• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

খালেদার সাজা রাজনৈতিক, বহির্বিশ্বে জানাবে বিএনপি


নিজস্ব প্রতিবেদক ফেব্রুয়ারি ১১, ২০১৮, ০৫:৩৬ পিএম
খালেদার সাজা রাজনৈতিক, বহির্বিশ্বে জানাবে বিএনপি

ঢাকা: জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দণ্ডিত হয়ে কারাগারে আছেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে পাঁচ বছর সাজা দেয়ার বিষয়টিকে ‘রাজনৈতিক ব্যঞ্জনায়’ বহির্বিশ্বে তুলতে ধরতে চায় বিএনপি। ইতোমধ্যে নানামুখী তৎপরতা শুরু হয়েছে। একই সঙ্গে দেশের অভ্যন্তরেও আগামী ডিসেম্বরে অনুষ্ঠেয় সাধারণ নির্বাচনে সমমনা ও প্রগতিশীল রাজনৈতিক-সামাজিক সংগঠনগুলোর সমর্থন আদায়ে সক্রিয় তৎপরতা চলছে।  

বিএনপি চেয়ারপারসনের শাস্তিকে ঘিরে বিদেশের দলীয় নেতাকর্মীরা স্থানীয় দূতাবাসের সামনে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। আর নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের দাবির প্রতি সমর্থন পেতে পর্দার অন্তরালে দেনদরবার ও তদবির করছেন দলের কূটনীতিক কোরের সদস্যরা। লন্ডন থেকে প্রতিবেশী ইউরোপীয় দেশসহ বিশ্বের প্রভাবশালী একাধিক রাষ্ট্রের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন এক দশক ধরে লন্ডন প্রবাসী নবনিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। খালেদাপুত্র তারেক একই দুর্নীতির মামলায় মায়ের সঙ্গে দোষী সাব্যস্ত হয়ে ১০ বছর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছেন। ইতোপূর্বে অর্থপাচার মামলায় তাকে সাত বছর কারাদণ্ড দেয়া হয়। বিচার এড়ানো তারেকের বিরুদ্ধে বিচারিক আদালতের গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি রয়েছে।       

বিএনপিনেত্রী দুর্নীতির মামলায় পরাজিত হলেও বিভিন্ন মহল থেকে সহানুভূতি প্রকাশ করে বিবৃতি ও প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে। রায় নিয়ে প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ‘আমরা রাজনৈতিক ও দলীয় বিবেচনার ঊর্ধ্বে সব দুর্নীতিবাজের বিচার চাই এবং দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করতে চাই। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা যদি রাজনৈতিক মদতে না হয়ে প্রকৃত দুর্নীতির কারণে হয়ে থাকে, তাহলে সরকারকে তার নিজ দলের অগণিত দুর্নীতিবাজের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে তার প্রমাণ দিতে হবে।’ 

এমনকি বেসরকারি টিভি টকশোতে আলোচকদের বক্তব্যেও মিশ্র প্রতিক্রিয়া এসেছে। কারো কারো মতে, এই রায় আগামী নির্বাচনে প্রভাব পড়বে। সরকারের অনুকূলে যাবে না। রায়কে ঘিরে বিভিন্ন মহলের বক্তব্য দৃশ্যত বিএনপির জন্য আশীর্বাদ। 

অন্যদিকে খালেদা জিয়াকে সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠানোর বিষয়ে শুক্রবার বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশি গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

এদিকে রায়-উত্তর উদ্ভূত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে জাতিসংঘ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তারা আইনের নিরপেক্ষ প্রয়োগের আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি। বাংলাদেশ ভ্রমণে নিজ নিজ দেশের নাগরিকদের জন্য সতর্কতা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া। দেশগুলোর ঢাকাস্থ দূতাবাস ও হাইকমিশনের ওয়েবসাইটে জারি করা এ সতর্কবার্তায় বাংলাদেশে থাকা নাগরিকদের জনসমাগম এড়িয়ে চলার অনুরোধ জানানো হয়। স্থানীয় গণমাধ্যমের ওপর নজর রাখার পরামর্শও দেয়া হয়।

দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়ের করা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার বিচার শুরুর পর থেকেই বিএনপি এটাকে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে দাবি করে আসছিল। অবশ্য আইনি লড়াইয়ে তাদের বাঘা বাঘা আইনজীবী অংশ নিলেও শেষ রক্ষা হয়নি। 

গত ৮ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার রায় ঘোষণার পরই তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনে বিক্ষোভ ও ভাঙচুর করেছে স্থানীয় বিএনপি। পরে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, জাপান, কাতার, ফিনল্যান্ড, দুবাই, ফ্রান্সসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বাংলাদেশ দূতাবাসগুলোয়।   

এক দশক ধরে বিভিন্ন সময় দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে চা-চক্রে নিয়মিত মিলিত হয়ে আসছেন বিএনপির কূটনৈতিক কোরের সদস্যরা। এসব ঘরোয়া বৈঠকে তারা একটি বিষয় বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরেছেন, খালেদা জিয়াসহ বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে সব মামলাই রাজনৈতিক হয়রানিমূলক। গত মাসের শেষদিকে দলের মহাসচিব বিশ্বের ৩০টি দেশ, ২০টি বিদেশি সংস্থার প্রতিনিধিকে ডেকে মামলাসহ জাতীয় নির্বাচন নিয়ে তাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করেন।

এ প্রসঙ্গে বিএনপির কূটনীতিক কোরের সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহান বলেন, ‘শুধু এই বিষয়টি নিয়ে নয়; রাজনৈতিক বিবেচনায় রায়, আগামী নির্বাচনসহ সমসাময়িক প্রসঙ্গ নিয়ে আমরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। এ দেশে তাদেরও বিনিয়োগ আছে, তারা আমাদের কাছে পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চায়।

সোনালীনিউজ/এমটিআই/জেএ

Wordbridge School
Link copied!