• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

গামর্ন্টেস খাতের সংকট কাটিয়ে ওঠার চেষ্টায় অগ্রগতি


নিজস্ব প্রতিবেদক জুন ১৫, ২০১৬, ০১:০৪ পিএম
গামর্ন্টেস খাতের সংকট কাটিয়ে ওঠার চেষ্টায় অগ্রগতি

বাংলাদেশের অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ ও সম্ভাবনাময় খাত হলো রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্প। গত তিন দশকের মধ্যেই দেশের এই খাত সর্বোচ্চ রপ্তানি আয় অর্জনকারী শিল্পে রূপান্তরিত হয়েছে। তবে বেশ কিছুদিনের ব্যবধানে এই খাতে বিরাট নেতিবাচক প্রভাব দেখা যায়। এসবের মধ্যে রয়েছে রানা প্লাজা ধসের মতো কিছু সমালোচিত দুর্ঘটনা।

২০১৩ সালে ২৪ এপ্রিল সকাল ৯টায় ঢাকার সাভারে ভয়াবহ এ দুর্ঘটনার পর থেকে কারখানার নিরাপত্তা ও শ্রমিকদের অধিকারের ব্যাপারে আন্তর্জাতিকভাবে বড় ধরনের সমালোচনা শুরু হয়। এ দুর্ঘটনায় ভবনে থাকা পাঁচটি পোশাক কারখানার অন্তত ১ হাজার ১৩৮ শ্রমিক নিহত হন। আহত ও পঙ্গু হয়ে পড়েন অন্তত আড়াই হাজার শ্রমিক।

দুর্ঘটনার পর বাংলাদেশি পণ্যের অগ্রাধিকারমূলক বিশেষ বাণিজ্য সুবিধা বা জেনারালাইজড সিস্টেম অব প্রেফারেন্স (জিএসপি) সুবিধা স্থগিত করে যুক্তরাষ্ট্র। জেনেভায় ইইউ সাসটেনেবিলিটি কমপ্যাক্ট নামে বাংলাদেশের সঙ্গে অন্য একটি চুক্তি হয়। ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) সমন্বয়ে এ চুক্তিতে পরে যুক্তরাষ্ট্রও অংশ নেয়। এরপর থেকেই ক্ষতি কাটিয়ে উঠে ব্যাপক সংস্কারের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের বৃহত্তম এ খাত।

বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প ২০২১ সালের রপ্তানি লক্ষ্য মাত্রার স্বপ্নকল্প নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার প্রয়াস নিলেও এটা বাস্তবায়ন কঠিন হয়ে পড়ে। রানা প্লাজা ধসের পাশাপাশি তাজরীন ফ্যাশনস-এ অগ্নিকান্ড, স্পেকট্রাম গার্মেন্টস এর ধসে পড়ার অনাকাঙ্খিত ঘটনায় শত শত উদ্যোক্তা আর সাফল্যের ইতিহাস বিবর্ণ হয়ে গিয়েছিল এবং বাংলাদেশের পোশাক শিল্প গভীর সংকটে পতিত হয়েছিল।

এই শিল্পে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনায় অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিকভাবে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি পড়তে হয়। তবে এসব সৃষ্টি হওয়া নেতিবাচক ভাবমূর্তি থেকে অনেকটাই বেরিয়ে এসেছে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে ব্যাপক সংস্কারকাজ বাস্তবায়িত হওয়ায় এ সংকট কাটিয়ে উঠছে পোশাক খাত।

তিন বছরে বৃহত্তম এ শিল্প খাতের প্রায় পাঁচ হাজার কারখানার আমূল সংস্কার হওয়ায় বাংলাদেশ এখন বিশ্বের কাছে দৃষ্টান্ত। বদলে যাওয়া পোশাক খাতের বার্তা পাওয়ার পর ক্রেতারা আরও আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। এক বছর ধরে প্রতি মাসেই বাড়ছে পোশাক রফতানি। বিগত অর্থবছরের (২০১৪-১৫) প্রথম নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) পোশাক খাতের রফতানি আয় লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে বেশি হয়েছে ২ দশমিক ৫০ শতাংশ। তার আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় রফতানি বেশি হয়েছে ১০ শতাংশ।

এই খাতে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র বলছে, শ্রমিকদের স্বার্থ সংরক্ষণ ও পরিবেশসম্মত উৎপাদনের কারণে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের গ্রিন সার্টিফিকেট পেয়েছে অনেক কারখানা। এ সনদ পাওয়ার অপেক্ষায় আছে আরও অন্তত একশ কারখানা।

এদিকে, পরিদর্শন ও সংস্কার প্রক্রিয়ার সঙ্গে তাল মেলাতে না পারায় শতাধিক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। প্রাথমিক পরিদর্শনে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের ৩৬টি কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সংস্কার চালিয়ে যেতে ব্যর্থ আরও ৮৪টি কারখানার সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন ইউরোপের ক্রেতাদের জোট অ্যাকর্ড অন ফায়ার অ্যান্ড বিল্ডিং সেফটি ইন বাংলাদেশ এবং উত্তর আমেরিকার ক্রেতাদের জোট অ্যালায়েন্স ফর বাংলাদেশ ওয়ার্কার সেফটি। তবে এই ঘাটতি কাটিয়ে উঠতে সরকারের পক্ষ থেকে শ্রম আইন সংশোধন, বিধিমালা প্রণয়ন এবং ইপিজেডে ট্রেড ইউনিয়ন করার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে।

শ্রমিকদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে ৭৭ শতাংশ হারে মজুরি বাড়ানো হয়েছে। অ্যাকর্ড এবং অ্যালায়েন্সের ক্রেতারাও নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়নে কাজ করছে। যেসব কারখানা থেকে এই জোটের ক্রেতারা পোশাক নেন, সেসব কারখানা ভবনের কাঠামো, অগ্নি ও বৈদ্যুতিক মান সংক্রান্ত প্রাথমিক পরিদর্শন শেষ করা হয়েছে। পরিদর্শনে চিহ্নিত ত্রুটি সংশোধন চলছে এখন। জোটের সরাসরি তত্ত্বাবধানে এরই মধ্যে ৪৪ শতাংশ ত্রুটি সংশোধন করেছেন উদ্যোক্তারা।

দুই জোটের বাইরে থাকা জাতীয় ত্রিপক্ষীয় উদ্যোগের আওতায় দেড় হাজার কারখানা পরিদর্শনের কাজ শেষ করেছে কলকারখানা পরিদর্শন অধিদপ্তর (ডিআইএফই)। তবে কিছু বিষয়ে এখনও দুর্বলতা রয়ে গেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। বাংলাদেশের পোশাক খাতের অগ্রগতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা বিভিন্ন সময় প্রশংসা করলেও জিএসপি পুনর্বহাল করা হয়নি। 

জিএসপি স্থগিত করার সময় কর্মপরিবেশ, শ্রমিক নিরাপত্তা ও তাদের অধিকার রক্ষায় মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধির কার্যালয় (ইউএসটিআর) থেকে ১৬টি শর্তের কর্মপরিকল্পনা বাংলাদেশকে দেওয়া হয়। এসব শর্ত পূরণ করা হয়েছে। তারপরও জিএসপি স্থগিতাদেশ এখনও বহাল রাখা হয়েছে। তারা মনে করছে, জাতীয় ত্রিপক্ষীয় উদ্যোগের (এনপিএ) আওতায় থাকা দেড় হাজার কারখানায় সংস্কার কাজ এখনও শুরু না হওয়ায় গোটা শিল্পকে এখনও নিরাপদ বলা যায় না।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এএম

Wordbridge School
Link copied!