• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
সারাদেশে ধরপাকড়

খালেদা জিয়ার সিলেটযাত্রার এপিঠ-ওপিঠ


নিজস্ব প্রতিবেদক ফেব্রুয়ারি ৬, ২০১৮, ০১:০২ পিএম
খালেদা জিয়ার সিলেটযাত্রার এপিঠ-ওপিঠ

সিলেট পৌঁছে হজরত শাহজালাল (রহ.)-এর মাজার জিয়ার করেন খালেদা জিয়া

ঢাকা: নিজের মামলার রায়কে সামনে রেখে পুণ্যভূমি সিলেটে হজরত শাহজালাল (রহ.) ও হজরত শাহপরাণ (রহ.) মাজার জিয়ারত করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) মাজারের নারী ইবাদতখানায় কোরআন তেলাওয়াত, ফাতেহা পাঠ ও বিশেষ দোয়া করেন তিনি। সন্ধ্যা ৬টায় তিনি হজরত শাহজালাল (রহ.) মাজার জিয়ারত ও মাগরিবের নামাজ আদায় করেন।

এরপর রাতে শাহপরাণ (রহ.) মাজার জিয়ারত করেন। এর আগে সকাল সোয়া ৯টায় সিলেটের উদ্দেশে ঢাকার গুলশানের বাসভবন ফিরোজা থেকে রওনা দেন খালেদা জিয়া। রাত পৌনে ১০টায় ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন তিনি। আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায় হওয়ার কথা।

ঢাকা থেকে সিলেট পর্যন্ত দীর্ঘ রাস্তায় খালেদা জিয়ার গাড়িবহরকে কঠোর নিরাপত্তা দিয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। নিরাপত্তার স্বার্থে বিএনপি চেয়ারপারসনকে অভ্যর্থনা জানাতে রাস্তায় দাঁড়াতে দেওয়া হয়নি দলটির নেতাকর্মীদের। বন্ধ রাখা হয় রাস্তার দু'পাশের সব দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।

খালেদা জিয়ার এ যাত্রাপথে তাকে শুভেচ্ছা জানাতে সড়কের পাশে দাঁড়াতে গিয়ে দলের নেতাকর্মীরা ব্যাপক পুলিশি বাধার মুখে পড়ে। নারায়ণগঞ্জসহ অনেক পয়েন্টে তারা দাঁড়াতেই পারেনি। বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়েছে ভৈরবে। তবে হবিগঞ্জ, শায়েস্তাগঞ্জসহ কয়েকটি স্থানে বিএনপিপ্রধানকে স্বাগত ও শুভেচ্ছা জানাতে সক্ষম হয়েছে নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। সিলেট সফর শেষে খালেদা জিয়া গত রাতেই ঢাকায় ফেরার জন্য রওনা হন।

বিএনপির অভিযোগ, তাদের অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে। নেত্রীর গাড়িবহরকে লক্ষ্য করে জুতা প্রদর্শন, হবিগঞ্জের নবীগঞ্জে কাঁদানে গ্যাস ছোড়ার ঘটনাও ঘটেছে।

গাড়িবহরকে স্বাগত জানানোর সময় বিভিন্ন স্থানে বাধা দেওয়া হয় বলে বিএনপি অভিযোগ করেছে। নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজারে অনেককে গ্রেফতার করে পুলিশ।

এদিকে যে কোনো পরিস্থিতিতে ঐক্যবদ্ধ থেকে মোকাবেলা করতে দলের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন খালেদা জিয়া। সোমবার সন্ধ্যায় সিলেটে মহান সুফিসাধক হজরত শাহজালাল (রহ.) ও হজরত শাহপরান (রহ.)-এর মাজার জিয়ারত শেষে রাতে স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে তিনি এ নির্দেশ দেন। পাশাপাশি দায়িত্বশীল হয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি সিলেট সফরকে সফল করে তোলায় নেতাকর্মীদের ধন্যবাদও জানান।

খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে করা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায় ৮ ফেব্রুয়ারি ঘোষণা হওয়ার কথা। এ মামলার রায়ের আগেই সোমবার সন্ধ্যা পৌনে ৬টায় প্রথমে হজরত শাহজালাল (রহ.) এবং পরে রাত সোয়া ৭টায় হজরত শাহপরান (রহ.)-এর মাজার জিয়ারত করেন তিনি। দুই মাজারে মহিলা ইবাদতখানায় খালেদা জিয়া ইবাদত করেন এবং পরে বিশেষ মোনাজাতে অংশ নেন। জিয়ারত শেষে সার্কিট হাউসে ফিরে আসেন খালেদা জিয়া। এরপরই রাত সোয়া ৯টায় সেখানে স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন তিনি। রাত ১০টায় সিলেট সার্কিট হাউস থেকে খালেদা জিয়া গাড়িবহর নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন।

খালেদা জিয়ার আগমনে সিলেট শহরে জনতার ঢল নামে। বিকালে শহরের প্রবেশমুখে হাজার হাজার নেতাকর্মী তাকে অভিনন্দন জানিয়ে সার্কিট হাউসে নিয়ে আসেন। সিলেট যাওয়ার পথে বিএনপির নেতাকর্মীরা চেয়ারপারসনকে স্বাগত জানান। তারা সড়কের বিভিন্ন অংশে অবস্থান নিয়ে খালেদা জিয়ার নামে স্লোগান দেন।

খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানাতে এসে আটক হয়েছেন বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের অনেক নেতাকর্মী। তা ছাড়া কোথাও কোথাও পুলিশ ও সরকারি দলের কর্মীদের বাধার সম্মুখীনও হতে হয়েছে তাদের। ঘটে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া। বিশেষ করে ভৈরব অতিক্রম করার সময় পুলিশ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, রাস্তায় বিশৃঙ্খলা, ইটপাটকেল নিক্ষেপ, লাঠিচার্জ, টিয়ারগ্যাস, গুলি ও গ্রেফতারের ঘটনা ঘটে।

যাত্রাপথে দেখা যায়- ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের দুই পাশের অধিকাংশ দোকানসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছিল বন্ধ। এ কারণে সড়কে সাধারণ মানুষের উপস্থিতি ছিল অন্যদিনের চেয়ে খুবই কম। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং ক্ষমতাসীন দলের বাধা ও হামলার পরও নেতাকর্মীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীরা তাদের সমর্থকদের নিয়ে ব্যাপক শোডাউন করেন।

খালেদা জিয়া সর্বশেষ সিলেট গিয়েছিলেন দশম সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৩ সালের ৪ অক্টোবর। সে সময় আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে ২০ দলীয় জোটের জনসভায় বক্তব্য দেন তিনি।

চেয়ারপারসনের সফরসঙ্গী হিসেবে ছিলেন- দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান ওমর, মো. শাজাহান, বরকতউল্লাহ বুলু, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, হাবিব উন-নবী খান সোহেল, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, কেন্দ্রীয় নেতা আমিরুল ইসলাম খান আলিম, তাবিথ আউয়াল, শিরীন সুলতানা, রেহেনা আক্তার রানু, সুলতানা আহমেদ, সেলিমুজ্জামান সেলিম, যুবদল নেতা মাহবুবুল হাসান ভূঁইয়া পিংকু, ঢাকা মহানগর উত্তরের সাংগঠনিক সম্পাদক আক্তার হোসেন প্রমুখ।

যাত্রা শুরুর আগে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, চেয়ারপারসন রাজনৈতিক প্রচারে সিলেট যাচ্ছেন না। তিনি শুধু মাজার জিয়ারত করতে যাচ্ছেন। এক বছর আগে নির্বাচনী প্রচারের কোনো সুযোগ নেই। যেখানে এখন পর্যন্ত লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড সৃষ্টি করা হয়নি সেখানে নির্বাচনী প্রচার কিভাবে হবে?

