• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

খাবার হোটেলে অব্যবস্থাপনা, ভোক্তা অধিকার নিশ্চুপ


ঝালকাঠি প্রতিনিধি মার্চ ১১, ২০১৮, ০৬:৫৩ পিএম
খাবার হোটেলে অব্যবস্থাপনা, ভোক্তা অধিকার নিশ্চুপ

ঝালকাঠি : জেলায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়াতে এবং খাদ্যে ভেজাল রোধ ও পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করার লক্ষ্যে তেমন কোনো কার্যক্রম নেই। তাই জেলায় ভোক্তা অধিকার আইনেরও তেমন বাস্তবায়ন পরিলক্ষিত হচ্ছে না। ক্রেতা সাধারণের জন্য ভোক্তা অধিকার আইন নামে দেশে একটি আইন আছে এবং আইনটি ২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশে চালু রয়েছে। ঝালকাঠি জেলার সাধারণ মানুষের অনেকেই এ ব্যাপারে সঠিক তথ্য জানেন না। এ আইন অনুযায়ী কোনো অসাধু ব্যবসায়ী ভোক্তাকে ঠকালে শুধু শাস্তিই পাবেন না বরং ভোক্তাও অভিযোগ করে আর্থিকভাবে লাভবান হবেন।

এ আইনটির মূল উদ্দেশ হচ্ছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ ও উন্নয়ন, ভোক্তা অধিকার বিরোধী কার্য প্রতিরোধ, ভোক্তা অধিকার লঙ্ঘনজনিত অভিযোগ নিষ্পত্তি, নিরাপদ পণ্য বা সেবা পাওয়ার ব্যবস্থা, কোনো পণ্য বা সেবা ব্যবহারে ক্ষতিগ্রস্ত ভোক্তাকে ক্ষতি পূরণের ব্যবস্থা, পণ্য বা সেবা ক্রয়ে প্রতারণা রোধ, ভোক্তা অধিকার ও দায়িত্ব সম্পর্কে গণসচেতনতা সৃষ্টি।

জেলার বিভিন্ন হাট-বাজার, মিষ্টির দোকানসহ পাইকারি ও খুচরা খাদ্য সামগ্রী বিক্রির দোকানে দেখা যায়, ওজন দেওয়ার সময় মোটা কাগজে প্রস্তুত মিষ্টির বাক্স অথবা মোটা কাগজে প্রস্তুত ঠোঙাসহ ওজন দেওয়া হয়। বাক্স বা ঠোঙার ওজনের কারণে ক্রেতা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও এর প্রতিবাদ করতে গেলে ভোক্তাকে অপমানিত হতে হয়।

আজকাল প্রায়ই দেখা যায়,  পণ্য বা সেবা প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সঠিকভাবে সেবা দিতে অবহেলা, দায়িত্বহীনতা বা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সঠিক সেবা না দেওয়ার কারণে জেলার কোথাও কোথাও বিভিন্ন সময় দ্বন্দ্ব, সংঘাত, মারামারি হচ্ছে। যারা টাকা দিয়ে কোনো জিনিস বা সেবা কেনে তারাই হচ্ছে ভোক্তা। ক্রেতা যদি কোনো পণ্য বাকিতে বা কিস্তিতেও কেনেন তবুও তিনি ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনের আওতাভুক্ত হবেন।

জেলায় সচেতনতার অভাবে ভোক্তাদের অধিকার খর্ব হচ্ছে সবসময়। সরেজমিনে লঞ্চঘাট, কলেজমোড়, জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনের ও শহরে প্রাণ কেন্দ্র পোস্ট অফিস রোডসহ বেশ কয়েকটি এলাকার হোটেলগুলোতে দেখা গেছে হোটেলের পিছনেই রয়েছে রান্নাঘর, সেখানে স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ। মেঝেতে ফেলে রাখা হয় সবজি, মাছ, মুরগীসহ নানান উপকরণ।

গরমের দিনে খালি গায়ে রান্না করছে বাবুর্চি এক হাত দিয়ে ঘাম মুছছে। খাবার রয়েছে ঢাকনাবিহীন। মাছি পড়ছে খাবারের মধ্যে। পাশেই রয়েছে পৌরসভার ড্রেনেজ ব্যবস্থা কিন্তু নির্দিষ্ট ময়লা ফেলার জায়গা ব্যবহার না করে হোটেলের বর্জ্য ফেলা হচ্ছে ড্রেনে। ময়লার আস্তরণে দ্বিতল হয়েছে রান্নার কড়াই তবুও চলছে রান্না। এ সব হোটেলগুলোতে খাবার পানিতেও পাওয়া যায় বিভিন্ন জীবাণু।

বাবুর্চির নির্দিষ্ট কোনো পোশাক ও প্রশিক্ষণ কিছুই নেই। কিন্তু এসব হোটেলগুলো বাহিরের চাকচিক্য দেখে মুগ্ধ হওয়ার মতো। সামনে দেওয়ালে রয়েছে বিভিন্ন ডিজাইনের টাইলস বসানো। এ জন্যই এসব হোটেল বনে গেছে অভিজাত হোটেল নামে। কিন্তু ভেতরে চলছে অপরিচ্ছন্নতার মহাযজ্ঞ। কোনো হোটেলই মানে না সরকারি বিধিমালা। বিএসটিআই অধ্যাদেশ-১৯৮৫ (সংশোধনী ২০০৩) এখন উপেক্ষিত।

একাধিক হোটেল-মালিকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাদের বেশির ভাগেরই ‘বাংলাদেশ পিউর ফুড অধ্যাদেশ-১৯৫৯ (সংশোধনী-২০০৫)’ সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই। অথচ আইনে ভেজাল খাদ্য, নোংরা পরিবেশে খাদ্য উৎপাদন, ঢাকনাবিহীন খাবারের ব্যাপারে কঠোর বিধিনিষেধ রয়েছে। এ আইনের ১৪ (বি) ধারায় বলা আছে, উৎপাদিত খাবার মানসম্মত না হলে অভিযুক্তদের সর্বনিম্ন পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা ও ছয় মাসের কারাদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা যাবে এবং সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ও এক বছর কারাদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা যাবে। এ আইনে আরও বলা আছে- হোটেলগুলোর রান্নাঘর হবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, খাবার থাকবে ডাকা, বাবুর্চিদের ইউনিফর্ম থাকবে, হাতের নখ থাকবে ছোট ইত্যাদি। কিন্তু শহরের ২/১টি হোটেল ছাড়া বাকি কেউ এ নিয়ম মানছে না।

এ ব্যাপারে পৌর স্যানিটারি অফিসার আ. সালাম জানান, হোটেলগুলোর অনিয়মের ব্যাপারে বিভিন্ন সময় আর্থিক দণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছিল। খুব শিগগিরই আবারও অভিযান চালিয়ে এ অনিয়ম নিয়ন্ত্রণে আনা হবে।

জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সাফিয়া সুলতানা জানান, জনবল সংকটের কারণে কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না। তারপরেও যতদূর পারা যায় অভিযান পরিচালনা করা এবং সচেতনতার জন্য লিফলেট দেয়ার কাজ করছি।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এইচএআর

Wordbridge School
Link copied!