• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

খালেদার সফর: গুরুত্ব দিচ্ছে আ. লীগ


নিজস্ব প্রতিবেদক নভেম্বর ১, ২০১৭, ০৯:৪৮ পিএম
খালেদার সফর: গুরুত্ব দিচ্ছে আ. লীগ

ঢাকা: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সড়কপথে ঢাকা থেকে কক্সবাজারে গিয়ে রোহিঙ্গাদের ত্রাণ বিতরণ কর্মসূচিকে ঘিরে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য চলছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিরোধী দল বিএনপির মধ্যে। 

এর আগে বিএনপি দীর্ঘদিন ঢাকাসহ সারাদেশে কোথাও প্রায় এক বছরেরও বেশি সময় ধরে জনসভা বা সমাবেশের অনুমতি পায়নি, এমন কি ছোটখাটো কর্মসূচিতেও অনুমতি মিলছিল না দলটির। সে দলেরই চেয়ারপারসন সম্প্রতি লন্ডন থেকে ঢাকায় ফেরার পর শোডাউন করেছে নেতাকর্মীরা। এরপরেই ঢাকা থেকে অনেকটা রোডমার্চের মতোই কক্সবাজারে গেলেন খালেদা জিয়া। প্রশাসনের তরফ থেকে বাধাও দেয়া হলো না। তাহলে কি সরকার ও ক্ষমতাসীন দল খালেদা জিয়ার প্রতি এক ধরনের নমনীয়তার ইঙ্গিত দিচ্ছে? 

এদিকে, লন্ডন থেকে ফিরেই খালেদা জিয়ার কক্সবাজার সফর আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি ধরে নিয়ে নিজেদের প্রস্তুতি জোরদার করছে আওয়ামী লীগ। দলটি আগে থেকে জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করলেও তা গতি পায়নি। খালেদা জিয়ার এ তৎপরতার কারণে এখন নড়েচড়ে বসছে ক্ষমতাসীন দল। এখন তাদের লক্ষ্য আসন্ন ছয় সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জয় পাওয়া।

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া প্রায় তিন মাসের সফর শেষে গত মাসের শেষ দিকে যখন লন্ডন থেকে ঢাকায় ফিরেছিলেন, তখন তাকে স্বাগত জানিয়েছিল দলের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী ও সমর্থক। তাদের এক ধরনের ‘শোডাউনে’র মধ্য দিয়েই বিমানবন্দর থেকে গুলশানের বাসায় পৌঁছেছিলেন তিনি। তার ফেরার আগে কয়েকটি মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়না জারি হয়েছিলো এবং তিনি ঢাকায় ফিরে জামিনের আবেদন করতে যখন আদালতে যান সেখানে আসা-যাওয়ার পথেও হাজির ছিল দলের বিপুল সংখ্যক কর্মী।

এরপর রোহিঙ্গাদের পরিদর্শন ও ত্রাণ বিতরণের জন্য ঢাকা থেকে কক্সবাজার রওনা হলেন খালেদা জিয়া। পথে পথে বিএনপির অসংখ্য নেতাকর্মীর উপস্থিতিও ছিল চোখে পড়ার মতো। যে বিএনপিকে ঢাকায় সমাবেশের অনুমতিই দেয়া হচ্ছিল না দীর্ঘ সময়। সেই বিএনপিকে হঠাৎ করে বাধা ছাড়াই এসব কর্মসূচি পালন করতে দেয়াটা কি সরকারের কোনও ধরনের নমনীয়তার বহিঃপ্রকাশ? হলে সেটির কারণই বা কী?

এমন প্রশ্নের জবাবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ একটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে বলছেন, তারাও চান বিএনপি তাদের কর্মসূচি পালন করুক। কিন্তু অশান্তির কিছু হোক সেটা তারা চান না। তিনি বলেন, নির্বাচন সামনে রেখে বিভিন্ন দলের কর্মসূচি বাড়বে এটাই স্বাভাবিক। সরকার এ বিষয়ে সব দলকে সহায়তা করবে। কিন্তু কোনও ঘটনা ঘটিয়ে বা নাটক করে ইস্যু বাড়ানোর চেষ্টা করলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া ছাড়া বিকল্প থাকবে না।

যদিও ঢাকায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা খালেদা জিয়ার এমন সমালোচনা করছেন যাতে বলা হচ্ছে ত্রাণ দেয়া নয়। বরং রাজনৈতিকভাবে লাভবান হতে, অর্থাৎ জনসংযোগে বেরিয়েছন খালেদা জিয়া। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সমর্থক অনেকেই দাবি করছেন যে, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে সাবেক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে খালেদা জিয়া যেন সব সুবিধাই পান সেটি নিশ্চিত হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই।

আবার কক্সবাজার যাওয়ার পথে ফেনীতে খালেদা জিয়ার গাড়িবহরের একটি অংশে সাংবাদিকদের গাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটলেও বিএনপি নেত্রী বা তার সহযোগীরা পুরো কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন নির্বিঘ্নেই। এমন কি কক্সবাজারেও রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো ঘুরে দেখা এবং ত্রাণ বিতরণও তিনি করেছেন নির্বিঘ্নেই। 

এমন প্রশ্নের জবাবে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল মোস্তফা বলেন কেন্দ্র থেকে বলা হয়েছে, পাল্টা কোন কর্মসূচি না দিতে। তার কথায়, আমরা নিজেরাও সহনশীল। আমরা পাল্টা কিছু করতে চাইনি। তবে মানুষ বুঝেছে এটি ছিল খালেদা জিয়ার নির্বাচনী কর্মসূচি।