এদিকে খালেদা জিয়ার সিলেট সফরে পুলিশি বাধা ও নেতাকর্মীদের আটকের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বিএনপি। বিকালে নয়া পল্টনে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করে বলেন, সিলেট যাওয়ার পথে বিভিন্ন স্থানে নেতাকর্মীদের পুলিশ দাঁড়াতেই দেয়নি। বিভিন্ন জায়গায় আটক করা হয়েছে। রাস্তায় যাতে না আসতে পারে, সেজন্য কোথাও কোথাও কর্মীদের গলিতে আটকে রাখা হয়েছে। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা পুলিশের উপস্থিতিতে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে স্লোগান দিচ্ছেন। এ হচ্ছে পুলিশের ভূমিকা।

সামনের সিটে খালেদা জিয়া-
অফ হোয়াইট শাড়ি ও শাল পরে নিশান পাজেরো জিপের সামনের সিটে বসে সিলেট গেলেন খালেদা জিয়া। সাধারণত তিনি গাড়ির পেছনের সিটে বসেন। এবার তার ব্যতিক্রম। সব সময় সামনের সিটে বসেন খালেদা জিয়ার বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস। তিনি একই গাড়ির পেছনের আসনে বসেছেন। গুলশান থেকে যাত্রা শুরুর সময় খালেদা জিয়া বিভিন্ন স্থানে ফুটপাতে দাঁড়ানো পথচারীদের অভিনন্দনের জবাবও দেন হাত নেড়ে।

প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে জানা গেছে, ঢাকা থেকে সিলেটের প্রতিটি স্পটে নেতাকর্মীরা খালেদা জিয়াকে শুভেচ্ছা জানান।

সিলেট ব্যুরো জানায়, বিকাল সাড়ে ৪টায় সিলেট সার্কিট হাউসে পৌঁছান খালেদা জিয়া। নগরীর হুমায়ুন রশীদ চত্বর মেন্দিবাগ হয়ে নগরীতে প্রবেশ করে খালেদার জিয়ার গাড়িবহর। এ সময় সার্কিট হাউসের সামনে জড়ো হওয়া হাজারও নেতাকর্মী তাকে স্লোগানে স্লোগানে স্বাগত জানান।

সার্কিট হাউসে পৌঁছলে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আবদুল মোত্তালিব, সাংগঠনিক সম্পাদক সাখাওয়াত হাসান জীবন, সিলেট সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, মহানগর সভাপতি নাসিম হোসেইন, সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম, জেলা সভাপতি আবুল কাহের চৌধুরী শামীম, সাধারণ সম্পাদক আলী আহমেদ, কেন্দ্রীয় নেতা কলিমউদ্দিন মিলন, দিলদার হোসেন সেলিম, জিকে গউস, এম নাসের রহমান, কাইয়ুম চৌধুরী দলীয় চেয়ারপারসনকে অভ্যর্থনা জানান।

প্রায় আধঘণ্টা সিলেট সার্কিট হাউসে বিশ্রামের পর বিকাল ৫টা ৪৫ মিনিটে হজরত শাহজালাল (রহ.) ও হজরত শাহপরান (রহ.)-এর মাজার জিয়ারতের উদ্দেশে বের হন। সার্কিট হাউস থেকে মাজার পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে হাজার হাজার নারী-পুরুষ সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে তাদের নেত্রীকে মুহুর্মুহু করতালি দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। বন্দর বাজার ও জিন্দাবাজার, আম্বরখানা সড়কের দুই পাশের উঁচু উঁচু দালানে উঠেও খালেদা জিয়াকে একনজর দেখতে মানুষের উপস্থিতি ছিল ব্যাপক। বিএনপি চেয়ারপারসনকে অভ্যর্থনা জানাতে আসা হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতি একরকম জনসমুদ্রে রূপ নেয়।

এ সময় নেতাকর্মীরা ‘আমার নেত্রী আমার মা, বন্দি হতে দেব না’, ‘লাইলাহা ইল্লালাহ ধানের শীষের মালিক তুই আল্লাহ’, ‘খালেদা জিয়ার আগমন, লাল গোলাপ শুভেচ্ছা’, ‘খালেদা জিয়া এসেছে রাজপথ কেঁপেছে’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।

ভিড় ডিঙিয়ে বিএনপির চেয়ারপারসনের গাড়ি মাজার পর্যন্ত নিয়ে যেতে নিরাপত্তা রক্ষীদের চরম বেগ পেতে হয়। শাহজালাল (রহ.)-এর মাজারে দলের ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহানসহ নেতারা খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানান। মাজার জিয়ারত শেষে মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত কক্ষে তিনি মাগরিবের নামাজ আদায় করেন। এরপর ফাতেহা পাঠ করে বিশেষ মোনাজাতে অংশ নেন।

