• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

গুলশান হামলার চার্জশিট হয়নি সাত মাসেও


বিশেষ প্রতিনিধি ফেব্রুয়ারি ১, ২০১৭, ০১:১৫ এএম
গুলশান হামলার চার্জশিট হয়নি সাত মাসেও

গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার ৭মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দিতে পারেনি তদন্তকারী সংস্থা কাউন্টার টেররিজম ইউনিট (সিটিইউ)। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্পর্শকাতর মামলাটির চূড়ান্ত অভিযোগপত্র দিতে আরো কিছুটা সময় লাগবে। 

তদন্তের প্রতিটি পর্যায়ে নতুন নতুন তথ্য যোগ হচ্ছে। সেসব তথ্য যাচাই-বাছাই আর যোগসূত্র মেলাতেই সময় চলে যাচ্ছে। জঙ্গি হামলার চূড়ান্ত ছক কিভাবে হয়েছিল, এতে প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে কারা জড়িত ছিল এবং হামলায় অর্থ যোগানদাতাসহ প্রায় সবাইকে শনাক্ত করা গেছে।

সর্বশেষ গত ১৩ জানুয়ারি টাঙ্গাইল থেকে ভয়ংকর জঙ্গি জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব গান্ধীকে গ্রেফতারের পর গুলশান হামলার চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসে। আদালতে দেওয়া রাজীব গান্ধীর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে হামলার ছক ও এর নেপথ্যে জড়িতদের নামও উঠে আসে। রাজীব গান্ধীর এই জবানবন্দির ওপর ভর করেই তদন্ত এগিয়ে নিচ্ছেন তদন্তু সংশ্লিষ্টরা।

এই জঙ্গি হামলার মূল পরিকল্পনাকারী ও অর্থ যোগানদাতারা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে। হামলায় প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে জড়িতদের মধ্যে এ পর্যন্ত ১২ জঙ্গি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন অভিযানে নিহত হয়েছে। এদের মধ্যে জেএমবির নব্য শীর্ষ পর্যায়ের নেতাও রয়েছে। এদিকে ঘটনাস্থল থেকে সিআইডি যেসব আলামত পরীক্ষার জন্য নিয়েছিল, তার প্রতিবেদন ৭ মাসেও হাতে পায়নি কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। 

গুলশান মামলার তদন্তে শতাধিক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে তদন্ত সংস্থা। এদের মধ্যে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হওয়া ৩২ জন প্রত্যক্ষদর্শীর জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে। ঘটনার পর প্রাথমিক তদন্তে উঠে আসে হামলার অন্যতম ‘মাস্টারমাইন্ড’ বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডাপ্রবাসী তামিম আহমেদ চৌধুরী। কিন্তু পরবর্তীতে জানা যায়, তামিম এ হামলায় অপারেশন কামান্ডার হিসেবে কাজ করেছে। 

সে হিসেবে ‘মূল পরিকল্পনাকারী’ এখনো আড়ালেই। আবার হামলায় ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্রগুলো ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মালদা জেলার একটি অস্ত্র কারখানায় তৈরি করা হয়েছিল। চাঁপাইনবাবগঞ্জের সীমান্ত পথ দিয়ে ট্রাকে আমের ঝুড়িতে করে অস্ত্রগুলো ঢাকায় আনা হয়। অস্ত্রের বাহক আটক হলেও ওইসব আগ্নেয়াস্ত্র তৈরিতে কারা অর্থের যোগান দিয়েছে তা এখনো শনাক্ত করা যায়নি।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে যারা নিহত হয়েছে বা আটক হয়েছে তারা সবাই কোনো না কোনোভাবে গুলশান হামলার সঙ্গে জড়িত। ওই হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় এ পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। তারা হলেন, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সাবেক শিক্ষক হাসনাত রেজা করিম, কল্যাণপুরে জঙ্গিবিরোধী অভিযানে আটক রাকিব ওরফে রিগ্যান এবং জাহাঙ্গীর ওরফে রাজীব গান্ধী ওরফে সুভাষ।

