• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ঘরে ঢুকে বুক লক্ষ্য করে পর পর তিন গুলি...


গাইবান্ধা প্রতিনিধি ডিসেম্বর ৩১, ২০১৬, ১০:০৮ পিএম
ঘরে ঢুকে বুক লক্ষ্য করে পর পর তিন গুলি...

গাইবান্ধা: গাইবান্ধা- ১ আসনের সরকারদলীয় সংসদ সদস্য (এমপি) মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন নেতাকর্মীদের নিয়ে বাড়ির নিচতলায় বৈঠক করছিলেন। এসময় তিন যুবক মোটরসাইকেল নিয়ে বাড়ির সামনে এসে থামে। একজন মোটরসাইকেল চালু রেখে বসে থাকে। এসময় এমপি লিটনের শ্যালক বেদারুল আহসান বেতার ঘরের সামনে বারান্দায় বসেছিলেন। দুজন বেতারের কাছে এসে এমপি লিটন ঘরে আছেন কিনা তা জানতে চান।

শ্যালকের কাছে এমপি লিটনের অবস্থান নিশ্চিত হয়ে দ্রুত ঘরে ঢুকে যান হেলমেট পরা ওই দু’যুবক। এর পরেই শুরু হয় এলোপাতাড়ি গুলি। খুব কাছে থেকে বুক লক্ষ্য করে পর পর গুলি ছোঁড়ে যুবকরা। এরপর দৌড়ে ঘর থেকে বের হয়ে মোটরসাইকেলে করে পালিয়ে যায়। এলোপাতাড়ি গুলিতে লুটিয়ে পড়েন এমপি। তার বুকের বাম দিকে দুটো এবং বাম হাতে একটি গুলি বিদ্ধ হয়।

গণমাধ্যমকে মর্মান্তিক এই হামলার ঘটনার বিবরণ দিলেন এমপি লিটনের স্ত্রী খুরশিদা জাহান স্মৃতি ও শ্যালক বেদারুল আহসান বেতার। শনিবার (৩১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের নিজ বাড়ি শাহাবাগে নিজ ঘরে গুলিবিদ্ধ হন এমপি। সঙ্গে সঙ্গে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এই এমপিকে রংপুর মেডিকেল কলেজে নেয়া হয়।

সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. বিমল চন্দ্র রায় সাংবাদিকদের জানান, এমপি লিটনকে বাঁচানোর চেষ্টায় তারা সফল হননি। তিনি জানান- লিটনের বুকের বাম দিকে দুটো এবং বাম হাতে একটি গুলি লেগেছিলো।

এমপি লিটনের শ্যালক বেদারুল আহসান বেতার জানান, গত ২৯ ডিসেম্বর রাতে তিনি ঢাকা থেকে বাড়িতে আসেন। আজ শনিবার সন্ধ্যায় মোটরসাইকেলে করে তিন যুবক এমপি লিটনের বাড়িতে আসে। এসময় তিনি ঘরের সামনে বারান্দায় বসেছিলেন। ওই যুবকরা হেলমেট পরা ছিলো। একজন মোটরসাইকেলে নিয়ে বাইরে দাঁড়িয়েছিলো। দুজন বেতারের কাছে এসে এমপি লিটনের অবস্থান জানতে চান। পরে তিনি ঘরে আছে বললে দুই যুবক ঘরে ঢুকেই এলোপাতাড়ি গুলি করে। এরপর তারা দৌড়ে ঘর থেকে বের হয়ে মোটরসাইকেলে করে পালিয়ে যায়।

এমপি লিটনের স্ত্রী খুরশিদা জাহান স্মৃতি বলেন, আজ বিকেলের দিকে লিটন নেতাকর্মীদের নিয়ে বাড়ির নিচতলায় বৈঠক করছিলেন। এ সময় ৩ যুবক মোটরসাইকেল নিয়ে বাড়ির সামনে এসে থামে। একজন মোটরসাইকেল চালু রেখে বসে থাকে। অপর দুইজনের মধ্যে একজন লিটনকে লক্ষ্য করে গুলি করে দ্রুত পালিয়ে যায়। ৩ যুবকই হেলমেট পরা অবস্থায় ছিল বলে জানান স্মৃতি।

ধাপ পুলিশ ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দিবাকর বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এমপি লিটন মারা যান।

স্থানীয়রা জানান, এমপি লিটনের বাড়ির পাশে স্থানীয়দের আয়োজনে একটি ইসলামী জলসা (তাফসিরুল) মাহফিল ছিলো। বাদ আসর শুরু হওয়া তাফসিরুল মাহফিলে আশপাশের লোকজনসহ বহিরাগত লোকজনের সমাগম ছিলো।

সুন্দরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতিয়ার রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, খবর পেয়ে তিনি এমপি লিটনের বাড়িতে অবস্থান করছেন। কেন, কীভাবে এমপি লিটন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিলো।

গাইবান্ধার পুলিশ সুপার মো. আশরাফুল ইসলাম জানিয়েছেন, এমপি লিটনকে হত‌্যার পর স্থানীয়দের অবরোধ ও বিক্ষোভে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ঘটনার পর পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে, জড়িতদের গ্রেপ্তারের অভিযান শুরু হয়েছে।

হামলার পরপরই লিটন সমর্থকরা বামনডাঙ্গা-নলডাঙ্গা সড়ক ও বালার ছিড়াসহ বিভিন্ন স্থানে অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে। রাত পৌনে ৮টার দিকে উপজেলা সদরের কলেজ রোডে এক জামায়াতকর্মীর বাড়িতে আগুন দেয়া হয়। বামনডাঙ্গা এলাকায় জামায়াতের শক্তিশালী অবস্থান রয়েছে। ২০১৩ সালে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর যুদ্ধাপরাধের রায়ের পর দলটির কর্মীরা পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা চালায়, তাতে তিন পুলিশ সদস‌্যসহ ছয়জন নিহত হয়েছিলেন।

মারা গেলেন গুলিবিদ্ধ এমপি লিটন
হত্যাকারীদের ধরতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ
এমপি লিটনের মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রী-স্পিকারের শোক


সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন

Wordbridge School
Link copied!