শাহজালাল (রহ.)-এর মাজারে মোনাজাত পরিচালনা করেন খাদেম মাওলানা কবির। মোনাজাতে ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার রায়ে খালাস চেয়ে দোয়া করা হয়। খালেদা জিয়া এরপর যান শহর থেকে সাত কিলোমিটার দূরে খাদিমনগরে শাহপরাণ (রহ.) মাজারে। সেখানে তিনি ফাতেহা পাঠ করে মাজার জিয়ারত করেন।

খালেদার গাড়িবহর সিলেট পৌঁছলে অনেকটা অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে সিলেট নগরীর অধিকাংশ রাস্তা। তখন স্বেচ্ছাসেবক ও ছাত্রদল নেতাদের ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করতেও দেখা যায়।

একই তোরণে তিন পার্টি প্রধানকে বরণ-
সিলেটে এক সপ্তাহে তিন পার্টি প্রধানকে বরণ করেছে ১৩টি তোরণ। এর মধ্যে ৫টি নির্মিত হয়েছে হজরত শাহজালাল (রহ.)-এর মাজারের প্রবেশ গেটে। বাকি ৮টি নির্মাণ হয়েছে মাজার গেটসংলগ্ন নগরীর চৌহাট্টা-আম্বরখানা রোডে। এ তোরণগুলো নির্মাণ হয়েছিল ২৮ জানুয়ারি। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনার সিলেট সফর উপলক্ষে। তোরণগুলোতে শুভেচ্ছা জানিয়ে ব্যানার টানানো হয়েছিল আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের। ৩০ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী সিলেট সফর করেন। ৩১ জানুয়ারি তোরণগুলো বহাল থাকে শুধু পাল্টে যায় ব্যানারগুলো।

তোরণে ঝুলতে দেখা যায়- সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদকে স্বাগত জানানোর ব্যানার। রোববার রাতে তোরণের ব্যানার পাল্টে যায়। সোমবার সকালে ওই ১৩টি তোরণে স্থান পায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানানো বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের ব্যানার।

গাড়িচাপায় আহত ২-
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গাড়িবহর সিলেট সার্কিট হাউসে পৌঁছলে নেতাকর্মীদের ঢল সামলানো যায়নি। সার্কিট হাউস প্রাঙ্গণে ঢুকে পড়েন নেতাকর্মীরা। তখন খালেদা জিয়ার গাড়ি পার্কিংয়ের সময় গাড়ির চাকায় পিষ্ট হয়ে দু’জন আহত হন। আহতদের মধ্যে একজন বাংলানিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের ফটোগ্রাফার আবু বকর ও জেলা ছাত্রদল সহসভাপতি সোহেল মাহমুদ। তাদের সিলেট ওসমানী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, আবু বকরের পায়ের গোড়ালি ভেঙে গেছে। এছাড়া সার্কিট হাউস প্রাঙ্গণে ধাক্কাধাক্কিতে আহত হয়েছেন বিএনপি নেতা এনামুল ইসলাম টুটুল ও ছাত্রদল নেতা সাকিব হাজারী।

আকস্মিক পোস্টার ও লিফলেট-
খালেদা জিয়া মাজার জিয়ারতের আগে সোমবার দুপুরে হজরত শাহজালাল (রহ.)-এর মাজার ও আশপাশ এলাকায় একটি লিফলেট বিতরণ করা হয়। সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক জামিল আহমদ এবং মহানগর ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক আবদুল আলীম তুষারসহ অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীকে লিফলেট বিতরণ করতে দেখা যায়।

লিফলেটে খালেদা জিয়াকে এতিমের টাকা আত্মসাৎকারী উল্লেখ করে তার সিলেট সফর বয়কট করার আহ্বান জানানো হয়। পাশাপাশি নগরীর চৌহাট্টা, দরগাহ গেট, শাহজালাল মাজারের আশপাশ এলাকাসহ বিভিন্ন পয়েন্টে সোমবার দুপুরে তড়িঘড়ি করে লাল রঙের পোস্টার লাগাতে দেখা যায়। এসব পোস্টারে খালেদা জিয়ার মামলার বিভিন্ন তথ্য ও বিবরণী উল্লেখ করে তার সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করা হয়েছে।

