• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

গাছে বেঁধে নির্যাতন বাড়ছেই! আর কত?


নিউজ ডেস্ক মার্চ ৯, ২০১৭, ০৭:৪৬ পিএম
গাছে বেঁধে নির্যাতন বাড়ছেই! আর কত?

ঢাকা: বর্তমানে একের পর এক বীভৎস কায়দায় নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। শিশু রাজন, রবিউল ও রাকিব হত্যার পর দেশজুড়ে যে তোলপাড় শুরু হয়েছিল এবং ওইসব ঘটনায় জড়িতদের যে শাস্তি হয়েছে তাতে অনেকেরই ধারণা ছিল শিশু নির্যাতন কিছুটা হলেও কমবে। কিন্তু উল্টো তা বেড়েই চলছে। দেশে নির্যাতনের এ ধরনের ঘটনা ঘটছে অহরহ।

বুধবার (৮ মার্চ) একই দিনে দেশের দুই জেলায় গাছের সঙ্গে বেঁধে নারী ও শিশুসহ পাঁচ জনকে নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। নির্যাতনের এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত দেখা গেছে জনপ্রতিনিধি ও প্রভাবশালীদের।

রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার আন্দুয়া গ্রামে ছাগল চুরির অভিযোগে দশম শ্রেণির দুই ছাত্রকে গাছে বেঁধে নির্যাতন চালিয়েছেন আব্দুল মোতালেব নামে ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) এক সদস্য ও তার সহযোগীরা। অন্যদিকে একই দিনে ঝালকাঠি সদর উপজেলার আগরবাড়ি গ্রামে মোবাইল ফোন চুরির অপবাদে মা ও মেয়েকে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন করা হয়। এসময় তাদের সঙ্গে থাকা দুই বছরের শিশুকেও পিটিয়ে আহত করা হয়। 

নির্যাতনের এসব ঘটনা বিশ্লেষণে দেখা গেছে- মানুষের অমানবিক, নিষ্ঠুর এই আচরণের পেছনে কাজ করছে বিচারহীনতার সংস্কৃতি। এসব নির্যাতন প্রতিরোধে শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মুখের দিকে তাকিয়ে না থেকে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।

রাজশাহী প্রতিবেদক জানান, ছাগল চুরির অভিযোগে দুই স্কুলছাত্রকে গাছে বেঁধে নির্যাতন চালিয়েছেন আব্দুল মোতালেব নামে ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) এক সদস্য ও তার সহযোগীরা। বুধবার (৮ মার্চ) দুপুরে রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার আন্দুয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

নির্যাতিত ওই ছাত্র হলো, উপজেলার হাড়িয়াপাড়া গ্রামের জিয়াউর রহমানের ছেলে জার্জিস হোসেন (১৫) ও পলাশবাড়ি গ্রামের সেকু আলীর ছেলে রতন আলী (১৪)। তারা উপজেলার আমগাছী সাহারবাণু উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র।

স্থানীয়রা জানান, চুরির অভিযোগে কথিত গ্রাম্য সালিশে আন্দুয়া গ্রামের ওই ইউপি সদস্য দুই ছাত্রকে পিটিয়েই ক্ষ্যান্ত হননি, তাদের পরিবারের কাছ থেকে আদায় করেছেন নগদ ১৬ হাজার টাকা। জরিমানার এ টাকা তিনি নিজের পকেটেই পুরেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই সালিশ বৈঠকে ঝালুকা ইউপি চেয়ারম্যান মোজাহার আলী মণ্ডল ও ইউপি সদস্য মির্জা আব্দুল লতিফও উপস্থিত ছিলেন। বুধবার রাতে সালিশে ওই দুই ছাত্রকে নির্যাতনের একটি ভিডিও এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঙ্গলবার দিনগত রাতে জার্জিস ও রতন আন্দুয়া গ্রামের রেজাউল করিমের বাড়ি থেকে একটি ছাগল চুরি করে বলে অভিযোগ করেন ছাগলের মালিক। ভোরে মতিহারের হরিয়ান বাজার দিয়ে যাওয়ার সময় বাজারের নৈশপ্রহরীরা ছাগলসহ যেতে দেখে সন্দেহ হলে ওই দুই ছাত্রকে আটক করে। পরে তাদের কাছ থেকে বিস্তারিত জেনে আন্দুয়া গ্রামে খবর দিলে সকালে ইউপি সদস্য আব্দুল মোতলেব তাদের নিজ জিম্মায় ছাড়িয়ে আনেন।

এরপর বুধবার দুপুরে ছাগল মালিক রেজাউলের বাড়ির পাশে সালিশ বসানো হয়। সালিশ বৈঠকে ওই দুজনকে গাছে বেঁধে বেধড়ক পেটানো হয়। পরে তাদের পরিবারের লোকজনকে ডেকে পাঠানো হয়। তারা এলে ১৬ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। জরিমানার ওই টাকার মধ্যে আড়াই হাজার টাকা ছাগল মালিককে দেয়া হয়। বাকি টাকা নিজের কাছেই রেখে দেন ইউপি সদস্য আব্দুল মোতালেব। এরপর তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

