• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
মুন্সীগঞ্জ-১ আসন

গৃহদাহে পুড়ছে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ


মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৭, ০২:৪২ পিএম
গৃহদাহে পুড়ছে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ

মুন্সীগঞ্জ : মুন্সীগঞ্জ-১ আসনে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা শুরু হয়ে গেছে। পিছিয়ে নেই বিএনপি’র প্রার্থীরা। সিরাজদিখান ও শ্রীনগর- এ দুই উপজেলা নিয়ে গঠিত মুন্সীগঞ্জ-১ আসন।

এখানে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি ও তার অঙ্গসংগঠনে রয়েছে প্রকাশ্যে বিরোধ। ছাত্রদল-যুবদল ও ছাত্রলীগে রয়েছে পাল্টাপাল্টি কমিটিও। তবে, এ আসনে বিকল্পধারা, জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামীসহ বামদলগুলোর ভোট হাতেগোনা।

মুন্সীগঞ্জ-১ আসনে স্বাধীনতা পরবর্তী বছরের পর বছর সাবেক প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী ও সাবেক উপপ্রধানমন্ত্রী শাহ মোয়াজ্জেম  হোসেনের আধিপত্য ছিল । বি. চৌধুরী বিএনপি থেকে ৫ বার এবং তার ছেলে মাহী বি. চৌধুরী একবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০০৮ সালে পরাজয়ের পর বি. চৌধুরী ও মাহী বি. চৌধুরী এলাকার খুব একটা আসেননি।

অন্যদিকে শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন বিএনপিতে যোগ দেয়ায় নিজেকে ধরে রাখতে পেরেছেন। তবে, বর্তমানে দলের মধ্যে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। শ্রীনগর ও সিরাজদিখান দুই উপজেলাতেই বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের মধ্যে প্রকাশ্যে বিরোধ কখনো কখনো সংঘর্ষে রূপ নিয়েছে। কোন রকম সম্মেলন ছাড়া শ্রীনগর উপজেলা বিএনপি কমিটি গঠন এবং শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন গ্রুপের লোকদের কমিটি অনুমোদন দেয়ার পর এখানে সাবেক কমিটিও কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। শ্রীনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ মমিন আলী ও দেলোয়ার হোসেন গ্রুপ এক পক্ষের এবং শাহ মোয়াজ্জেম হোসেনের পক্ষের শহীদুল ইসলাম ও আবুল কালাম কানন আরেক গ্রুপের নেতৃত্বে রয়েছেন।

শহীদুল ইসলাম-কানন এবং আলহাজ মমিন আলী-দেলোয়ার হোসেন দুই গ্রুপই শ্রীনগর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ ব্যবহার করে আলাদাভাবে কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। এই দুই কমিটির দ্বদ্বে স্থানীয় ছাত্রদল-যুবদলের একাধিক কমিটি রয়েছে। এই পর্যন্ত দুই কমিটির মধ্যে কয়েক দফা সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। একই স্থানে, একই সময়ে পাল্টাপাল্টি সভা ডাকায় শ্রীনগর উপজেলা প্রশাসন ১৪৪ ধারাও জারি করেছিল। সর্বশেষ গত ২২শে জুলাই সকালে সিরাজদিখানের কুসুমপুর মাঠে বিএনপির সদস্য নবায়ন ও প্রাথমিক সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রমের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আসার পথে ছনবাড়ি চৌরাস্তায় মমিন আলী ও শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন গ্রুপের দুই কমিটির  লোকদের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে। এতে ৫ জন আহত হয়।

বি. চৌধুরী বিএনপি ছাড়ার পর আলহাজ মমিন আলী ও দেলোয়ার হোসেন দলকে সুসংগঠিত করে রেখেছেন। দলীয় একটি সুযোগ-সন্ধানী চক্রের কারণে কোনো রকম সম্মেলন ছাড়া শ্রীনগর উপজেলা বিএনপির নতুন কমিটি ঘোষণা দেয়া হলেও ১৪টি ইউনিয়নের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিকসহ অধিকাংশ নেতাকর্মী এখনও রয়েছে মমিন আলীর পক্ষে। গত উপজেলা নির্বাচনে মুন্সীগঞ্জে ৫টি উপজেলায় বিএনপির প্রার্থীরা পরাজিত হলেও শ্রীনগরে মমিন আলী প্রায় সাড়ে ২৪ হাজার ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করেন। এখানে বিএনপি মনোনীত ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীরাও জয়লাভ করে।  শাহ  মোয়াজ্জেম হোসেন বিরোধিতা করলেও কেন্দ্রীয় বিএনপির কোষাধ্যক্ষ সাবেক স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী মিজানুর রহমান সিন্হা রয়েছেন মমিন আলীর পক্ষে। আগামী নির্বাচনে মমিন আলী দলীয় নমিনেশন পাবেন বলে আশা করছেন।

সিরাজদিখানে শাহ মোয়াজ্জেম হোসেনের দেয়া কমিটি অনুমোদনকে কেন্দ্র করে বিএনপি তিন গ্রুপে বিভক্ত। সিরাজদিখান উপজেলা যুবদল ও ছাত্রদলও তিন গ্রুপে বিভক্ত। উপজেলা যুবদলের পাল্টাপাল্টি কমিটি রয়েছে। সিরাজদিখানে উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস ধীরেন ও সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেন মোল্লা এক গ্রুপে, অপর গ্রুপে উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শেখ মো. আব্দুল্লাহ এবং তৃতীয় গ্রুপের নেতৃত্বে রয়েছেন  জেলা বিএনপির সাবেক কমিটির উপদেষ্টা সমসের আলী ভুঁইয়া। তবে, সিরাজদিখানে শেখ মো. আব্দুল্লাহ্ একচ্ছত্র প্রভার রয়েছে। তিনি দলীয় প্রচার প্রচারণা এবং কার্যক্রমকে চাঙ্গা করতে বিশেষ ভ‚মিকা রাখছেন।