মহানগর ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক আবদুল আলীম তুষার জানান, খালেদা জিয়া এতিমের টাকা আত্মসাৎকারী। আমরা সাধারণ জনগণের পক্ষে খালেদা জিয়ার শাস্তি দাবি করে এসব পোস্টার লাগিয়েছি।

আড়াইহাজার-
খালেদা জিয়ার সিলেট সফরকালে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারের পাঁচরুখী এলাকায় পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতাকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। খালেদা জিয়ার গাড়িবহর আড়াইহাজার উপজেলার পাঁচরুখী এলাকা অতিক্রমকালে পুলিশ বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদকে আটক করলে পুলিশ ও বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে কয়েক দফা ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে পুলিশ এ সময় ফাঁকা গুলি ও লাঠিচার্জ করে।

সিদ্ধিরগঞ্জ-
খালেদা জিয়ার সিলেটের উদ্দেশে যাত্রাপথে সিদ্ধিরগঞ্জে নেতাকর্মীদের মহাসড়কে দাঁড়াতে দেয়নি পুলিশ। সকাল থেকেই বিপুলসংখ্যক পুলিশ, সাঁজোয়া যান ও প্রিজন ভ্যান নিয়ে মহাসড়কে অবস্থান নেয়। মহাসড়ক থেকে মহল্লার সংযোগ পয়েন্টগুলোয়ও তারা অবস্থান নেয়। সকাল পৌনে ১০টার দিকে শিমরাইলে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ ও জেলা বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল আমিন শিকদারের নেতৃত্বে দুই থেকে আড়াইশ’ নেতাকর্মী মিছিল নিয়ে মহাসড়কে অবস্থান করার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের ধাওয়া করে।

পুলিশের ধাওয়া খেয়ে নেতাকর্মীরা পার্শ্ববর্তী মহল্লার ভেতরে চলে যান। সেখান থেকে পুলিশ সোয়েব ও ইয়াছিন নামে যুবদলের দুই কর্মীকে আটক করে। সাইনবোর্ড এলাকা থেকে মহানগর বিএনপির সহসভাপতি অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান, অ্যাডভোকেট আনোয়ার হোসেন প্রধান ও অ্যাডভোকেট মাঈনউদ্দিন নামে ৩ জনকে আটক করেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। সকাল ১০টা ২৬ মিনিটে খালেদা জিয়ার গাড়িবহর সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল অতিক্রম করে।

রূপগঞ্জ-
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে পুলিশি বাধায় বিএনপির নেতাকর্মীরা ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে দাঁড়িয়ে অভ্যর্থনা জানাতে পারেননি। অভ্যর্থনা জানাতে নেতাকর্মীরা ভুলতা এলাকায় অবস্থান নেয়ার চেষ্টা করলেও পুলিশ তাদের ধাওয়া দিয়ে সরিয়ে দেয়। তারাব বিশ্বরোড, রূপসী, বরপা ও ভুলতা এলাকায় পুলিশ প্রশাসন কঠোর অবস্থানে ছিল। সকাল থেকেই মহাসড়কে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের কোনো নেতাকর্মীকে অবস্থান নিতে দেয়নি।

খালেদা জিয়ার গাড়িবহর ভুলতা এলাকা অতিক্রমকালে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-অর্থবিষয়ক সম্পাদক মুস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া দিপু সমর্থিতরা অভ্যর্থনা জানাতে মহাসড়কে আসার চেষ্টা করলেও পুলিশি বাধার মুখে অভ্যর্থনা জানাতে পারেননি তারা। এ সময় পুলিশি ধাওয়ায় তারা গাউছিয়া কাপড়ের বাজারে দৌড়ে চলে যান। অপরদিকে, প্রতিটি স্পটে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের অবস্থান নিতে দেখা গেছে।

