• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

খোলস ছাড়তে পারছে না বিএনপির সংগঠনগুলো


সোনালী বিশেষ নভেম্বর ৭, ২০১৭, ১১:৩৮ এএম
খোলস ছাড়তে পারছে না বিএনপির সংগঠনগুলো

ঢাকা: নিজেদের সুনাম ধরে রাখার মতো ভূমিকা রাখতে পারছে না বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো। রাজপথের কর্মসূচি দূরে থাক তাদের খুব একটা উপস্থিতি নেই ‘ইনডোর’ কর্মসূচিতেও। দীর্ঘদিন কমিটি না হওয়া, নিজেদের মধ্যে দলাদলি আর পদের জন্য তদবির নিয়েই ব্যস্ত সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

বিএনপির অঙ্গ সংগঠন ৯টি ও সহযোগী সংগঠন ২টি। এগুলো হচ্ছে- যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মুক্তিযোদ্ধা দল, মহিলা দল, কৃষকদল, তাঁতি দল, মৎস্যজীবী দল, ওলামা দল, জাসাস আর ছাত্রদল এবং শ্রমিক দল হচ্ছে সহযোগী সংগঠন।

জানা গেছে, প্রশাসনের চাপ, মামলা, চেইন অব কমান্ড না থাকা, নতুন কমিটি হলে পদ পাওয়া না পাওয়ার আশঙ্কায় মেয়াদোত্তীর্ণ সংগঠনগুলোর সিংহভাগ পদধারী নেতা নিষ্ক্রিয় হয়ে আছেন।

সম্প্রতি মেয়াদোত্তীর্ণ ৪টি (স্বেচ্ছাসেবক দল, যুবদল, মহিলা দল ও জাসাস) সংগঠনের আংশিক কমিটি দেয়া হয়েছে। দায়িত্বপ্রাপ্তরা কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে না পারায় নতুন কমিটি দিয়েও আশানুরূপ ‘ফিডব্যাক’ পাচ্ছে না দল। তবে পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে পদ পেতে দলীয় কার্যালয়, নেতাদের বাসা বা অফিসে নেতাকর্মীদের আনাগোনা বেড়েছে।

তবে বিএনপি ও সংগঠনের নেতারা দাবি করছেন, সরকার হার্ড লাইনে, কোনো কর্মসূচি করতে অনুমতি চাইলে অনুমতি দেয় না। ঘরের মধ্যে কাউন্সিল বা বৈঠক করা যায় না। দশজন এক জায়গায় একত্র হয়েছে এমন খবর পাওয়া মাত্র পুলিশি অভিযান চলে। এমন অবস্থায় অনুমতি ছাড়া ওপেন কর্মসূচি করা অসম্ভব। গুম খুন হামলা মামলার মুখেও আন্দোলনের জন্য সংগঠনের নেতারা সংগঠন গোছানোর কাজ করে চলেছেন।

স্বেচ্ছাসেবক দল: গত বছরের ২৭ অক্টোবর শফিউল বারী বাবুকে সভাপতি ও আবদুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েলকে সাধারণ সম্পাদক করে মেয়াদোত্তীর্ণ জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের ৭ সদ্যসের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। অথচ এখন পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে পারেনি তারা।

স্বেচ্ছাসেবক দলের শফিউল বারী বাবু জানান, পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের কাজ চলছে, তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। খুব তাড়াতাড়ি করবো। তিনি বলেন, আমাদের টার্গেট হচ্ছে- বিএনপি এবং আমাদের সকল কর্মসূচি তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত পালনের সক্ষমতা অর্জন করা।

যুবদল: ২০১২ সালে মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার ৫ বছর পর গত ১৭ জানুয়ারি যুবদলের নতুন নেতৃত্ব বেছে নেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। সংগঠনটির দায়িত্ব দেয়া হয় সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম নীরব (সভাপতি) এবং সাবেক ছাত্রদল সভাপতি সুলতান সালাহউদ্দিন টুকুর (সাধারণ সম্পাদক) হাতে। তাদেরকে এক মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করতে বলা হলেও এখন পর্যন্ত তা করতে পারেননি তারা। দু’চারটি ইনডোর কর্মসূচি ও ঝটিকা মিছিল করলেও রাজপথের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ জোরালো নয়।

আলাপকালে দায়িত্বপ্রাপ্তরা জানিয়েছেন, কমিটি নিয়ে তারা কাজ করছেন শিগগিরই কমিটি ঘোষণা করা হবে। অনুমতি না দেয়া এবং প্রশাসনের মারমুখী আচরণের কারণে রাজপথের কর্মসূচি করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে চেষ্টা চলছে বলে জানান তারা।

মহিলাদল: গত ২৭ সেপ্টেম্বর আফরোজা আব্বাসকে সভাপতি ও সুলতানা আহমেদকে সাধারণ সম্পাদক করে জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের কেন্দ্রীয় কমিটি (সুপার ফাইভ) ঘোষণা করে বিএনপি।

