• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

গ্রাউন্ড স্টেশনে সিগন্যাল পাঠিয়েছে বঙ্গবন্ধু-১


নিজস্ব প্রতিবেদক মে ১৩, ২০১৮, ০৫:৪৪ পিএম
গ্রাউন্ড স্টেশনে সিগন্যাল পাঠিয়েছে বঙ্গবন্ধু-১

ঢাকা : গত শুক্রবার রাতে সফল উৎক্ষেপণের পর মহাশূন্য থেকে গ্রাউন্ড স্টেশনে সিগন্যাল বা সঙ্কেত পাঠিয়েছে দেশের প্রথম কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১। তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম বিবিসি। মহাকাশে স্যাটেলাইটটি ১১৯ দশমিক ১ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থান নেবে। বর্তমানে চূড়ান্ত কক্ষপথের দিকে ছুটছে সেটি। বর্তমানে এটিকে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, কোরিয়া ও ইতালির গ্রাউন্ড স্টেশন থেকে। ৩৬ হাজার কিলোমিটার উঁচু কক্ষপথে অবস্থান নেওয়ার আগে এটি পাড়ি দেবে লাখ লাখ কিলোমিটার পথ।

স্যাটেলাইট প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বঙ্গবন্ধু-১ এখন লঞ্চ অ্যান্ড আরলি অরবিট পর্যায়ে রয়েছে। এ পর্যায়ে সেটি থাকবে আরো প্রায় ১০ দিন। এরপর বঙ্গবন্ধু-১ ইন-অরবিট পর্যায়ে গিয়ে থাকবে আরো ২০ দিনের মতো। তখনই মূল অরবিট অর্থাৎ ১১৯ দশমিক ১ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশে এটি অবস্থান নেবে। স্যাটেলাইটটি নিয়ন্ত্রণ করা হবে গাজীপুরের জয়দেবপুর এবং রাঙামাটির বেতবুনিয়ায় স্থাপিত দুটি গ্রাউন্ড স্টেশন থেকে। তবে এ জন্য অপেক্ষা করতে হবে এটির মূল অরবিটাল স্লটে চূড়ান্তভাবে স্থির হওয়া পর্যন্ত। এতে সময় লাগতে পারে এক মাসেরও বেশি। বঙ্গবন্ধু-১ মূলত একটি জিওস্টেশনারি আর্থ অরবিট (জিইও) স্যাটেলাইট। এ ধরনের উপগ্রহ নিরক্ষরেখা বরাবর কক্ষপথে থাকে। পৃথিবীর মতোই স্যাটেলাইটটি পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে ঘুরবে। আর এ কারণে সব সময় গ্রাউন্ড স্টেশন সাপেক্ষে এটিকে স্থির থাকতে দেখা যাবে। দেশে স্থাপিত দুটি গ্রাউন্ড স্টেশনের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপিত হওয়ার পর দুই ধাপে এটি কাজ করবে। প্রথমে আপলিঙ্ক বা পৃথিবী থেকে সিগন্যাল গ্রহণ করবে। সেই সিগন্যাল বর্ধিত বা অ্যামপ্লিফাই করে উপগ্রহটি পাঠিয়ে দেবে গ্রাহকের কাছে, যা ডাউনলিঙ্ক নামে পরিচিত।