নরসিংদী-
বিএনপি নেতাকর্মীরা যেখানেই জড়ো হয়েছেন, সেখানেই পুলিশ ধাওয়া ও ধরপাকড় করছে বলে অভিযোগ করেন নরসিংদী জেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা। বেলা ১১টা ২০ মিনিটে খালেদা জিয়ার গাড়িবহর নরসিংদীর বেলানগরের জেলা কারাগার অতিক্রমকালে ‘নৌকা নৌকা, হিরু ভাই, হিরু ভাই’ বলে জুতা খুলে স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ করতে দেখা যায়। পুলিশ বেষ্টনীর মধ্যেই তারা জুতা প্রদর্শন করে। সামনের দিকে অগ্রসর হলে খবর আসে ভৈরবে দলীয় নেতাকর্মীদের ওপর হামলা হচ্ছে।

এ সময় খালেদা জিয়ার গাড়িবহর গতি কমিয়ে কামারটেক বাজারে পাঁচ মিনিট অবস্থান করে। খালেদা জিয়ার উপস্থিতি টের পেয়ে কারাবন্দি ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসানের পরিবারের স্বজন ও বিএনপি নেতাকর্মী ছুটে আসেন। এর মধ্যে চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত নিরাপত্তাকর্মীদের একটি টিম ভৈরবে যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে- এমন বার্তা পেয়ে খালেদা জিয়া বহর নিয়ে আবারও রওনা হন।

এদিকে বিএনপি আইনজীবীরা মহাসড়কের পাশে খালেদা জিয়াকে শুভেচ্ছা জানাতে চাইলে পুলিশ বিএনপি নেতাকর্মীদের ব্যানার-ফেস্টুন কেড়ে নেয়। বেলা সোয়া ১১টার দিকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নরসিংদী অতিক্রম করেন। এ সময় যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকনসহ বিএনপি নেতারা খালেদা জিয়াকে শুভেচ্ছা জানান।

বিএনপির মিছিল করার সময় বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া, জেলা বিএনপির সহসভাপতি সুলতান উদ্দিন মোল্লা, শহর বিএনপির সভাপতি গোলাম কবির কামালসহ ১০ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়। পরে দুপুর ১টার দিকে অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়াকে ছেড়ে দেয় পুলিশ।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও জেলা বিএনপির সভাপতি খায়রুল কবির খোকন বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মাজার জিয়ারতের গাড়িবহরের সামনে স্লোগান দেয়া অত্যন্ত দুঃখজনক। এটা রাজনৈতিক সংস্কৃতির বহির্ভূত।

ভৈরব-
ভৈরব অতিক্রম করার সময় পুলিশ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, রাস্তায় বিশৃঙ্খলা, ইটপাটকেল নিক্ষেপ, লাঠিচার্জ, টিয়ারগ্যাস, গুলি ও গ্রেফতারের ঘটনা ঘটে। কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম, ভৈরব উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. রফিকুল ইসলাম, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম সম্পাদক বাহার আহমেদ, জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক তারিকুজ্জামান পার্নেলকে পুলিশ গ্রেফতার করে। সংঘর্ষে বিএনপি নেতাকর্মীসহ ভৈরব থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মোখলেছুর রহমানসহ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা আহত হন।

দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে খালেদা জিয়া ঢাকা থেকে মহাসড়কে ভৈরব বাসস্ট্যান্ড এলাকা অতিক্রম করেন। এর আগেই স্থানীয় বিএনপির শত শত নেতাকর্মী ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ভৈরবের রাস্তার পাশে জড়ো হতে থাকেন। এ সময় মহাসড়কে টোলপ্লাজা পর্যন্ত শতাধিক পুলিশ অবস্থান নিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের রাস্তায় জড়ো হতে বাধা দেয়।

একপর্যায়ে জেলা বিএনপির সভাপতি শরীফুল আলমের নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা ব্যারিকেড ভেঙে সামনে অগ্রসর হন। এ সময় তাদের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। পুলিশ ১৭ রাউন্ড রাবার বুলেট ও ৯ রাউন্ড টিয়ারগ্যাস ছোড়ে। খালেদা জিয়ার আগমন উপলক্ষে ভৈরবের বাসস্ট্যান্ড এলাকায় সব দোকানপাট বন্ধ করে দেয় পুলিশ। এ সময় সড়কে যানজট সৃষ্টি হয়। দুপুর সাড়ে ১২টায় খালেদা জিয়া ভৈরব টোলপ্লাজা অতিক্রম করলে গ্রেফতারদের মুক্তির দাবিতে শত শত বিএনপি নেতাকর্মী স্লোগান দিতে থাকেন।

