• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

গাইবান্ধার ডিসিকে হাইকোর্টে তলব


আদালত প্রতিবেদক ডিসেম্বর ৬, ২০১৬, ০৫:৫৪ পিএম
গাইবান্ধার ডিসিকে হাইকোর্টে তলব

ঢাকা: গোবিন্দগঞ্জে সাঁওতালদের ওপর হামলার ঘটনায় গাইবান্ধার জেলা প্রশাসককে (ডিসি) তলব করেছেন হাইকোর্ট। আগামী ১২ ডিসেম্বর তাকে সশরীরে হাজির হতে বলা হয়েছে। মঙ্গলবার (৬ ডিসেম্বর) বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

গোবিন্দগঞ্জে চিনিকলের বিরোধপূর্ণ জমি থেকে উচ্ছেদের সময় গুলির ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠনের আদেশে সাঁওতালদের ‘বাঙ্গালী দুস্কৃতিকারী’ বলায় তাকে তলব করেছে হাইকোর্ট। আদালতে ডিসিকে তার ওই বক্তব্যর ব্যাখ্যা দিতে হবে।

আদালত বলেছে, পাকিস্তানি আমলে ‘বাঙ্গালী দুস্কৃতিকারী’ একটি উন্নাসিক শব্দ। এ ধরনের শব্দ মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানিরা ব‌্যবহার করত। জেলা প্রশাসক ‘আইন অমান‌্যকারী’ বা অন‌্য কোনো শব্দ ব‌্যবহার করতে পারতেন। তা না করে কেন তিনি ‘বাঙ্গালী দুস্কৃতিকারী’ লিখেছেন, তার ব‌্যাখ‌্যা জানা প্রয়োজন। সাঁওতালদের পক্ষে করা প্রথম মামলার বাদী স্বপন মরমুকেও ১২ ডিসেম্বর আদালতে হাজির করতে গাইবান্ধার পুলিশ সুপার ও গোবিন্দগঞ্জ থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।

সাঁওতালদের ভূমি উদ্ধার আন্দোলন ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অধিকার আন্দোলনের নেতাদের অভিযোগ, ওই মামলা ক্ষতিগ্রস্তদের পক্ষ থেকে করা হয়নি। অন‌্যদিকে পরিবার বলছে, স্বপনের কোনো খোঁজ তারা পাচ্ছেন না।

গত ৬ নভেম্বর চিনিকল কর্তৃপক্ষ জমি উদ্ধার করতে গেলে সংঘর্ষ বাঁধে। সংঘর্ষের সময় সাঁওতালদের বাড়িঘরে লুটপাট হয়। সংঘর্ষের এক পর্যায়ে পুলিশ গুলি চালায়। ওই ঘটনায় নিহত হন তিন সাঁওতাল, আহত হন অনেকে।

পরদিন এ বিষয়ে শুনানি করে সাঁওতালদের ধান কাটার সুযোগ দিতে অথবা ধান কেটে তাদের বুঝিয়ে দিতে চিনিকল কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দেয় আদালত। সাঁওতালদের সম্পত্তি ও জানমাল রক্ষায় ‘প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না’- তা জানতে চেয়ে রুলও জারি করা হয়। পাশাপাশি উচ্ছেদ হওয়া সাঁওতালদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং বাইরে চলাচলের ক্ষেত্রে তাদের নিরাপত্তা দিতে স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দেয় আদালত। তাদের নিরাপত্তার জন‌্য কী কী আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে এবং উচ্ছেদের সময় ভাংচুর-লুটপাটের ঘটনায় কয়টি মামলা হয়েছে সে বিষয়ে গাইবান্ধার পুলিশ সুপার ও গোবিন্দগঞ্জ থানার ওসিকে ৩০ নভেম্বরের মধ‌্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়।

সে অনুযায়ী জেলা প্রশাসক ও পুলিশ কর্তৃপক্ষ আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করে, যেখানে তদন্ত কমিটি গঠনের বিষয়ে জেলা প্রশাসকের ওই আদেশের অনুলিপিও ছিল। পরদিন এ বিষয়ে শুনানি করে রুল দেয় আদালত। সাঁওতালদের উচ্ছেদের নামে তাদের মারধর, লুটপাট, গুলি ও ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না এবং উচ্ছেদের নামে ওইসব কর্মকাণ্ড কেন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চাওয়া হয় রুলে।

রিট আবেদনে দেওয়া রুলের শুনানিতে মঙ্গলবার আবেদনকারী পক্ষের আইনজীবী এম আমিনউদ্দিন আদালতকে বলেন, সাঁওতালদের নামে করা প্রথম মামলার বাদী স্বপন মুরমু আদৌ সাঁওতাল নন, তিনি মাহালি সম্প্রদায়ের। পিবিআইয়ের মাধ্যমে গোবিন্দগঞ্জের ঘটনার তদন্ত চান এই আইনজীবী। অন‌্য রিট আবেদনে দেওয়া রুলের শুনানিতে জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠনের আদেশ চান।

এ সময় বিচারক বলেন, “এটা আমরা পরে দেখব। আগে আদেশ দেই।” এরপর “বাঙ্গালী দুস্কৃতিকারী’ শব্দ চয়নের ব্যাখ্যা চেয়ে জেলা প্রশাসককে তলবের আদেশ দেয় হাইকোর্ট।


সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন

Wordbridge School
Link copied!