গত শুক্রবার রাত ২টা ১৪ মিনিটে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার জন এফ কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে সফলভাবে স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপণ করা হয়। মহাকাশ গবেষণা সংস্থা স্পেসএক্সের ফ্যালকন-৯ ব্লক ফাইভ রকেটে করে মহাকাশের পথে রওনা দেয় বঙ্গবন্ধু-১। কেপ ক্যানাভেরাল স্পেস স্টেশনের ঐতিহাসিক লঞ্চ প্যাড ৩৯-এ থেকে এটি উৎক্ষেপণ করা হয়। ১৯৬৯ সালে এ কমপ্লেক্স থেকেই চন্দ্রাভিযানে গিয়েছিল অ্যাপোলো-১১ মিশন। উৎক্ষেপণের দেড় মিনিটের মাথায় এটি গতির ম্যাক্স কিউ স্তর অতিক্রম করে। নির্দিষ্ট উচ্চতায় পৌঁছানোর পর রকেটটির স্টেজ-১ আলাদা হয়ে যায় এবং সঙ্গে সঙ্গে স্টেজ-২ ইঞ্জিন চালু হয়। আলাদা হয়ে যাওয়ার আড়াই মিনিট পর স্টেজ-১ আটলান্টিকে ভাসমান ড্রোনশিপ ‘অফ কোর্স আই স্টিল লাভ ইউ’-তে অবতরণ করে। ফ্যালকন-৯ বার বার ব্যবহারযোগ্য একটি রকেট। উৎক্ষেপণের ৩৩ মিনিট পর বঙ্গবন্ধু-১ জিওস্টেশনারি ট্রান্সফার অরবিটে পৌঁছায়। ২৮ মিনিট ৪০ সেকেন্ডের মাথায় স্টেজ-২ ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যায় এবং ৩৩ মিনিট ৪০ সেকেন্ড পর স্যাটেলাইট থেকে সেটি আলাদা হয়ে যায়।  

বঙ্গবন্ধু-১ উৎক্ষেপণকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে উৎসবমুখর পরিবেশ ছিল। সাধারণ মানুষের মধ্যেও প্রচণ্ড উচ্ছ্বাস লক্ষ করা গেছে। এ দিনটিকে বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতির জন্য একটি আনন্দময় ও গৌরবের দিন হিসেবে আখ্যায়িত করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্যাটেলাইটটির মহাকাশে যাত্রা শুরুর পর প্রধানমন্ত্রীর ধারণকৃত বক্তব্য প্রচার করা হয় স্পেসএক্সের ইউটিউব চ্যানেল থেকে।

তিনি বক্তব্যে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু-১ সফলভাবে উৎক্ষেপণের মধ্য দিয়ে আমরা আজ মহাকাশে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেছি। আজ থেকে আমরা স্যাটেলাইট ক্লাবের গর্বিত সদস্য। প্রবেশ করলাম নতুন এক যুগে।’ এ সময় স্যাটেলাইটের মাধ্যমে কাক্সিক্ষত লক্ষ্য পূরণে দেশবাসীর দোয়াও চান তিনি।  

উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের জন্য তিন হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। একই বছরের ডিসেম্বরে রাশিয়ার মহাকাশ সংস্থা ইন্টার স্পুটনিকের কাছ থেকে ২১৮ কোটি ৯৬ লাখ টাকায় অরবিটাল স্লট ভাড়া নেওয়া হয়।

২০১৫ সালের অক্টোবরে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি স্যাটেলাইট সিস্টেম কেনার অনুমোদন দেয়। একই বছরের ১১ নভেম্বরে ফ্রান্সের থালেস অ্যালেনিয়াকে বঙ্গবন্ধু-১ তৈরির কাজ দেওয়া হয় দুই হাজার কোটি টাকায়। এ প্রকল্পে সব মিলিয়ে সরকারের ব্যয় হচ্ছে দুই হাজার ৯০২ কোটি টাকার বেশি।  স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপণের পর সেটি নিয়ন্ত্রণের জন্য গাজীপুরের জয়দেবপুর এবং রাঙামাটির বেতবুনিয়ায় দুটি গ্রাউন্ড স্টেশন নির্মাণ করা হয়েছে। এখানে স্থাপন করা হয়েছে দশ টন ওজনের দুটি অ্যান্টেনা।

 এ ছাড়া সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য ছয়টি বিকল্প ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। ২০১৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু-১ উৎক্ষেপণের কথা থাকলেও কয়েক দফা পিছিয়ে ১০ মে চুড়ান্ত দিন নির্ধারণ করা হয়। তবে ১০ মে উৎক্ষেপণ কাউন্টডাউনের একেবারে শেষ মিনিটে এসে এর মহাকাশ যাত্রা আটকে যায়। পরদিন ১১ মে মহাকাশে পাঠানো হয় স্যাটেলাইটটিকে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!