• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

গ্যাসের দাম ১৪৩ শতাংশ বাড়ানোর সুপারিশ


নিজস্ব প্রতিবেদক জুন ১৩, ২০১৮, ০১:৫৮ পিএম
গ্যাসের দাম ১৪৩ শতাংশ বাড়ানোর সুপারিশ

ঢাকা : তরল প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) মূল্যের সঙ্গে সমন্বয়ের অংশ হিসেবে গ্যাসের দাম প্রতি ঘনমিটারে ১৪৩ শতাংশ বাড়ানোর সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন।

মঙ্গলবার (১২ জুন) কমিশনের কারিগরি কমিটি এ সুপারিশ করেছে। ভোক্তা পর্যায়ে গ্যাসের দাম বাড়ানোর ওপর তিতাস গ্যাস বিতরণ কোম্পানির কমিশনে দেওয়া প্রস্তাবের ওপর গণশুনানিতে এ সুপারিশ এসেছে। তবে গৃহস্থালি ও বাণিজ্যিক ভোক্তাদের ক্ষেত্রে গ্যাসের দাম বাড়ানোর সুপারিশ আসেনি।

সুপারিশ করা হয়েছে বিদ্যুৎ উৎপাদন, সার কারখানা, সিএনজি, ক্যাপটিভ পাওয়ার (শিল্প কারখানায় নিজস্ব বিদ্যুৎকেন্দ্র), শিল্প গ্রাহকদের গ্যাসের দাম বাড়ানোর। সুপারিশ অনুসারে গ্যাসের দাম বাড়লে বিদ্যুৎ উৎপাদনে বড় অঙ্কের বাড়তি ব্যয়ের বোঝা চাপবে বলে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) জানিয়েছে।

গণশুনানিতে অংশ নেওয়া পিডিবি প্রতিনিধিরা জানান, গ্যাসের দাম বাড়ানো হলে বিদ্যুৎ উৎপাদনে বছরে ৮ হাজার কোটি টাকা বাড়তি ব্যয় হবে। এই বিশাল অর্থের জোগান ঠিক রাখতে বাড়াতে হবে বিদ্যুতের দাম। শুনানিতে ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব), জ্বালানি খাতের বিশেষজ্ঞ, ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধি ও রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

তারা বলেন, গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবের যৌক্তিকতা নেই। অনিয়ম-দুর্নীতির কারণেই গ্যাসের দাম বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। ব্যাংক লুটের মতো গ্যাস খাতেও লুটপাট হয়েছে। শুনানিতে জানানো হয়, তিতাস গ্যাস বিতরণ কোম্পানি গড়ে শুধু গ্যাসের দাম ২৪০ শতাংশ বাড়ানোর জন্য গত ২০ মার্চ কমিশনের কাছে প্রস্তাব দেয়। গ্যাস উন্নয়ন তহবিল, জ্বালানি নিরাপত্তা তহবিল, সঞ্চালন ব্যয় ও বিতরণ ব্যয় ধরে এই দাম ১৪৩ শতাংশ বাড়ানোর হার নির্ধারণ করেছে কমিশনের কারিগরি কমিটি।

কমিশন বলছে, এখন নির্দিষ্ট শ্রেণির গ্রাহকরা গড়ে ৩ দশমিক ৪৪৯৩ টাকায় প্রতি ঘনমিটার গ্যাস কিনে থাকে। সব ধরনের তহবিল ও চার্জ ধরে এই গ্যাসের মূল্য প্রতি ঘনমিটারে ১১ দশমিক ৭৪৪৩ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে তিতাস। কারিগরি কমিটি মনে করে, এই দর ৮ দশমিক ৪০৫২ টাকা রাখলে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে তিতাসের কোনো লোকসান হবে না।

মূলত এলএনজি আমদানির কারণেই দেশে গ্যাসের দাম বাড়াতে হচ্ছে বলে কারিগরি কমিটি তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে। এখন দেশে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ১ দশমিক ৫৭৮৭ টাকা। আর দৈনিক গড়ে উৎপাদিত ২ হাজার ৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের সঙ্গে আমদানি করা এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি আমদানির ফলে ‘মিশ্রিত গ্যাসের’ দাম বাড়ছে। তিতাস তার প্রস্তাবে অন্যসব তহবিল ও চার্জ ব্যতিরেকে শুধু গ্যাসের দাম প্রতি ঘনমিটার ১ দশমিক ৫৭৮৭ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১০ দশমিক ৩৭ টাকা করার প্রস্তাব দেয়।

কিন্তু কারিগরি কমিটি বলেছে, এই দাম বৃদ্ধি করা যেতে পারে ৬ দশমিক ৮২ টাকা পর্যন্ত। তাতেও গ্যাসের দাম বৃদ্ধির হার দাঁড়াবে ৩২২ শতাংশ। শুনানিতে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, ‘তিতাস প্রতি বছর লাভ হোক না হোক ২৫০ কোটি টাকা সরকার এবং শেয়ার মালিকদের দিচ্ছে। এজন্য তাদের অতিরিক্ত অর্থ তুলতে হচ্ছে।’ তিনি বাপেক্সকে দেওয়া তিতাসের তহবিলের ২ হাজার কোটি টাকার ঋণ নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘এই ঋণের টাকার মধ্যে ২৩০ কোটি টাকা ইতোমধ্যে তছরুপ হয়েছে।’

সাবেক জ্বালানি সচিব নাজিম উদ্দিনের ‘বাজে সিদ্ধান্তের কারণে’ রাষ্ট্রের বিপুল অর্থ গচ্চা গেছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। তিতাস এই টাকা ফেরত পাবে কি না- জানতে চাইলে তিতাসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বাপেক্স তাদের অর্থ ফেরত দেবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বদরুল ইমাম বলেন, গ্যাস খাতে ১০ থেকে ১৫ বছর ধরে একটি সঙ্কট তৈরি করা হয়েছে। এখন সেই সঙ্কটের মাসুল দিতে হচ্ছে পুরো জাতিকে। তিনি বলেন, গড়ে প্রতি বছর একটি কূপও খনন করা হয়নি। সিলেট ছাড়া অন্য কোনো এলাকায় তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে খুব একটা কাজ না হওয়ায় এখন এলএনজি আনতে হচ্ছে, যা দেশের মানুষের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করবে। শুনানিতে বুয়েটের অধ্যাপক নুরুল ইসলাম বলেন, এলএনজি আসছে- এই খবরেই গৃহস্থালির গ্রাহকদের ডিমান্ড নোট ইস্যু করা হচ্ছে। আবার একটি মহল এ বিষয়ে তৎপর হয়েছে।

তবে তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মীর মশিউর রহমান বলেন, নতুন করে কাউকে ডিমান্ড নোট দেওয়া হয়নি। আগে যাদের ডিমান্ড নোট ইস্যু করা হয়েছে, গৃহস্থালিতে সংযোগ দিলে তাদেরই আগে দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে সরকারকে ঘোষণা দিতে হবে। এখনো গৃহস্থালিতে গ্যাস দেওয়ার বিষয়ে সরকারের কোনো নির্দেশনা পায়নি তিতাস। শুনানিতে কমিশনের চেয়ারম্যান মনোয়ার ইসলাম, সদস্য রহমান মুর্শেদ, মাহমুদুল হক ভঁ‚ইয়া, মো. আবদুল আজিজ খান ও মিজানুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!