তবে, মুন্সীগঞ্জ-১ আসনে আগামী নির্বাচনে প্রার্থী তালিকায় শক্ত অবস্থানে রয়েছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন এবং শ্রীনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ মমিন আলী। এ ছাড়া বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন,  স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমানে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু ও সিরাজদিখান উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শিল্পপতি  শেখ মো. আব্দুল্লাহ। তবে শ্রীনগরে মমিন আলীর সিরাজদিখানে শেখ মো. আবদুল্লাহ এর পক্ষে রয়েছেন বেশির ভাগ নেতাকর্মী।

এখানে বিএনপির মতো আওয়ামী লীগেও রয়েছে বিভক্তি। স্থানীয় সংসদ সদস্যের সঙ্গে প্রকাশ্যে বিরোধ রূপ নিয়েছে সংঘর্ষে, মামলা হয়েছে একাধিক। সংসদ সদস্য সুকুমার রঞ্জন ঘোষ এলাকায় উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখলেও দলীয় সংঘর্ষ, নিজ বলয়ের নেতাদের দখলবাজি, নানা অপকর্ম এবং একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তারের ঘটনায় তার উন্নয়নের কাজগুলো ম্লান হয়ে গেছে। নির্বাচনী এলাকার দুই উপজেলায় রয়েছে তার শক্ত প্রতিদ্বদ্বী। শ্রীনগর উপজেলা ও শ্রীনগর সরকারি কলেজে রয়েছে ছাত্রলীগের পাল্টাপাল্টি কমিটি।

অপরদিকে, সংসদ সদস্য বিরোধী আরেক অংশের নেতৃত্বে রয়েছেন সিরাজদিখান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মো. মহিউদ্দিন আহমেদ। সংসদ সদস্যের নিজ উপজেলা শ্রীনগর উপজেলার অবস্থা আরো ভয়াবহ। শ্রীনগর উপজেলার কোলাপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান যুবলীগ নেতা নেছার উদ্দিন সুজনসহ কয়েকজনকে দিয়ে শ্রীনগরের রাজনীতি এককভাবে চালাচ্ছেন এমপি সুকুমার রঞ্জন ঘোষ। সুকুমার রঞ্জন ঘোষ শ্রীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি।

সংসদ সদস্যের একক আধিপত্য রুখে দিতে শ্রীনগরের মাঠে রয়েছেন ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা গোলাম সারোয়ার কবীর। ইতিমধ্যে সংসদ সদস্য ও গোলাম সারোয়ার কবির গ্রুপের মধ্যে শ্রীনগরে একাধিকবার সংঘর্ষের ঘটনা এবং থানায় মামলা হয়েছে। সিরাজদিখানেও গোলাম সারোয়ার কবির গ্রুপের ও সংসদ সদস্য গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ, আধিপত্য নিয়ে ছাত্রলীগ নেতা খুনের ঘটনা ঘটেছে। এই মামলায় সুকুমার রঞ্জন ঘোষ সমর্থিতরা আসামি হয়েছেন।

আগামী নির্বাচনে দুইবারের সংসদ সদস্য ও শ্রীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুকুমার রঞ্জন ঘোষ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে বলে তৃণমূল নেতাকর্মীরা জানান। ফলে গোলাম সারোয়ার গ্রুপে যোগ দিচ্ছে সংসদ সদস্য সুকুমার রঞ্জন ঘোষের সমর্থিত নেতাকর্মীরা।

অন্যদিকে প্রার্থী হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি, শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের প্রেসিডেন্ট নুরুল আলম চৌধুরী। তিনি সিআইপি ও জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত। তিনি ১৯৯৬ সাল থেকে দলীয় নমিনেশন চেয়ে আসছেন। জনগণের সাথে তার এখনও যোগাযোগ রয়েছে। গ্রহণযোগ্যতায় সবচেয়ে এগিয়ে আছেন তিনি।

এছাড়াও প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন, সিরাজদিখান উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মহিউদ্দিন আহমেদ। রাজনৈতিক নেতা হিসাবে মাটি ও মানুষের নেতা হিসাবে সাধারণ জনগণের কাছে তার বেশ কদর রয়েছে।  

ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি, ঢাকা দক্ষিণ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় উপকমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক গোলাম সারোয়ার কবীর। নির্বাচনকে সামনে  রেখে তিনি এলাকায় প্রচার-প্রচারণা ও দলীয়সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করছেন।
আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন, প্রফেসর ডা. বদিউজ্জামান ভুঁইয়া ডাবলু। তিনি বিক্রমপুর ভুঁইয়া মেডিকেল কলেজের প্রতিষ্ঠাতা।

এই আসনে বিকল্পধারা থেকে বি. চৌধুরী বা তার ছেলে মাহী বি. চৌধুরী প্রার্থী হতে পারেন। সব মিলিয়ে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও বিকল্পধারার মধ্যে লড়াই হবে। তবে অনেকেই বলছেন ডা. বি. চৌধুরী  জোটবদ্ধ নির্বাচন ছাড়া নির্বাচন নাও করতে পারেন। এক্ষেত্রে বিকল্প ধারার প্রার্থী হবেন তার ছেলে মাহী বি. চৌধুরী।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!