• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

খালেদা জিয়ার সাজা হলে নির্বাচনে যাবে না বিএনপি


সোনালী বিশেষ নভেম্বর ২৪, ২০১৭, ০২:৩৬ পিএম
খালেদা জিয়ার সাজা হলে নির্বাচনে যাবে না বিএনপি

ঢাকা : বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত জিয়া অরফানেজ এবং জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাজা হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন দলের শীর্ষ নেতারা। কারাগারে যেতে হলে তাকে ‘সাময়িক’ রাজনীতি থেকেও দূরে থাকতে হতে পারে। সে সময় বিএনপি কার নেতৃত্বে চলবে- এ নিয়ে দলের ওপর মহলে চলছে অপ্রকাশ্য আলোচনা।

এছাড়া আলোচিত ওই দুটি মামলায় তার সাজা হলে দেশবাসীকে সঙ্গে নিয়ে নির্বাচন প্রতিহত করা হবে। খালেদা জিয়াকে ছাড়া নির্বাচন হতে পারে না এবং হতে দেয়া হবে না বলেও মন্তব্য করেছেন সংশ্লিষ্ট নেতারা।

এ প্রসঙ্গে খালেদা জিয়ার মামলার অন্যতম আইনজীবী বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের মামলার কার্যক্রমের গতিপ্রবাহ দেখে মনে হচ্ছে সরকার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নতুন করে কোনো ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে।

এদিকে, নিজের নাম না প্রকাশ করার শর্তে বিএনপির এক নেতা বলেন, বেগম জিয়ার ধারণা- তার দলকে বিভক্ত করতে কয়েকজন নেতা সরকারের সঙ্গে আঁতাক করছেন। এদের মধ্যে স্থায়ী কমিটির দুজন নেতাকে সন্দেহের চোখে দেখছেন তিনি। কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতাকে পর্যবেক্ষণ করছেন। এ বিষয়টি নিয়ে কয়েকজনের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনাও করেছেন তিনি।

জানা গেছে, বিএনপির মধ্যসারির নেতাদের সঙ্গে খালেদা জিয়া আগামীর পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলছেন বেশি। সম্প্রতি কয়েকজনের সঙ্গে তিনি যা বলেছেন, তার মোদ্দা কথা হলো বেশিরভাগ জ্যেষ্ঠ নেতার ওপর তিনি এখন আর আস্থা রাখতে পারছেন না। অঙ্গসংগঠনের শীর্ষ নেতা এবং কেন্দ্রীয় কমিটির তরুণ ও মধ্য সারির নেতাদের তিনি বলছেন, তোমাদের ওপর আস্থা আছে, আমি কারাগারে গেলে তোমাদের কাজ করতে হবে।

সর্বশেষ ২০ দলীয় জোটের বৈঠকে আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আদায়ে সরকারের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন। বৈঠকে উপস্থিত জোটের শীর্ষ নেতারা জানান, খালেদা জিয়া পরামর্শ দিয়েছেন, এখন থেকে আন্দোলন শব্দটি নয়, রাজনৈতিক কর্মসূচি শব্দটি সামনে আনতে হবে। একই সঙ্গে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট অটুট রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন তিনি।

জোট নেতাদের উদ্দেশে খালেদা জিয়া বলেছেন, কোনোভাবেই জোট ভেঙে সরকারের ফাঁদে পা দেয়া যাবে না। সরকারের অনেক টাকা আছে। সরকার অনেক টোপ দেবে; কিন্তু আপনারা যাবেন না। কোনোভাবেই যেন জোট না ভাঙে, সে ব্যাপারে শরিক দলীয় নেতাদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন তিনি।

সূত্র জানায়, বৈঠকে খালেদা জিয়াকে আরো বেশি গণমুখী কর্মসূচি নেয়ার পরামর্শ দেন জোট নেতারা। জবাবে খালেদা জিয়া বলেন, কর্মসূচি দেয়ার সাধ্যমতো চেষ্টা করবেন। তবে তার শারীরিক অবস্থা ও পরিস্থিতির ওপরও বিষয়টি অনেকটা নির্ভর করবে। বৈঠকে জামায়াতে ইসলামীসহ ১৭টি শরিক দলের শীর্ষ নেতারা অংশ নেন। এর মধ্যে অনুপস্থিত ছিলেন কল্যাণ পার্টি ও পিপলস লীগের নেতারা। তবে লেবার পার্টিকে সংগঠনটির উপদলীয় কোন্দলে বিভক্ত নেতৃবৃন্দের কারণে বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।

বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি) চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ এ প্রসঙ্গে একটি গণমাধ্যমকে বলেন, বৈঠকে সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙে দেয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন জোট নেতারা। এছাড়া ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি) চেয়ারম্যান খন্দকার গোলাম মতুর্জা বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন ও ২০ দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়াকে ছাড়া তারা আগামী নির্বাচনে যাবেন না। এমনকি জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ওই নির্বাচন হতেও দেবেন না।

সংসদ ভেঙে দেয়া ও সেনাবাহিনী মোতায়েন: জোটের ওই বৈঠকে জোটের ভবিষ্যৎ কর্মপন্থার ওপর বক্তব্য রাখতে গিয়ে শরিক দলের নেতারা বলেছেন, আগামীতে দলীয় সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে তারা অংশ নেবেন না। একই সঙ্গে বর্তমান সরকারের মেয়াদের তিন মাস আগে সংসদ ভেঙে দিতে হবে। সংসদ বহাল রেখে নির্বাচন হতে পারে না। নির্বাচন অনুষ্ঠানের দিন থেকে কমপক্ষে এক সপ্তাহ আগে সেনাবাহিনীকে বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে মাঠে নামাতে হবে।