ঢাকার নয়াপল্টনে বিএনপি কার্যালয়ের দপ্তর বিভাগ ও বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের তথ্য অনুযায়ী গতবছর পহেলা মে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শ্রমিক সমাবেশের পর থেকে প্রায় দেড় বছর ধরে তাদের কোনও ধরনের সভা সমাবেশের অনুমতি দিচ্ছিল না প্রশাসন। ঢাকার বাইরে কয়েকটি স্থানে কর্মসূচিতে গিয়ে নানাভাবে বাধাপ্রাপ্ত হয়েছেন দলটির কয়েকজন সিনিয়র নেতা। ঢাকায় কিছু ঝটিকা মিছিল সমাবেশেও পুলিশি হামলার অভিযোগ প্রায়শই পাওয়া গেছে দলের পক্ষ থেকে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও নিউজ টুডে পত্রিকার সম্পাদক রিয়াজউদ্দিন আহমেদ বলছেন নির্বাচনকে সামনে রেখে একটি স্বাভাবিক রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরির একটি উদ্যোগের অংশ হিসেবে সরকারের এ নমনীয়তা একটি পরীক্ষা নিরীক্ষাও হতে পারে। তিনি বলেন, এবারো যদিও আগের মতোই নির্বাচন হয়, বিরোধী দল মাঠে আসতে না পারে তাহলে সরকারের জন্য অসুবিধা হতে পারে। সে বোধ থেকেই হয়তো একটি পলিটিক্যাল স্পেস বিরোধী দলকে দেয়ার বিষয়টা সরকার চিন্তা করেছে। প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন দেখতে না চাইলে তো সবাইকে রাজনীতির অধিকার দিতে হবে। তবে সে অধিকার ঠিক কতদিন বিরোধী দল হিসেবে বিএনপি উপভোগের সুযোগ পায় সেটিও পর্যবেক্ষণের বিষয় বলে মন্তব্য করেন রিয়াজউদ্দিন আহমেদ।

নড়াচড়া আওয়ামী লীগে:

আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, বিদেশ থেকে ফিরেই খালেদা জিয়া এভাবে মাঠে নেমে পড়বেন, এটা আওয়ামী লীগ আগে থেকে আঁচ করতে পারেনি। আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করছেন, সরকার রোহিঙ্গা সংকটসহ নানা পরিস্থিতি মোকাবিলায় কয়েক মাস ধরে ব্যস্ত আছে। এই সুযোগ নেয়ার জন্যই তড়িঘড়ি করে মাঠে নেমেছে বিএনপি। দলটির পরবর্তী পদক্ষেপ কী হয়, এখন সেটা বোঝার চেষ্টা করছে সরকার।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রাজ্জাক একটি গণমাধ্যমকে বলেন, বিএনপি উল্টাপাল্টা কথা বলবে। কিন্তু তারা নির্বাচনে অংশ নেবে। এ জন্যই খালেদা জিয়া লন্ডন থেকে এসেই রোহিঙ্গাদের ত্রাণ দেয়ার নামে ‘শোডাউনের’ চেষ্টা চালিয়েছেন। 

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগও মাঠে আছে, নির্বাচনের প্রস্তুতিও চলছে। এ বিষয়ে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে রাজনীতি করার সুযোগ নেই। তবে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কোথাও গেলে মানুষ রাস্তায় নামবে, এটাই স্বাভাবিক। 

তিনি বলেন, স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে নির্বাচনী আবহ থাকাটাও স্বাভাবিক। তবে মূল বিষয় হচ্ছে মানুষ নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারবে কি না। এ বিষয়টি যত দিন মীমাংসা না হবে, বিএনপি তত দিন গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে এর মীমাংসার তৎপরতা চালিয়ে যাবে।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া লন্ডন যাওয়ার কিছুদিন পর থেকেই সরকারি দলের নেতারা বিভিন্ন বক্তব্যে বলছিলেন, খালেদা জিয়া আর ফিরবেন না। বিএনপির মাজা ভেঙে গেছে। বিএনপির আন্দোলন এখন টেমস নদীর পারে ইত্যাদি। আওয়ামী লীগের একজন কেন্দ্রীয় নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এখন মনে হচ্ছে খালেদা জিয়া লন্ডনে তিন মাস অবস্থান করে নানা ছক কষেছেন। দেশে ফিরে নিজের জানান দেয়ার তাগিদ অনুভব করেছেন।

প্রসঙ্গত, আগামী ডিসেম্বর মাসে রংপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচন। আগামী বছর এপ্রিলের মধ্যে গাজীপুর, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল ও সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী সূত্র জানায়, এর মধ্যে ছয় সিটির সম্ভাব্য প্রার্থী ঠিক করে ফেলেছে দলটি। তাদের কাজ করার জন্য নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে।

এছাড়া আওয়ামী লীগ দলীয় সূত্র জানায়, জাতীয় নির্বাচনের জন্য প্রার্থী বাছাইয়ে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা নানা সংস্থা দিয়ে তিন মাস অন্তর অন্তর জরিপ চালাচ্ছেন। নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবেই- এটা ধরে নিয়ে প্রস্তুতি নিতে মাঠপর্যায়ের নেতাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। 

সোনালীনিউজ/জেএ

Wordbridge School
Link copied!