• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

খালেদার অসুস্থতা নিয়ে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ


নিজস্ব প্রতিবেদক জুন ১১, ২০১৮, ০৭:৫৯ পিএম
খালেদার অসুস্থতা নিয়ে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

ঢাকা : বিএনপি চেয়ারপারসন কারাবন্দি খালেদা জিয়ার অসুস্থতার ‘ধরন’ ও চিকিৎসা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগ ও তাদের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি নেতাদের মধ্যে রোববার (১০ জুন) দিনভর চলেছে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ ।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় গত ৮ ফেব্রুয়ারি পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হওয়ার পর থেকে পুরান ঢাকার বিশেষ কারাগারে বন্দি রয়েছেন ৭৩ বছর বয়সী সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। সেই থেকে তার স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে আসছে বিএনপি। কারা কর্তৃপক্ষ তার চিকিৎসা দিতে চায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে। তবে খালেদার চাওয়া বেসরকারি হাসপাতাল ইউনাইটেডে। এ দ্বন্দ্বেরর সুরাহা না হওয়ায় গতকাল কথা থাকলেও তাকে কোনো হাসপাতালেই নেওয়া হয়নি।

বিএনপির দাবি, খালেদা জিয়ার মাইল্ড স্ট্রোক হয়েছে; তার চিকিৎসায় অবহেলা করা হচ্ছে। আর ‘শত নাগরিক’র তরফ থেকে তার চিকিৎসায় কালক্ষেপণের অভিযোগ তুলে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। প্রতিবাদে আগামীকাল তারা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এদিকে আওয়ামী লীগের তরফ থেকে বলা হয়েছে, শরীরে চিনি-পানি শূন্যতা থেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন খালেদা। তাকে যথাযথ সেবা দেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম অভিযোগ করেছেন, জামিন নেওয়ার জন্য খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা মিথ্যাচার করছেন।  

গত বৃহস্পতিবার বিএনপি নেত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পরে তারা গণমাধ্যমকে বলেন, গত ৫ জুন খালেদা জিয়া মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে, তার মাইল্ড স্ট্রোক হয়েছিল। তার পা ফুলে গেছে। চোখও লাল হয়ে গেছে। ক্ষীণ জ্বরে ভুগছেন তিনি। এ পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হলে বড় ধরনের ক্ষতি হবে পারে বলে আশঙ্কা তাদের। খালেদার ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা এমন আশঙ্কা প্রকাশ করার পরদিন বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ জানান বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

নেত্রীর সুচিকিৎসার দাবি আদায়ে ও তার ‘চিকিৎসায় অবহেলার’ প্রতিবাদে দলের তরফ থেকে গতকাল সারা দেশের জেলা ও মহানগরীতে বিক্ষোভ হয়েছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ইউনাইটেড হাসপাতালে নেওয়ার দাবি জানিয়েছে বিএনপিপন্থি চিকিৎসকদের সংগঠন ড্যাব।  

এদিকে গতকাল সকালেই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, খালেদা জিয়ার কোনো মাইল্ড স্ট্রোক হয়নি। তার রক্তের সুগার ফল করেছিল। চিকিৎসকরা মনে করলে তাকে কারাগারের বাইরে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা দেওয়া হবে।  

মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়ার বিষয়ে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, খুব সম্ভবত খালেদা জিয়া রোজা রেখেছিলেন। বেলা সাড়ে ৩টার দিকে হেলে পড়ে যাচ্ছিলেন। তখন তার সঙ্গে থাকা গৃহপরিচারিকা ফাতেমা তাকে ধরে ফেলেন। তাৎক্ষণিকভাবে জেলের চিকিৎসকরা তার অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন। খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার বিষয়ে সরকার ‘কনসার্ন’ এবং তার মাইল্ড স্ট্রোক হয়েছে কি না, তা পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হবে বলেও জানান আইনমন্ত্রী।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী স্বাস্থ্য পরীক্ষার পরই বোঝা যাবে তার কী হয়েছে। কারা চিকিৎসকরা খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের খোঁজ-খবর নিয়েছেন। স্ট্রোকের কথা তারা বলছেন না। অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, শুধু জামিন নেওয়ার ক্ষেত্রে সহানুভূতি পেতে বিএনপির আইনজীবীরা মিথ্যাচার করছেন। খালেদা জিয়ার অজ্ঞান হওয়ার বিষয়টি সঠিক নয়।

আমি রোববার (১০ জুন) মামলার শুনানির আগে আইজি প্রিজনের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলেছি। তিনি বলেছেন, খালেদা জিয়া ৫ জুন ইফতারের আগ মুহূর্তে সুগার কম থাকায় দাঁড়ানো থেকে একটু ঘুরে গিয়েছিলেন। অজ্ঞান হওয়ার কথাটি সঠিক নয়। বরং রোজার কারণে তার সুগার কমে গিয়েছিল।

এদিকে গতকাল দিনভর আলোচনা ছিল খালেদা জিয়াকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে। আইনমন্ত্রীও বলেছিলেন সে কথা। কিন্তু সন্ধ্যায় আইজি প্রিজনস বলেন, বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে নেওয়ার কথা জানালে খালেদা জিয়া বলেন, ‘আমি ওই হাসপাতালে যাব না। আর কেন যাব না, তার কোনো ব্যাখ্যা দিতেও বাধ্য নই।’

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!