এ বিষয়ে কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের উপকমিশনার মুহিবুল ইসলাম বলেন, রাজীব গান্ধীর জবানবন্দিতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে এসেছে। জড়িতদের শনাক্ত করা গেছে। এটি একটি স্পর্শকাতর ও বড় মামলা, তাই চার্জশিট দিতে সময় লাগছে। যাদের শনাক্ত করা হয়েছে তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

গোয়েন্দা সূত্র জানায়, গুলশান হামলার পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িত অন্তত ২৫ জনের নাম শনাক্ত করেছে গোয়েন্দারা। এদের আটক করলে মূল পরিকল্পনাকারীর নাম জানা সম্ভব হবে। এদিকে পলাতক ১২ জঙ্গির মধ্যে মেজর জিয়া ও আবু মুসা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। 

পলাতক দুর্ধর্ষ জঙ্গির মধ্যে খালিদ ও রিপন ভারতে পালিয়ে গেছে বলে গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য রয়েছে। মারজান নিহত হওয়ার পর গোয়েন্দাদের দৃষ্টি এখন মেজর জিয়া, আবু মুসা, বাশারুজ্জামান ওরফে আবুল বাশার ওরফে চকলেটের ওপর। 

তাদের গ্রেফতার করা গেলেই নব্য জেএমবিকে আপাতত নির্র্মূল করা সম্ভব হবে। ওই তিনজন ছাড়াও ইকবাল, রিপন, খালিদ, মানিক, মামুন, জোনায়েদ খান, আজাদুল কবিরাজ ও বাদল পালিয়ে থেকে নব্য জেএমবিকে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে।

গোয়েন্দা সূত্র জানায়, চিহ্নিত জঙ্গিদের কয়েকজন ভারতে পালিয়েছে। এই মুহূর্তে মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকায় আছে সেনাবাহিনীর সাবেক মেজর জিয়া ও আবু মুসা। এ দুজনকে খুঁজছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

কাউন্টার টেররিজম সূত্র জানায়, ২০১১ সালের ডিসেম্বরে ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থান চেষ্টার মূল হোতা সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল হক ওরফে মেজর জিয়া। তিনি ৫ বছর ধরে পলাতক। এদিকে গ্রেফতার রাজীব গান্ধী ২২টি হত্যাকান্ডের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। 

এগুলোর মধ্যে জাপানি নাগরিক হোশি কুনিও, টাঙ্গাইলের দর্জি নিখিল, পাবনার পুরোহিত নিরাঞ্জন পান্ডে, রংপুরের মাজারের খাদেম রহমত আলী, কুষ্টিয়ার হোমিও ডাক্তার সানাউর, পঞ্চগড়ের পুরোহিত যুগেস্বর, দিনাজপুরের হোমিও চিকিৎসক ধীরেন্দ্রনাথ এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রেজাউল করিম সিদ্দিকি হত্যা অন্যতম। গুলশান হামলার পরিকল্পনায় সরাসরি যুক্ত ছিলেন এই ‘রাজীব গান্ধী’।

গত বছরের ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে নজিরবিহীন জঙ্গি হামলায় ১৭ বিদেশি নাগরিকসহ ২২ জন নিহত হন। পরদিন সকালে সশস্ত্র বাহিনীর কমান্ডো অভিযানে হামলাকারী ৫ জঙ্গিসহ ছয়জন নিহত হয়। জিম্মি অবস্থা থেকে উদ্ধার করা হয় ১৩ জনকে। এর এক সপ্তাহের মাথায় ৭ জুলাই রোজার ঈদের সকালে কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় দেশের বৃহত্তম ঈদ জামাতের মাঠের কাছে ফের হামলা চালায় জঙ্গিরা।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেডআরসি

Wordbridge School
Link copied!