চুনারুঘাট-
হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার শায়েস্তাগঞ্জ নতুন ব্রিজ এলাকায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পথসভার মঞ্চ ও মাইক গুটিয়ে দিয়েছে পুলিশ। অনুমতি না থাকায় দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নতুন ব্রিজ পয়েন্টে খালেদা জিয়া পথসভার মঞ্চটি গুটিয়ে দেয়া হয়েছে। ফলে নেতাকর্মীরা খালেদা জিয়াকে আর মঞ্চে নামাতে পারেননি।

এদিকে বেলা আড়াইটায় খালেদা জিয়া শায়েস্তাগঞ্জ নতুন ব্রিজ অতিক্রম করার সময় শত শত নেতাকর্মী দাঁড়িয়ে তাকে অভিনন্দন জানান।

সড়কপথে খালেদা জিয়ার সিলেট সফরকে কেন্দ্র করে শায়েস্তাগঞ্জ পয়েন্টে পথসভা মঞ্চ তৈরি করে জেলা বিএনপি। সকাল থেকেই খণ্ড খণ্ড মিছিলে উত্তাল হয়ে ওঠে সভাস্থল শায়েস্তাগঞ্জ। দলীয় প্রধানকে স্বাগত জানাতে হাজার হাজার নেতাকর্মীর ঢল নামে মহাসড়কের দুই পাশে।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন- কেন্দ্রীয় বিএনপির সমবায়বিষয়ক সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জিকে গউছ, সাবেক এমপি শাম্মী আক্তার, যুগ্ম সম্পাদক মিজানুর রহমান চৌধুরী, ইসলাম তরফতার তনু, চুনারুঘাট উপজেলা বিএনপির সভাপতি সৈয়দ লিয়াকত হাসান, সেক্রেটারি প্রফেসর মোজাম্মেল হক তালুকদার, সাংগঠনিক সম্পাদক শামছুল হক তালুকদার, ছাত্রদল নেতা আবু নাইম হালিমসহ শত শত নেতাকর্মী।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-
খালেদা জিয়া সিলেট যাওয়াকে কেন্দ্র করে পথে পথে বাধা দিয়েছে পুলিশ। তারপরও অনেকটা গোপনীয়ভাবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মালিহাতায় জেলা বিএনপি নেতাকর্মীরা অবস্থান করেন। সোমবার দুপুর পৌনে ১টায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সীমানা অতিক্রম করেন খালেদা জিয়া। এ সময় তাকে স্বাগত জানান বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির অর্থনীতি বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার খালেদ হোসেন মাহবুব শ্যামল, জেলা বিএনপি সভাপতি হাফিজুর রহমান মোল্লা কচি, সাধারণ সম্পাদক জহিরুল হক খোকন, বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যতম সদস্য ও সাবেক ছাত্রদল নেতা শেখ মোহাম্মদ শামীম, কৃষক দল কেন্দ্রীয় কমিটি সদস্য নাছির উদ্দিন হাজারিসহ বিপুলসংখ্যক জেলা বিএনপির নেতাকর্মী। এ সময় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান।

সকাল থেকে দলের নেতাকর্মীরা ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে জড়ো হলে পুলিশ তাদের সরিয়ে দেয়। তার সফরকে কেন্দ্র করে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিভিন্ন পয়েন্টে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে ১৩ বিএনপি নেতাকর্মীকে আটক করা হয়।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া অংশে হাইওয়ে হোটেল বন্ধ-
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে বিলাসবহুল হাইওয়ে হোটেল উজানভাটি ও রাজমণি পুলিশ বন্ধ করে দেয়। হাইওয়ে হোটেলের সামনে লাল নিশান উড়িয়ে সামনে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। হোটেল দুটি একটি উজানভাটি মালিক আশুগঞ্জ উপজেলা বিএনপি সভাপতি আবু আসিফ। অন্যটির মালিক আশুগঞ্জ বন্দর জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. সোহরাব মিয়া।

