• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

খালেদা জিয়ার যাবজ্জীবন সাজা চায় দুদক


আদালত প্রতিবেদক অক্টোবর ২৩, ২০১৮, ০৪:৫৮ পিএম
খালেদা জিয়ার যাবজ্জীবন সাজা চায় দুদক

ঢাকা : জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় অর্থের উৎসের বিষয়ে পরিষ্কার হওয়ার জন্য অতিরিক্ত সাক্ষ্য গ্রহণ চেয়ে করা আবেদন গ্রহণ না করায় আদালত বর্জন করেছেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। এরপর আদালত তাঁদের অনুপস্থিতিতে অতিরিক্ত সাক্ষ্য নেওয়ার আবেদন খারিজ করে দেন। একই সঙ্গে রাষ্ট্রপক্ষে ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে এ মামলায় শুনানি শেষ হয়েছে।

বুধবার (২৪ অক্টোবর) এ বিষয়ে পরবর্তী আদেশের জন্য দিন ধার্য রাখা হয়েছে। দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান এবং রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম শুনানিতে খালেদা জিয়ার যাবজ্জীবন দণ্ড চেয়েছেন।

মঙ্গলবার (২৩ অক্টোবর) বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের বেঞ্চে খালেদা জিয়ার আপিল শুনানির একপর্যায়ে আদালত বর্জন করে বের হয়ে যান তাঁর আইনজীবীরা। বেলা ১১টার দিকে শুনানির একপর্যায়ে আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘সোমবার মামলার অর্থের উৎসের বিষয়ে আপনারা যে আদেশ দিয়েছেন, তার বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে যাব।’

জবাবে আদালত বলেন, ‘আপনারা আপিল বিভাগে যেতে পারেন।’ এরপর এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘আপিল বিভাগের সিদ্ধান্ত আসা পর্যন্ত মামলার কার্যক্রম মুলতবি করেন।’ জবাবে আদালত বলেন, ‘মুলতবির আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হলো।’এ সময় এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘সে ক্ষেত্রে আমরা শুনানিতে অংশগ্রহণ করছি না। আমরা শুনানি থেকে বিরত থাকছি।’ এরপর খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা আদালত থেকে বেরিয়ে আসেন।

এরপর আদালত বলেন, ৩১ অক্টোবর আপিল নিষ্পত্তির নির্দেশনা রয়েছে। এর মধ্যে আপিল নিষ্পত্তি করতে হবে। এরপর তাঁদের অতিরিক্ত সাক্ষ্য নেওয়ার আবেদন খারিজ করে দেন হাইকোর্ট। এ সময় এ জে মোহাম্মদ আলী ছাড়াও জয়নুল আবেদীন, আবদুর রেজাক খান, ব্যারিস্টার নওশাদ জমির, আমিনুল ইসলাম, এ এইচ এম কামরুজ্জামান, ব্যারিস্টার রাগীব রউফ চৌধুরী, মো. আখতারুজ্জামান, মো. ফারুক হোসেনসহ আইনজীবীরা আদালত থেকে বেরিয়ে আসেন।

খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা আদালত থেকে বেরিয়ে আসার পর প্রথমে দুর্নীতি দমন কমিশনের পক্ষের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান শুনানি করেন।
তারপর রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম শুনানি করেন।এর আগে সোমবার অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার অর্থের উৎসের বিষয়ে পরিষ্কার হওয়ার জন্য অতিরিক্ত সাক্ষ্য গ্রহণ চেয়ে খালেদা জিয়ার আবেদনের শুনানি শেষে আদালত আবেদনটি নথিভুক্ত করার আদেশ দেন। আলোচিত জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার অর্থ চার কোটি ৪৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা কুয়েতের আমির জিয়াউর রহমানের স্মৃতি রক্ষার্থে এতিমখানা করতে দিয়েছেন বলে খালেদা জিয়ার পক্ষে দাবি করা হয়েছে। অপর দিকে দুদকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ওই অর্থ এসেছে সৌদি কমার্শিয়াল ব্যাংকের মাধ্যমে।

সোমবার শুনানিতে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা এডিশনাল এভিডেন্সের জন্য কুয়েতের আমির যে অর্থ পাঠিয়েছেন, এটা প্রমাণের জন্য যে ব্যাংকের মাধ্যমে (সৌদি কমার্শিয়াল ব্যাংক) অর্থ পাঠানো হয়েছে তার কাগজপত্র চেয়ে আবেদন করেন। ফৌজদারি কার্যবিধি ৪২৮ ধারা অনুযায়ী আপিলেট কোর্টও প্রয়োজনে অতিরিক্ত সাক্ষ্য নিতে পারেন।

এ বিষয়ে খালেদা জিয়ার আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী ভারত ও পাকিস্তানের বিভিন্ন রেফারেন্স দেখান। তারা বলেন, এই মামলার অর্থের উৎস পরিষ্কার হওয়া প্রয়োজন। অর্থের উৎস পাওয়া গেলে মামলার মূল বিবেচ্য বিষয় ট্রাস্টের অর্থ পাবলিক ফান্ড না প্রাইভেট ফান্ড, তা পরিষ্কার হতো।

অন্যদিকে দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান বলেছেন, এই মামলার অর্থের উৎস সৌদি কমার্শিয়াল ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে। এ বিষয়টি মামলার ২৬তম সাক্ষীর মাধ্যমে পরিষ্কার হয়েছে। এই পর্যায়ে ২৬ বা ২৭ দিন যুক্তি উপস্থাপনে শেষে অতিরিক্ত সাক্ষ্য গ্রহণের এই আবেদন গ্রহণযোগ্য নয়।

আসামিপক্ষের আইনজীবীরা জানান, এই মামলার রাষ্ট্রপক্ষের ২৬তম সাক্ষী ও তৎকালীন বাংলাদেশের সৌদি রাষ্ট্রদূত খন্দকার আবদুস সাত্তার সাক্ষ্যে বলেছেন, সৌদি কমার্শিয়াল ব্যাংক সাম্বা গ্রুপে একীভূত হয়েছে। তিনি অর্থের উৎসের বিষয়ে সাম্বা গ্রুপের মি. তালাতের কাছে চিঠি লিখেছেন।

তিনি নিশ্চয়তা দিয়েছেন, তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে এবং তা পাওয়ামাত্র দেওয়া হবে। তবে এরপর অর্থের উৎসের বিষয়ে আর কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। এ জন্য আলোচিত জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টে অর্থের উৎস নিশ্চিত হতে হলে অতিরিক্ত সাক্ষ্য গ্রহণ করতে হবে।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় গত ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন রাজধানীর বকশীবাজারে স্থাপিত অস্থায়ী পঞ্চম বিশেষ জজ আদালত। পরে ওই সাজার বিরুদ্ধে আপিল করেন খালেদা জিয়া ও রাষ্ট্রপক্ষ। রায় ঘোষণার পরপরই খালেদা জিয়াকে নাজিমুদ্দিন রোডের পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। অসুস্থ হয়ে পড়ায় পরে তাঁকে বঙ্গবন্ধু শেখ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয়।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!