• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

গ্যাসের দাম বাড়িয়ে এলএনজি আমদানি মূল্য সমন্বয়ের উদ্যোগ


নিজস্ব প্রতিবেদক জুলাই ২৮, ২০১৬, ১২:২৮ পিএম
গ্যাসের দাম বাড়িয়ে এলএনজি আমদানি মূল্য সমন্বয়ের উদ্যোগ

জ্বালানি সঙ্কট মোকাবেলায় এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বর্তমানে প্রতি মিলিয়ন ঘনফুট তিতাস গ্যাসের (এমএমসিএফডি) বিক্রয়মূল্য হচ্ছে ২ দশমিক ৪ মার্কিন ডলার। তার সাথে আমদানিকৃত এলএনজি যোগ করা হলে ওই গ্যাসের দাম পড়বে প্রতি মিলিয়ন ঘনফুট ৪ থেকে ৫ মার্কিন ডলার।

অতিরিক্ত ওই ২ দশমিক ৫ মার্কিন ডলারের দাম সমন্বয় করতেই গ্যাসের দাম বাড়ানো হবে। সেক্ষেত্রে গ্রাহকদের কাছে সহনীয় করতে চলতি বছর থেকে আগামী ৫ বছর ধারাবাহিকভাবে গ্যাসের দাম বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তবে ৫ বছরে প্রতিবার কতো টাকা করে গ্যাসের দাম বাড়বে তা নির্ধারণে একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করা হবে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ইতিমধ্যে সরকার চট্টগ্রামের মহেশখালীতে এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণে যুক্তরাষ্ট্রের একটি কোম্পানির সাথে চুক্তি করেছে। দীর্ঘ ৭ বছর ধরে যাচাই-বাছাই শেষে ওই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। টার্মিনালের মাধ্যমে আগামী দেড় বছরের মধ্যেই এলএনজি আমদানি করে ক্রমবর্ধমান গ্যাসের চাহিদা মেটানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

প্রায় ১ লাখ ৩৮ হাজার ঘনমিটার এলএনজি ধারণক্ষমতাসম্পন্ন টার্মিনালটি থেকে দৈনিক ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যাবে। পেট্রোবাংলার হিসাবে দেশে দৈনিক প্রায় ২৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদিত হচ্ছে। যদিও চাহিদা তার থেকে অনেক বেশি।

সূত্র জানায়, গতবছরের শেষদিকে জ্বালানি বিভাগ এলএনজির দামের সাথে সমন্বয় করে গ্যাসের দাম বাড়ানোর জন্য ৬ সদস্যবিশিষ্ট একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করেছিল। ওই কমিটির আহ্বায়ক বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের সিনিয়র সদস্য রহমান মোর্শেদ। সম্প্রতি ওই কমিটি প্রতিবেদন দাখিল করেছে। তাতে আমদানিকৃত এলএনজির দামের সাথে মূল্য সমন্বয় করতে আগামী ৫ বছর ধাপে ধাপে গ্যাসের দাম বাড়ানোর সুপারিশ করেছে।

তাছাড়া গ্রাহকদের কাছে গ্যাসের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে ওই খাতে থাকা ট্যাক্স-ভ্যাট প্রত্যাহারেরও সুপারিশ করেছে কমিটি। কারণ ২০১৮ সালে চট্টগ্রামের মহেশখালী এলএনজি টার্মিনাল থেকে যে গ্যাস জাতীয় গ্রিড যোগ হবে তার আমদানি খরচ পড়বে প্রতি মিলিয়ন ঘনফুট প্রায় ৯ ডলার। সেক্ষেত্রে বর্তমানে সরবরাহকৃত গ্যাসের তুলনায় দাম ৭ দশমিক ৬০ ডলার বেশি পড়বে। ওই দাম সমন্বয় করতে হলে কোনোভাবেই  গ্যাসের দাম না বাড়ানোর বিকল্প নেই।

সূত্র আরো জানায়, এলএনজি আমদানি করতে সরকারের বছরে ব্যয় হবে প্রায় দেড়শ’ কোটি ডলার। আর টার্মিনাল ভাড়া বাবদ বছরে দিতে হবে ৯ কোটি ডলার। তাছাড়া কর ও ভ্যাট বাবদ দিতে হবে ২ হাজার ২৫৪ কোটি টাকা। ইতিমধ্যে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে টার্মিনাল নির্মাণের প্রয়োজনীয় কাজ সম্পূর্ণ করতে চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান এক্সিলারেট এনার্জি বাংলাদেশ লিমিটেডকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

ফলে যথাসময়ে এলএনজি আনতে পারলে গ্যাসের ওপর চাপ কমবে। যদিও তা যথেষ্ট নয়। কারণ ক্রমবর্ধমান প্রতিষ্ঠানের গতি স্বাভাবিক রাখতে ৩৫০০ এমএমসিএসডি অতিরিক্ত গ্যাস বা এলএনজি প্রয়োজন। এক্সিলারেট এনার্জি টার্মিনাল নির্মাণের পর বাংলাদেশ তা ১৫ বছর ব্যবহারের জন্য চুক্তি করেছে।

এদিকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টরা আগামী বছরের শুরুতেই বাল্ক পর্যায়ে বিদ্যুৎ ও গ্যাস ব্যবহারকারী বিশেষ করে এফবিসিসিআই, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি, মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি ও বাংলাদেশ এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন অথরিটির (বেপজা) সাথে ধাপে ধাপে বৈঠক করবে। ওসব বৈঠকে সরকার সংশ্লিষ্টরা গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর কারণগুলো তুলে ধরবে।

অন্যদিকে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন বলছে- গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর আগে গণশুনানি করা হবে। তবে কখন গণশুনানি করা হবে তার তারিখ এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। ধারণা করা যায় চলতি বছরের শেষের দিকেই প্রথম দফায় গ্যাসের দাম বাড়তে পারে। পাশাপাশি বিদ্যুতের দাম আরো আগেই বাড়ানোর চিন্তা-ভাবনা চলছে।

এ প্রসঙ্গে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানান, শিল্প ও বিদ্যুৎ উন্নয়নে যে লক্ষ্য তাতে আরো ৩৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট নতুন গ্যাস লাগবে। ওই লক্ষ্য পূরণে গ্যাস অনুসন্ধান চলছে।

পাশাপাশি আমদানিরও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। গ্যাসের বিকল্প হিসেবে এলএনজি আমদানি হচ্ছে। আমাদের অর্থনীতির সক্ষমতা বৃদ্ধির কারণে এলএনজির মূল্য মানিয়ে নেয়া সমস্যা হবে না। প্রতিযোগিতার এই বিশ্বে অন্যান্য দেশ এলএনজি ব্যবহার করতে পারলে আমরাও তা পারব।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এএম

Wordbridge School
Link copied!