• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

গণহত্যার নীলনকশা করে করাচি পাড়ি জমান জেনারেলরা


নিজস্ব প্রতিবেদক মার্চ ২৪, ২০১৭, ১০:৩১ এএম
গণহত্যার নীলনকশা করে করাচি পাড়ি জমান জেনারেলরা

ঢাকা : ২৫ মার্চের গণহত্যার নীলনকশা চূড়ান্ত করে আলোচনা অসমাপ্ত রেখে পশ্চিম পাকিস্তানি জেনারেলরা করাচির উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন ’৭১-এর এই দিনে। ১৫ মার্চ প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ঢাকা আসেন এবং ১৬ মার্চ প্রথম শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে বৈঠকে বসেন।

পরবর্তীকালে ইয়াহিয়া খানের সাথে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে এসে যোগ দেন উচ্চপদস্থ জেনারেলরা। তারও পরে আসেন পিপিপি নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টো। আলোচনার নামে প্রহসন চালিয়ে তারা মূলত এখানে বসে গণহত্যার নীলনকশা প্রণয়ন করে ১২ দিনের মাথায় ঢাকা ত্যাগ করলেন। পূর্ব পাকিস্তানের ন্যায্য দাবি মেনে নিয়ে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের পরিবর্তে হঠকারী শাসকগোষ্ঠী বন্দুকের নলের সাহায্যে প্রতিবাদী জনতার কণ্ঠ রোধ করার সিদ্ধান্ত নেয়। অনিবার্য করে তোলে পাকিস্তানের ভাঙন।

১৯৭১ সালের এই দিনেও বঙ্গবন্ধুর সাথে ইয়াহিয়ার বৈঠক হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু তা হয়নি। পশ্চিম পাকিস্তানের নেতারা সমস্যার কোনো সমাধান ছাড়াই এই বৈঠক বাতিল করে করাচি পাড়ি জমালেন।

২৫ মার্চ চূড়ান্ত গণহত্যা শুরুর আগে এ দিন থেকেই ঢাকার বাইরে অনেক জায়গায় হত্যা ও ধ্বংসলীলা শুরু করে পাকিস্তানি সৈন্যরা। সৈয়দপুরে পাকিস্তানি সেনাদের গুলিতে ১৬ জন নিহত হয়।

চট্টগ্রাম পোর্টের ১৭ নম্বর জেটিতে এমভি সোয়াত জাহাজ থেকে অস্ত্র নামানোর সময় বাংলাদেশের মানুষ তাতে বাধা দেয়। চট্টগ্রামে তারা ব্যারিকেড গড়ে তোলে। বাংলাদেশী সৈন্যরাও যোগ দেয় সাধারণ জনগণের সাথে। এখানে কয়েকজন পাকিস্তানি সৈন্যের গুলিতে নিহত হয়।

পাকিস্তানি নেতারা ঢাকা ত্যাগের পরপরই ২৫ মার্চ গণহত্যার ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের মিশনে নামেন এখানে অবস্থানরত উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তারা। জেনারেল খাদেম হোসেন রাজা ও রাও ফরমান আলী দু’টি হেলিকপ্টার নিয়ে সব ক’টি ক্যান্টনমেন্ট সফর করেন। তারা সেখানে গিয়ে ব্রিগেড-প্রধানদের নীলনকশা সম্পর্কে নির্দেশ দিয়ে বিকেলে ঢাকায় ফিরে আসেন।

তখন ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অধিনায়ক ছিলেন ব্রিগেডিয়ার মজুমদার। জরুরি বৈঠকের কথা বলে জেনারেল টিক্কা খান তাকে হেলিকপ্টারে করে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা নিয়ে আসেন। তার সাথে ছিলেন ক্যাপ্টেন আমিন আহমেদ চৌধুরী। তাদের ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে বন্দী করে রাখা হয়। এভাবেই এগিয়ে চলে ২৫ মার্চ গণহত্যা বাস্তবায়নের প্রস্তুতি।

আওয়ামী লীগ শেষ পর্যন্ত আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের পথ খুঁজতে থাকে। আওয়ামী লীগের নির্দেশে ড. কামাল হোসেন রাষ্ট্রের নাম কনফেডারেশন অব পাকিস্তান নামকরণের প্রস্তাব করেন। সরকারি দলের সদস্য বিচারপতি কর্নেল গিয়াস কনফেডারেশনের স্থলে ইউনিয়ন শব্দটি প্রতিস্থাপনের প্রস্তাব দেন। কিন্তু লে. জে. পীরজাদা চুক্তি স্বাক্ষরের সময় নামকরণ ঠিক করা হবে বলে জানান। তাজউদ্দীন আহমদ ও ড. কামাল হোসেন নাম ঘোষণার চূড়ান্ত সময় সম্পর্কে জানতে চান। টেলিফোনে চূড়ান্ত করা হবে বলে তাদের বলা হয়। কিন্তু সে টেলিফোন আর আসেনি। ২৫ মার্চ রাতে আসে নিরীহ মানুষের বুক ঝাঁজরা করা বুলেটের আঘাত।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!