এ দুটি হোটেল বিএনপি নেতা কুমিল্লা জেলার বুড়িচং উপজেলা চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমান লিজ নিয়ে পরিচালনা করেন। এ ব্যাপারে আশুগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বদরুল আলম তরফদার  জানান, গ্যাস সংকটের কারণে হোটেলটি বন্ধ রয়েছে। নিরাপত্তার কারণে মোতায়েন করা হয়েছে পুলিশ। আশুগঞ্জ : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে তিন বিএনপি কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। এর আগে রাস্তায় ব্যাপক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করে জেলা পুলিশ।

মাধবপুর-
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সিলেটে মাজার জিয়ারতে যাওয়ার পথে বৃহত্তর সিলেটের প্রবেশদ্বার মাধবপুরে বিভিন্ন পথে কয়েক হাজার নেতাকর্মী মহাসড়কের দু’পাশে ব্যানার-ফেস্টুন হাতে দাঁড়িয়ে স্বাগত ও শুভেচ্ছা জানান। এ সময় খালেদা জিয়া গাড়ির ভেতর থেকে হাত নাড়িয়ে শুভেচ্ছা জানান।
দুপুর ১টা ১৮ মিনিটে বিএনপি চেয়ারপারসন শতাধিক গাড়িবহর নিয়ে মাধবপুর উপজেলা সদরে প্রবেশ করেন। উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি সৈয়দ মো. শাহজাহানের নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা দলীয় নেত্রীকে স্বাগত জানান।

নবীগঞ্জ-
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নবীগঞ্জ উপজেলার আউশকান্দি কিবরিয়া চত্বরে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার পথ সভা ভণ্ডুল করেছে পুলিশ। কিবরিয়া চত্বরে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা এ পথসভার আয়োজন করেছিল। এজন্য কিবরিয়া চত্বরে একটি সভামঞ্চ তৈরি করা হয়। এদিকে সকাল থেকে বিএনপির নেতাকর্মীরা চত্বরে জড়ো হয়ে অবস্থান নিলে পুলিশ এসে প্রশাসনের অনুমতি না নিয়ে মঞ্চ তৈরি করার কারণে তাদের মঞ্চ ও মাইক খুলে নেয়ার নির্দেশ দিলে নেতাকর্মীরা মঞ্চ ও মাইক খুলে নেন। এতে পথসভা ভণ্ডুল হয়ে যায়।

এ সময় রাস্তায় দাঁড়িয়ে নবীগঞ্জ-বাহুবলের সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ শেখ সুজাত মিয়া, পৌর মেয়র আলহাজ ছাবির আহমদ চৌধুরী, উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান সেফু শুভেচ্ছা জানান। মনোনয়ন প্রত্যাশী যুক্তরাষ্ট্র শিকাগো বিএনপির সভাপতি শাহ মুজাম্মেল নান্টুর পক্ষ থেকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের জনতার বাজারে বিএনপির আরেক অংশ শুভেচ্ছা জানায়।

বাহুবল (হবিগঞ্জ)-
হবিগঞ্জের বাহুবলের মহাসড়কের দু’পাশে ফেস্টুন-ব্যানার হাতে কয়েক হাজার নেতাকর্মী দাঁড়িয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে স্বাগত ও শুভেচ্ছা জানান। বাহুবল উপজেলা বিএনপির সভাপতি আকাদ্দছ মিয়া বাবুলের পরিচালনায় উপস্থিত ছিলেন বাহুবল নবীগঞ্জের সাবেক এমপি শেখ সুজাত মিয়া, যুবদল সভাপতি শামছুল আলম প্রমুখ।

মৌলভীবাজার-
খালেদা জিয়াকে অভিনন্দন জানাতে সকাল থেকে মৌলভীবাজার, নবীগঞ্জ ও সিলেটের বালাগঞ্জের বিএনপির নেতাকর্মীরা তিন জেলার মিলনস্থল শেরপুরে জড়ো হলে পুলিশি বাধার মুখে পড়ে। বিকাল ৩টার দিকে মৌলভীবাজারের শেরপুর এলাকা অতিক্রম করেন বিএনপি নেত্রী। পুলিশ স্থানে স্থানে চেকপোস্ট বসিয়ে নেতাকর্মীদের গাড়িতেও তল্লাশি চালায়। যার কারণে ভিন্ন পথ দিয়ে নেতাকর্মীরা শেরপুরে যান।


সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন

Wordbridge School
Link copied!