• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

‘গরু-মহিষে অস্থির’ সৌদিপ্রবাসীরা!


প্রবাস ডেস্ক মার্চ ২৯, ২০১৭, ০৫:৪৭ পিএম
‘গরু-মহিষে অস্থির’ সৌদিপ্রবাসীরা!

ঢাকা: সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে আওয়ামী লীগের নামধারী ‘হাইব্রিড’ সালাউদ্দীন ফারুক নামের এক আদম বেপারিকে প্রতিষ্ঠিত করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন খোদ রাষ্ট্রদূত গোলাম মসিহ। সৌদি রাজতন্ত্রের দেশে প্রকাশ্যে রাজনীতি ‘নিষিদ্ধ’ হলেও রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ পাওয়া জাপা নেতা গোলাম মসিহ রাষ্ট্রদূত হবার পর কমিউনিটিকে ‘গোলাম’ বানাতে একের পর এক বিতর্কিত কর্মকান্ড করে যাচ্ছেন।

জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদের একান্ত আস্থাভাজন ‘সাবেক রাজনৈতিক সচিব’ এর ‘অনৈতিক’ কর্মকান্ডে ‘অস্থির’ সৌদিপ্রবাসীরা। রাষ্ট্রদূতের দোর্দন্ড প্রতাপে তার নাম উচ্চারণেও প্রবাসীদের ভয়। ‘মহিষ’ নামেই তিনি বেশি পরিচিতি পেয়েছেন বলে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সৌদি আরব সফরকালে মদীনায় প্রবাসীদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় আওয়ামী লীগের নামে সংগঠন করতে নিষেধ নিষেধ করেছেন। কিন্তু অসৎ উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য সালাউদ্দিন ফারুক নামের এক আদম বেপারিকে ‘গরু’ বানিয়ে রাষ্ট্রদূত গোলাম মসিহ আওয়ামী লীগের ‘নেতা’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন।

বিভিন্ন জাতীয় দিবস, ধর্মীয় দিবসসহ দূতাবাসের বিভিন্ন কর্মসূচিতে রাষ্ট্রদূতের ‘পার্টনার’ স্বঘোষিত আওয়ামী লীগ নেতা সালাউদ্দিন ফারুক। তিনি ৩০ বছর ধরে রিয়াদ আওয়ামী লীগের ‘কেন্দ্রীয়’ কমিটির সভাপতি। মূলত দূতাবাসের ‘দালালী’ আর আদম ব্যবসাই তার মূল পেশা। সৌদি রাজতন্ত্রের দেশে রাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়ায় ‘কেন্দ্রীয় কমিটি’ সৌদি আরবে আওয়ামী লীগের কোনো কমিটি দেয়নি।

তাতে কী, সালাউদ্দীন ফারুক তার একক আধিপত্য বিস্তারের জন্য জন্য শুধু আওয়ামীলীগই নয় যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগসহ বিভিন্ন নামে কয়েকটি পকেট কমিটি করে বাংলাদেশ দূতাবাসে কয়েক বছর ধরে ‘রাম রাজত্ব’ কায়েম করেছেন।

এদিকে সৌদি আরবের মতো সর্ববৃহৎ শ্রমবাজারের দেশে অন্য দলের নেতাকে ‘রাষ্ট্রদূত’ করায় আওয়ামী পরিবোরে ক্ষোভ দীর্ঘদিনের। দুই বছরের চুক্তিতে নিয়োগ দেয়ার পর আওয়ামী পরিবারের নিবেদিত নেতাদের হাত করতে না পারায় গোলাম মসিহ বেছে নেয় রিয়াদ আওয়ামীলীগের ‘স্বঘোষিত’ সভাপতি সালাউদ্দিন ফারুককে। আদম ব্যবসার সুবিধার টোপ দিয়ে নিজের পক্ষে নেয় রাষ্ট্রদূত।

তারপর দু’বছর ধরে নানা কূটকৌশল ‘প্রয়োগ’ করে আওয়ামী শিবিরে ‘প্লাস-মাইনাসের’ মাধ্যমে ‘কোন্দল-গ্রুপিং’ চরমে পৌঁছায়। অন্যদিকে নারী গৃহকর্মী নিয়োগ নিয়ে দেদারছে ভিসা বাণিজ্য করে আখের গোছায় 'গরু-মহিষ' গং।

অতি সম্প্রতি রাষ্ট্রদূতের চাকরির মেয়াদ দু’বছর পূর্ণ হবার পর ফের এক বছরের জন্য তার চুক্তি ‘নবায়ন’ করা হয়েছে। এরইমধ্যে গত তিন মাস ধরে চলছে রাষ্ট্রিয় বিভিন্ন অনুষ্ঠান। আন্তজার্তিক মাতৃভাষা দিবস, বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন, ২৫ মার্চ, ২৬ মার্চসহ কয়েকটি অনুষ্ঠান। এসব অনুষ্ঠানে আধিপত্য ও আমন্ত্রণ নিয়ে নিজেদের মধ্যেই কামড়াকামড়িতে জড়িয়ে পড়ে সালাউদ্দিন ফারুকের অনুসারীরা।

২৫ মার্চ গণহত্যা দিবসের অনুষ্ঠানে হাতাহাতি থেকে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয় বিদেশি দূতাবাসের অতিথিদের সামনেই। দুই গ্রুপের হাতাহাতি হট্টগোলের মধ্যে ভারতীয় দূতাবাসের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা ক্ষোভ প্রকাশ করে অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করেন বলে জানা গেছে। পরে দূতাবাসের লোকজন দ্রুত হস্তক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

পরদিন রিয়াদ প্যালেস নামের একটি অভিজাত ফাইভ ষ্টার হোটেলে সালাউদ্দীন ফারুকের অনুসারীদের জন্য বাংলাদেশ দূতাবাসের অর্থায়নে ভুড়িভোজের আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত গোলাম মসিহ বলেন, রিয়াদ কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সভাপতি সালাউদ্দিন ফারুককে আমি ১৯৯৬ সাল থেকে চিনি। রিয়াদের আওয়ামী পরিবারের সব সংগঠনকে সালাউদ্দিন ফারুকের নেতৃত্বে এক হতে হবে। তা না হলে অন্য সংগঠনগুলোকে আর দূতাবাসের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ করা হবেনা। এসময় দূতাবাসের কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।

রাষ্ট্রদূতের এই বক্তব্যের কথা জানাজানি হওয়ার পর তোলপাড় শুরু হয়েছে। রিয়াদের প্রবাসী কমিউনিটিতে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। আদম বেপারির নেতৃত্ব মেনে নিতে পারছেননা রিয়াদের প্রবাসী কমিউনিটি। তারা রাষ্ট্রদূতের এই সিদ্ধান্তের বিষয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে নারাজ।

তবে স্থানীয় সাংবাদিকরা জানান, রিয়াদের বাংলাদেশ কমিউনিটিকে পকেটে নিয়ে আগামী এক বছর নির্বিঘ্নে 'রাজত্ব' করার একটা উপায় বের করেছেন রাষ্ট্রদূত গোলাম মসিহ। কমিউনিটির লোকজন ফুঁসে উঠছেন। অপ্রীতিকর ঘটনার আশংকা করছেন অনেকেই। এ ব্যাপারে কয়েকবার যোগাযোগ করেও মোবাইল ফোনে রাষ্ট্রদূতের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।  

সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেডআরসি/এমএইচএম

Wordbridge School
Link copied!