• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

খালেদা জিয়ার মামলায় সম্ভাব্য রায় নিয়ে চিন্তিত নয় বিএনপি


সোনালী বিশেষ নভেম্বর ৮, ২০১৭, ০৩:৫১ পিএম
খালেদা জিয়ার মামলায় সম্ভাব্য রায় নিয়ে চিন্তিত নয় বিএনপি

ঢাকা : দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে চলমান মামলাগুলোর সম্ভাব্য রায় নিয়ে চিন্তিত নয় বিএনপি। বিএনপির কেন্দ্রীয় থেকে সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতারা মনে করেন, মামলায় রায় নিয়ে দলের চেয়েও বেশি চিন্তা সরকারের। তাদের ধারণা, বর্তমান পরিস্থিতিতে মামলাগুলোর তেমন ভিত্তি ও আইনি জোর নেই।

খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে উচ্চ ও নিম্ন আদালতসহ কয়েকটি আদালতে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট, জিয়া অরফানেজ, নাইকো ও গ্যাটকো দুর্নীতি মামলা এবং রাজনৈতিক মামলা চলছে। ইতোমধ্যে দুর্নীতির অভিযোগে করা খালেদা জিয়ার দুইটি মামলার কার্যক্রম শেষের দিকে চলে এসেছে। এখন দিন যত যাচ্ছে এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তাপ-উত্তেজনা ততই বাড়ছে। মামলার রায় কী হবে, এ নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও শঙ্কায় আছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা।

বিএনপি নেতারা প্রকাশ্যে বলছেন, দলীয় প্রধান খালেদা জিয়াকে এসব মামলায় শাস্তি দিয়ে জেলে রেখে নির্বাচন করতে চায় সরকার। খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে জেলে পাঠানো হলে দেশে কোনো নির্বাচন হবে না বলে ইতিমধ্যে জানিয়ে দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেছেন, খালেদা জিয়াকে সাজা দিয়ে নির্বাচন দেয়া হলে দেশের মানুষ সে নির্বাচনে অংশ নেবে না। মির্জা ফখরুল আরো বলেন, বিএনপি নির্বাচন করতে চায়। কিন্তু সে নির্বাচন হতে হবে সবার অংশগ্রহণে এবং সবার কাছে গ্রহণযোগ্য। একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে এই নির্বাচন হতে হবে। তিনি বলেন, বিএনপি জাতীয় নির্বাচনে যাবে কি না, তা নির্ভর করবে ওই সময় কোন ধরনের সরকার ক্ষমতায় থাকবে এবং নির্বাচন কমিশনের ভ‚মিকা কেমন থাকবে এসবের ওপর।

এদিকে, বিএনপির ত্যাগী ও তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা ছিল দলের চেয়ারপারসনের মামলা নিয়ে সরকারকে চাপে রাখতে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করবেন কেন্দ্রীয় নেতারা। প্রয়োজনে লাগাতার আন্দোলনের ডাক দিবেন। কিন্তু, মামলা শেষ পর্যায়ে চলে আসলেও কেন্দ্রীয় নেতাদের নীরব ভূমিকায় হতাশ মধ্য সারির ও তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। এমনকি প্রতিদিন বাড়ছে সাধারন মানুষেরও ক্ষোভ।

বিএনপির দফতর সূত্রে জানায়, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অন্তত ২৫টি মামলা চলমান। এর মধ্যে ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি থেকে অবরোধ চলাকালীন গাড়ি পোড়ানো, পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ এবং বক্তব্য কেন্দ্রিক মামলা রয়েছে প্রায় ১১টি। বিএনপির নেতাকর্মীদের অভিমত, খালেদা জিয়ার মামলাগুলো স্বাভাবিক প্রক্রিয়াতেই চলবে। আদালতের রায় নিয়ে তারা খুব একটা চিন্তিত নন। তাদের মতে, খালেদা জিয়া আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং তিনি নিয়মিত আদালতে হাজিরা দেন। তারা নিশ্চিত, রায়ে রাজনৈতিক প্রভাব থাকলে সেটি সরকারের জন্য বুমেরাং হয়ে দেখা দেবে।

এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য, খালেদা জিয়ার বিভিন্ন মামলার আইনজীবী ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার বলেন, সব মামলাতেই চার্জশিট গঠন করা হবে। নিম্ন আদালতে রায়ের পর হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টে আইনি লড়াই চলবে। খালেদা জিয়ার মামলার রায় নিয়ে আমরা আতঙ্কিত নই। খালেদা জিয়াকে ‘জনপ্রিয় রাজনীতিক’ উল্লেখ করে ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন আরো বলেন, খালেদা জিয়াকে জেলে রাখা রিস্কি। সরকার এটার চেষ্টা করবে বলে মনে হয় না। আমরা আইনের পথেই তার মামলাগুলো মোকাবিলা করব। বিএনপি সাংবিধানিক দল, তার নিজস্ব গঠনতন্ত্র আছে, নির্বাচনকেই তারা গণতান্ত্রিক পথ মনে করে। তাই আইনের পথে লড়াই-ই প্রধান পথ।

এদিকে, বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদেরও তেমনই অভিমত। তিনি বলেন, সরকার খালেদা জিয়াকে জেলে পাঠানোর মতলব করে থাকলে তা বিএনপির জন্যই শুভ হবে। দল এখন যেটুকু নড়েবড়ে আছে তা দূর হবে, দল আরও চাঙ্গা হবে। তিনি আরো বলেন, খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করলে বা জেলে ঢোকালেই বিএনপিকে ভাঙা যাবে না। এটা বাড়াবাড়ি হবে, দুঃসাহসী কাজ হবে। জিয়ার আদর্শে অগ্রসর হতে চাইলে খালেদা জিয়া ও তার পরিবারের বিকল্প নাই।

বিএনপির অন্যতম ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু এ বিষয়ে বলেন, সরকার নানা কারণে ভীত। আর এই ভয় তাড়াতে চেয়ারপারসনকে গ্রেফতার বা তার নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে নানা ধরনের বক্তব্য দিয়ে বেড়াচ্ছে আওয়ামী লীগ। আইনি মোকাবিলা চলছে, প্রয়োজনে রাজপথে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

এছাড়া বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইং কর্মকর্তা শায়রুল কবির খানও এ ব্যাপারে নিশ্চিন্ত। তিনি বলেন, সরকার খালেদা জিয়াকে কারাগারে পাঠিয়ে বা কোনও অনৈতিক রায় দিয়ে তাকে বিব্রত করবে না। বিএনপির নেতাকর্মীরা মনে করেন, সরকার এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেবে না। নিলে তা ক্ষমতাসীনদের জন্য হিতে বিপরীত হবে।

খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে যত মামলা : বিএনপি চেয়ারপারসনের অন্যতম আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া জানান, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে প্রায় ২৫টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটি দুদকের করা মামলা। বাকিগুলোর মধ্যে রয়েছে হত্যা, নাশকতা ও পুলিশের কাজে বাধা দেয়াসহ রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগের মামলা। এ বিষয়ে সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, উনার বিরুদ্ধে সব মামলাই এখন বিচারাধীন। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুদকের করা মামলাগুলোর মধ্যে চারটি সেনা সমর্থিত ২০০৭ সালের সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে করা। বাকি দুর্নীতির মামলা সহ অন্যগুলো আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দায়ের করা।

সানাউল্লাহ মিয়া আরো জানান, দুদকের করা মামলাগুলো হলো- জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা, গ্যাটকো দুর্নীতি মামলা, বড়পুকুরিয়া দুর্নীতি মামলা ও নাইকো দুর্নীতি মামলা।

তিনি জানান, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে সহিংসতা ও নাশকতার অভিযোগে ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন থানায় মামলা রয়েছে। এর মধ্যে রাজধানীর গুলশান ও কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থানায় দু’টি, খুলনা সদর থানায় একটি এবং রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানায় তিনটি মামলা উলে­খযোগ্য।

তবে গুলশান, কুমিল্লা ও খুলনার মামলাগুলো তদন্তাধীন। যাত্রাবাড়ী থানার মামলাগুলোর অভিযোগপত্র দেয়া হয়েছে। এছাড়া রাষ্ট্রদ্রোহ ও মানহানির অভিযোগে চারটি পিটিশন মামলা রয়েছে। এসব মামলাও তদন্তাধীন আছে বলে জানা গেছে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!