• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

খেলাধুলা রুখবে মাদকাসক্তি-জঙ্গিবাদ


নিজস্ব প্রতিবেদক অক্টোবর ২১, ২০১৮, ০৮:৪৪ পিএম
খেলাধুলা রুখবে মাদকাসক্তি-জঙ্গিবাদ

ঢাকা : মাদকাসক্তি ও জঙ্গিবাদ থেকে তরুণদের রক্ষায় পড়াশোনার পাশাপাশি তাদেরকে খেলাধুলা ও সংস্কৃতি চর্চায় সম্পৃক্ত করার উপর জোর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রোববার (২১ অক্টোবর) সকালে গণভবনে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘ছেলেমেয়েদের যত বেশি খেলাধুলা, সংস্কৃতি চর্চায় সম্পৃক্ত করতে পারব, তত বেশি তাদের চরিত্র আরো অনেক দৃঢ় হবে। সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হবে। মাদক অথবা জঙ্গি এ ধরণের কোনো বিপথে যাবে না । সেজন্য তাদের আমরা খেলাধুলার দিকে আরো সম্পৃক্ত করতে চাই।’

অনুষ্ঠানে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের একটি প্রকল্পের আওতায় ৬৬টি মিনি স্টেডিয়াম, বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (বিকেএসপি) কমপ্লেক্সে একটি মাল্টিস্পোর্ট ইনডোর কমপ্লেক্স ও ছয় জেলায় যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের উদ্বোধন করেন শেখ হাসিনা।

প্রধামন্ত্রী বলেন, ‘আমরা লেখাপড়ার উপর গুরুত্ব দেই। জাতিকে শিক্ষিত জাতি হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। শিক্ষার সাথে খেলাধুলা একান্তভাবে অপরিহার্য। খেলাধুলার সাথে শিশু-কিশোররা যত বেশি সম্পৃক্ত হবে, আমি মনে করি, তারা শারীরিকভাবে সুস্থ থাকবে, মানসিকভাবে দৃঢ়চেতা হবে, একটা মনোবল তারা ফিরে পাবে এবং দেশ ও জাতির জন্য গৌরব বয়ে আনবে।’

প্রতিটি উপজেলায় সারা বছর যেন ছেলেমেয়েরা খেলাধুলা করতে পারে সেজন্য একটি করে ‘মিনি স্টেডিয়াম’ নির্মাণের পরিকল্পনার কথাও জানিয়ে তিনি বলেন, ‘খেলাধুলার সাথে ছেলেমেয়েরা সম্পৃক্ত থাকবে সেখানে। বিভিন্ন প্রতিযোগিতা হবে। ছোট্ট একটা জায়গা থাকবে, বাকি জায়গাটা সম্পূর্ণ উš§ুক্ত থাকবে, যেন রাস্তা দিয়ে হেঁটে গেলেও, কেউ দেখতে পারে সেখানে ছেলেমেয়েরা খেলাধুলা করছে।’

তৃণমূলের তরুণ ক্রীড়াবিদরা যেন জেলা ও জাতীয় পর্যায়ে অংশ নিতে পারে সেজন্য এই মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

এর মধ্যে ৪৯০টি মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণে সরকারের উদ্যোগ নেওয়ার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, বিভিন্ন উপজেলায় জায়গার অভাবে এই স্টেডিয়াম নির্মাণ করা যাচ্ছে না।

এলাকাবাসী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের উদ্দেশ্যে তিনি  বলেন, ‘আপনারা দয়া করে জায়গা নির্দিষ্ট করে দেন। এটা কিন্তু কোনো স্কুলের জায়গা, মাঠ, কলেজের মাঠে হবে না; এটা সম্পূর্ণ আলাদা জায়গায় হবে। এই কারণে ১২ মাস খেলাধুলা চলতে পারে, সব জায়গায় খেলাধুলার পরিবেশ সৃষ্টি হবে সেটা আমরা চাই।’

৯৬ সালে ক্ষমতাসীন হয়ে সাভারের বিকেএসপি ও যুব উন্নয়ন কেন্দ্র সফরে গিয়ে চরম দুরাবস্থা দেখার কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তরুণ ক্রীড়াবিদদের উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য সরকার দেশের প্রতিটি বিভাগীয় শহরে বিকেএসপির শাখা খুলবে। যুব উন্নয়ন কেন্দ্রগুলো সংস্কার করে তাতে সব ধরণের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা চালু করার কথা বলেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য, যুবকরা যেন নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে। সবাই উচ্চশিক্ষা নেবে তা নয়। প্রত্যেকের একটা প্রশিক্ষণ দেওয়া শিক্ষার সাথে সাথে তারা যেন নিজেদের আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারে। আমরা এখন প্রতিটি জেলায় যুব উন্নয়ন প্রশিক্ষণকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করে দেব। যে প্রতিষ্ঠান থেকে আমাদের যুবকরা ট্রেনিং নেবে। ট্রেনিং নিয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াবে। নিজের পরিবারকে সহযোগিতা করবে। দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখবে।’
সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের খুদে ক্রীড়ামোদীদের জন্য বিভিন্ন টুর্নামেন্ট চালু করেছে বলে অনুষ্ঠানে উল্লেখ করেন তিনি।

আন্তঃস্কুল প্রতিযোগিতা ব্যাপকভাবে আয়োজনের পাশাপাশি স্থানীয় দেশি খেলাধুলা যেন হারিয়ে না যায়, সেজন্য সেগুলোকে উৎসাহিত করা হচ্ছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

ক্রিকেট, দাবা, হকি খেলাগুলোতে ধারাবাহিক সাফল্যের পর আন্তর্জাতিক ফুটবলে বাংলাদেশের মেয়েদের সাফল্য ও স্পেশাল অলিম্পিকে প্রতিবন্ধীদের সাফল্যের প্রশংসাও করেন তিনি।

পরে তিনি জানান, প্রতিবন্ধী নাগরিকদের খেলাধুলার জন্য একাডেমি প্রতিষ্ঠা করবে সরকার।

৬টি সরকারি শারীরিক শিক্ষা কলেজ থেকে যুব ও যুব মহিলাদের ব্যাচেলর অব ফিজিক্যাল এডুকেশন শিক্ষা দেওয়া পর তাদের ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের জন্য ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচির আওতায় প্রশিক্ষণের সুযোগ রয়েছে বরে জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রথম থেকে চতুর্থ পর্যায় পর্যন্ত ৬৪টি উপজেলায় ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচি সমাপ্ত করেছি। পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তম পর্যায়ে আরো ৬৪টি উপজেলায় কাজও শুরু হয়েছে। কাজেই ন্যাশনাল সার্ভিসের মাধ্যমে তারা ট্রেনিং যা পাচ্ছে, সেটাই তাদের পুঁজি। কাজের শেষে তারা উপযুক্ত কাজ পেয়ে যাবে, সে ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি।’

তরুণ উদ্যোক্তারা ক্ষুদ্র পরিসরে নিজের ব্যবসায়িক কার্যক্রম যেন শুরু করতে পারে, সেজন্য কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার কথা উল্লেখ করেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘এখানে তাদের কোনো জামানত দিতে হবে না। বেকার হয়ে যেন ঘুরে বেড়াতে না হয়, সেজন্য এই ব্যবস্থা। বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি দিতে আমরা এই কর্মসংস্থান ব্যাংক তৈরি করে দিয়েছি।’

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!