নির্যাতিত ছাত্রদের পরিবার জানায়, অল্প বয়সী ওই কিশোরেরা ভুল করতেই পারে। তাই বলে তাদের গাছে বেঁধে নির্মমভাবে পেটানো ঠিক হয়নি। এ ব্যাপারে ওই ছাত্রদের পরিবার আইনের আশ্রয় নেবে বলেও জানিয়েছে।

নির্যাতনের বিষয়ে জানতে চাইলে ইউপি সদস্য আব্দুল মোতালেব বলেন, ছাগল চুরির কথা প্রথমে তারা স্বীকার না করায় গাছে বেঁধে রাখা হয়। তবে তাদের নির্যাতন করা হয়নি বলে তিনি দাবি করেন।

জরিমানার ১৬ হাজার টাকা কার কাছে আছে জানতে চাইলে আব্দুল মোতালেব বলেন, আড়াই হাজার টাকা ছাগল মালিককে দেয়া হয়েছে। আর বাকি টাকার মধ্যে কিছু টাকা দুই চোরকে ধরতে সাহায্যকারীরা পেয়েছেন। আর বাকি টাকা গ্রামের মসজিদে দান করা হয়েছে। সালিশে উপস্থিত ইউপি চেয়ারম্যান মোজাহার আলী মণ্ডলের সঙ্গে পরামর্শ করেই এসব করা হয়েছে বলেও জানান আব্দুল মোতালেব।

দুর্গাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রুহুল আলম জানান, কেউ এ ব্যাপারে থানায় অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এদিকে ঝালকাঠিতে মোবাইল ফোন চুরির অপবাদে মা ও মেয়েকে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতনের বিষয়ে আমাদের ঝালকাঠি প্রতিবেদক জানান, জেলায় মোবাইল ফোন চুরির অপবাদে মা ও মেয়েকে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। এসময় তাদের সঙ্গে থাকা দুই বছরের শিশুকেও পিটিয়ে আহত করা হয়। বুধবার (৮ মার্চ) বিকেলে ঝালকাঠি সদর উপজেলার বাসন্ডা ইউনিয়নের আগরবাড়ি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

পরে রাত ৮টার দিকে আহত মা রোকেয়া বেগম (৪৫) মেয়ে নারগিস বেগম (২৫) ও দুই বছরের নাতনী স্বর্ণাকে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

প্রত্যক্ষদর্শী ও আহতরা জানায়, গত শুক্রবার (৩ মার্চ) দুপুরে আগড়বাড়ি গ্রামের মুদিদোকানদার দেলোয়ার হোসেনের মেয়ের বিয়ের দিন ছিলো। বিয়েতে নিমন্ত্রণ পেয়ে অংশ নেয় প্রতিবেশী দিনমজুর মোসলেম আলী সিকদারের স্ত্রী রোকেয়া বেগম, তার মেয়ে নারগিস বেগম ও নারগিসের দুই বছরের শিশু স্বর্ণা। 

বিয়ের অনুষ্ঠানের আসা একজন বরযাত্রীর মোবাইল ফোন হারিয়ে যাওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ে। এসময় মুদিদোকানদার কনের বাবা দেলোয়ার হোসেন এবং তার নাতী জুয়েল হোসেন তাদের প্রতিবেশী রোকেয়া বেগম ও তার মেয়ে নারগিসকে মোবাইল চুরির অপবাদ দেয়।

এ ঘটনা নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে পাঁচ দিন ধরে ঝগড়া বিবাধ চলছে। বুধবার বিকেলে (সন্ধ্যার কিছু আগে) দেলোয়ার এবং জুয়েলের লোকজন মা রোকেয়া ও মেয়ে নারগিস এবং শিশু স্বর্ণাকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যায় দেলোয়ার হোসেনের বাড়িতে। সেখানে নিয়ে প্রথমে মা ও মেয়েকে বাঁশের লাঠি দিয়ে পেটানো হয়। মোবাইল বের করে দে, বলে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করাও হয় তাদের। পিটুনি খেয়ে রোকেয়া আমরা মোবাইল ফোন নেইনি বলে জানালে তারা আরো ক্ষিপ্ত হয়। এক পর্যায়ে ওই দুই নারীকে একটি গাছের সঙ্গে বেঁধে দেলোয়ার ও জুয়েল বেধরক পেটান। নারগিসকে মারধরের সময় তার দুই বছরের মেয়ে স্বর্ণাও গুরুতর আহত হয়। 

পরে প্রতিবেশীরা তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। বর্তমানে সদর হাসপাতালের মহিলা ওয়ার্ডের বিছানায় যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন রোকেয়া বেগম ও তার মেয়ে নারগিস। তাদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। অভিযুক্ত দেলোয়ার হোসেন মারধরের কথা অস্বীকার করে জানান, তারা নিজেরাই মারামারি করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।

এ ব্যাপারে ঝালকাঠি থানার উপপরিদর্শক ফারুক হোসেন জানান, বুধবার রাতে পুলিশ ওই এলাকায় দায়িত্ব পালনকালে মারামারি খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে আহতদের হাসপাতালে পাঠায়। এসময় আহতদের ছাড়া অন্য কাউকে দেখা যায়নি। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলেও জানান।


সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন

Wordbridge School
Link copied!