এসব দাবির প্রতি জনমত গঠনে বিভাগ ও জেলায় সফর ও সমাবেশ করা উচিত। নেতাদের বক্তব্যের প্রতি সম্মতি জানিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেছেন, নতুন বছর নয়- এ মুহূর্ত থেকে জনমত গঠনের প্রস্তুতি নিতে হবে। জোট নেতাদের আশ্বস্ত করে খালেদা জিয়া বলেন, ২০ দলীয় জোটের শরিকরা বিএনপির দুঃসময়ে পাশে আছে। ভবিষ্যতে সুসময়েও পাশে থাকবে। এমনকি জোট শরিকদের নিয়েই নির্বাচনে যাবেন তারা।

বিভাগীয় শহরে সমাবেশ : জোটের বৈঠকে খালেদা জিয়া বলেছেন, আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আট বিভাগীয় শহরসহ গুরুত্বপূর্ণ জেলাগুলোতে সফর হতে পারে। জোটের শরিক নেতাদের কাছে ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা জানতে চাইলে তারা সারাদেশে সফর করে সমাবেশ করার দাবি জানালে খালেদা জিয়া এ সফরের কথা বলেন।

তাদের প্রস্তাবের প্রতি সমর্থন দিয়ে তিনি বলেছেন, হাতে বেশি সময় নেই। নির্বাচন দ্রুত চলে আসছে। তাই সফরের আগে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রস্তুতি নিতে হবে। নিজ নিজ দলের মধ্যে আলোচনা করে এখনই ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সময়। সামনে সব কর্মসূচিতে শরিক নেতাদের অংশ নিতে হবে। নতুন বছরের শুরুতে বিভাগ ও জেলা সফর শুরু হতে পারে।

এই সফরের উদ্দেশ্য হচ্ছে, দলীয় সরকার নয়- নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে জনমত গঠন করা। ২০ দলীয় জোটের ব্যানারে এসব সফর হবে। সরকারের কর্মকাণ্ডের ওপর নির্ভর করে নতুন কর্মসূচি দেয়া নিয়েও আলোচনা হয়।

জোট ভাঙা যাবে না : জোটের শীর্ষ নেতাদের পরামর্শ দিয়ে খালেদা জিয়া বলেছেন, আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অনেক কিছু ঘটতে পারে। সরকারের পায়ের নিচে মাটি নেই। তাদের প্রতি মানুষের আস্থা নেই। এজন্য সরকার চাইবে ২০ দলীয় জোট ভাঙতে। সরকারের পক্ষ থেকে টোপ দেয়া হবে; কিন্তু সেই টোপে সাড়া দেয়া যাবে না। এমনকি জোটের শরিকদের মধ্যে কোনো গ্রুপিং থাকতে পারবে না। জোটে যে না থাকবে সে চলে যাবে; কিন্তু জোট ভেঙে যাওয়া যাবে না।

এ সময় বাংলাদেশ লেবার পার্টির দুই গ্রুপের উপদলীয় কোন্দলের কথা ওঠে। লেবার পার্টির নেতা ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরানের ওপর অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন। লেবার পার্টির আগে ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি), ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি), ভাসানী ন্যাপ, ইসলামী ঐক্যজোট ও বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টি ভেঙে যায়। এ ছয়টি দল ভেঙে যাওয়ার পরও একাংশ বিএনপি রেখে দেয় যাতে ২০ দলীয় জোট নাম অটুট থাকে।

ডিসেম্বরে মুক্তিযোদ্ধা ও আইনজীবীদের সমাবেশ : গত বছর ছাড়া এর আগে প্রায় প্রতি বছরই বিজয় দিবস উপলক্ষে মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদদের প্রতি সম্মান রেখে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা দেওয়ার রেওয়াজ ছিল বিএনপির। এবারও দলটি মুক্তিযোদ্ধাদের সমাবেশ করতে চায়। জোটের বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। শরিক দলের নেতারা প্রস্তাব দিলে জোট নেত্রী খালেদা জিয়া সমাবেশের ব্যাপারে সম্মতি দিয়েছেন। তবে কবে হবে তার দিন-তারিখ ঠিক হয়নি বলে জোটের একাধিক নেতা জানান।

পাশাপাশি প্রধান বিচারপতিকে ছুটিতে পাঠানোর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়েছে এ বৈঠকে। প্রধান বিচারপতিকে পদত্যাগে বাধ্য করার প্রতিবাদে ডিসেম্বরে জাতীয়তাবাদী আইনজীবীদের ব্যানারে সমাবেশ করার কথা বলেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন। আইনজীবীদের সমাবেশে তার আগামী নির্বাচন ও বর্তমান সংকট পরিস্থিতি নিয়ে জোরালো বক্তব্য তুলে ধরার সিদ্ধান্ত হয়। সমাবেশের তারিখ ও স্থান ঠিক না হলেও বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সমাবেশ হওয়ার বিষয়টি নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়।

এছাড়া দলীয় একটি সূত্র জানায়, আগামী মাসের ২১ ডিসেম্বর রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল দেয়া হয়েছে। এই সিটি নির্বাচনে ২০ দলীয় জোটের পক্ষে একক প্রার্থী দেয়ার ব্যাপারেও বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী ছাড়া কাউন্সিলর প্রার্থী হতে আগ্রহী জামায়াতসহ অন্যান্য শরিক দলের কেউ থাকলে নাম দিতে বলেছেন খালেদা জিয়া।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!