উল্লেখ্য, বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাস আগের কমিটির সহ-সভাপতি ছিলেন। গঠনতন্ত্রে প্রতি তিন বছর পর কমিটি দেয়ার কথা থাকলেও পাঁচ বছর পর নতুন কমিটি গঠন করা হয়। এর আগে ১৭ বছর পর মহিলা দলের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল। তবে দলীয় সূত্র জানায়, অন্যান্য সংগঠনের চাইতে সাংগঠনিক ও কর্মসূচির দিক থেকে এগিয়ে রয়েছে মহিলাদল।

জাসাস: গত ১৯ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মামুন আহমেদকে সভাপতি করে বিএনপির অঙ্গসংগঠন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থার (জাসাস) আংশিক কমিটি ঘোষণা করে বিএনপি। ৩০ সদস্যের আংশিক কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক করা হয় হেলাল খানকে। তবে কমিটি ঘোষণার পরপরই বিক্ষোভ প্রদর্শন করে পদবঞ্চিতরা।

আন্দোলন-সংগ্রামে ছিলেন এমন নেতাকর্মীদের বাইরে রেখে বিশেষ মহলের পছন্দের লোকদের দিয়ে জাসাস কমিটি গঠিত হয়েছে- এমন অভিযোগে চলছে গৃহদাহ। বঞ্চিত নেতারা ঘোষণা দিয়েছেন, ‘পকেট কমিটি’ বাতিল করে ত্যাগী ও যোগ্যদের দিয়ে কমিটি না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। তারা যে কোনো মূল্যে দাবি আদায় করবেন বলেও ঘোষণা দিয়েছেন।

অন্যদিকে বর্তমান কমিটির নেতারা বলছেন, শুরুতে এমন বিক্ষোভ দেখা দিলেও শিগগিরই এটা থেমে যাবে। তবে তারা লাঞ্ছিত হওয়ার আতঙ্কে আছেন। বিক্ষোভের মুখে পড়তে হবে- এই আশঙ্কায় এখনো পর্যন্ত নতুন কমিটির নেতারা সহজে কার্যালয়মুখী হচ্ছেন না।

মুক্তিযোদ্ধা দল: ২০১৪ সালের ২ ডিসেম্বর ইশতিয়াক আজিজ উলফাতকে সভাপতি, এস এম শফিউজ্জামান খোকন সাধারণ সম্পাদক, মো. সাদেক আহমেদ খান সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং এ কে এম নুরুল আমিনকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের ১৯১ সদস্যের নির্বাহী কমিটি ঘোষণা করে বিএনপি। ২ বছর শেষে ১৬ তে মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার পর গত ফেব্রুয়ারিতে সাদেক খানকে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হয়।

সংগঠনের সভাপতি ইশতিয়াক জানিয়েছেন, সংগঠনে যারা আছেন সবাই মুক্তিযোদ্ধা। যতদিন যাচ্ছে সদস্য সংখ্যা কমছে। সারাদেশে ৫ হাজার নেতাকর্মীর মধ্যে ২ হাজার সক্রিয়। মুক্তিযোদ্ধা দল তাদের কাজ করে যাচ্ছে। আগামী এপ্রিলে নতুন কমিটি হবে।

কৃষকদল: বিএনপির অঙ্গ সংগঠন কৃষকদল শুধু নামেই। রাজপথে দলীয় এবং কৃষকদের অধিকার সম্পর্কিত কোনো আন্দোলন কর্মসূচিতে সংগঠনটির কোনো উপস্থিতি চোখে পড়ে না।

কৃষক দলের সর্বশেষ কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয় ১৯৯৮ সালের ১৬ মে। সেই হিসাবে বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে ১৮ বছর আগে। এখন পর্যন্ত কোনো কাউন্সিল করতে পারেনি কৃষকদল। ১১ মার্চ রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী কৃষকদলের কাউন্সিল করার সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও নানা কারণে সংগঠনটির চতুর্থ কাউন্সিল আলোর মুখ দেখবে না বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

মেয়াদোত্তীর্ণ মৎস্যজীবী দল, তাঁতী দলে ও ওলামা দলের কোনো কার্যক্রম নেই বললেই চলে। মিলাদ দোয়া আর যে কোনো দলীয় অনুষ্ঠানের শুরুতে কোরআন তেলাওয়াতের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ওলামদলের কার্যক্রম।

ছাত্রদল: বিএনপির সহযোগী সংগঠন ছাত্রদলের মেয়াদ শেষ হয়েছে ৩ মাস। এখন পর্যন্ত সারাদেশের সবগুলো কমিটি করতে পারেনি সংগঠনটি। ঘোষিত বেশিরভাগ কমিটি নিয়ে রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। রাজপথের আন্দোলন পাশ কাটিয়ে নতুন কমিটিতে পদ পদবীর জন্য তদবির নিয়েই ব্যস্ত নেতাকর্মীরা।
মেয়াদোত্তীর্ণ অপর সহযোগী সংগঠন শ্রমিকদলও অভন্তরীণ কোন্দলের বৃত্তে জর্জরিত।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!