টেকনাফে বিজিবির কমান্ডিং অফিসার আরিফুল ইসলাম বলেন, দুদিন বিরতির পর শনিবারও টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে প্রায় ৫০০ জন রোহিঙ্গা প্রবেশ করেছেন।

তিনি বলেন, নতুন আসা রোহিঙ্গারাও বলছেন সীমান্তের ওপারে তাদের বাংলাদেশে আসার জন্য বলা হচ্ছে এবং সীমান্তে এখনো অনেকে অপেক্ষা করছেন। নৌকা কম থাকায় অনেকে আসতে পারছে না বলে ধারণা করছে বিজিবি।

এদিকে আবার নতুন করে যদি বড় আকারে রোহিঙ্গা আসতে শুরু করে তবে সেটি তাৎক্ষণাত সামাল দেয়ার মত প্রস্তুতি নেই বলে মনে করছেন দুর্যোগ প্রস্তুতি বিষয়ক সংগঠণগুলোর জোট ডিজাস্টার ফোরামের সদস্য সচিব নাঈম ওয়াহারা। তিনি বলেন, যে ছয় মাসের পরিকল্পনা রয়েছে সেটিও অপ্রতুল।

"অনেক বিষয় ভাবা হয়নি। যেমন বড় সাইক্লোন হলে এই ঘরগুলো টিকবে না, সেটির কোন পরিকল্পনা আছে কিনা আমরা জানি না। শীত আসছে, সেটাও আমাদের মনে রাখতে হবে। ছয় মাসের মধ্যে খাবার এবং থাকার জায়গার বিষয়ে পরিকল্পনা হয়েছে, কিন্তু অন্যান্য বিষয় সেরকমভাবে বিবেচনায় রাখা হয়নি"।

তিনি বলেন, এক মাসের মাথায় আরেকটা বৈঠক করে পরিকল্পনাটি পুনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন।

আরো শরণার্থীর জন্য প্রস্তুতির পাশাপাশি রাজনৈতিকভাবে রোহিঙ্গা সঙ্কট কতটা সমাধানের দিকে যাচ্ছে সেটিও বিবেচনা করে পরিকল্পনা করতে হবে বলে মনে করছেন ওয়াহারা। সূত্র: বিবিসি

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এআই

Wordbridge School
Link copied!