• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ঘাটতি অজুহাতে লবণ আমদানির উদ্যোগে ক্ষুব্ধ চাষীরা


নিজস্ব প্রতিবেদক জুলাই ২৭, ২০১৬, ১২:৪৪ পিএম
ঘাটতি অজুহাতে লবণ আমদানির উদ্যোগে ক্ষুব্ধ চাষীরা

দেশে লবণের বাম্পার ফলন হলেও সরকার আসন্ন কোরবানির পশুর চামড়া সংরক্ষণের অজুতাতে বিপুল পরিমাণ লবণ আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে। সরকারের এই উদ্যোগে লবণ চাষীরা উদ্বিগ্ন। অভিযোগ উঠেছে দেশে লবণ উৎপাদনে ঘাটতি দেখিয়ে আমদানির জন্য একটি সিন্ডিকেট তৎপরতা শুরু করেছে। 

তাতে লবণচাষীদের মধে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে যে কোনো মূল্যে লবণ আমদানির চেষ্টা প্রতিরোধ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে চাষীরা। লবণচাষী ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, আসন্ন কোরবানির পশুর চামড়া সংরক্ষণ ও বাজারে লবণের সরবরাহ বৃদ্ধির জন্য সরকার দেড় লাখ টন অপরিশোধিত লবণ আমদানির উদ্যোগ নিচ্ছে। সে লক্ষ্যে ইতিমধ্যে শিল্প মন্ত্রণালয় সুপারিশ করেছে এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তা অনুমোদন দিতে যাচ্ছে।

যদিও ২০১৬-২০ মেয়াদের জন্য তৈরি নতুন লবণনীতির চূড়ান্ত খসড়ায় ২০১৫-১৬ অর্থবছরে অপরিশোধিত লবণের চাহিদা ধরা হয় ১৬ লাখ ৮ হাজার টন। আর ২০১৬-১৭ অর্থবছরের চাহিদা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৬ লাখ ৬১ হাজার টন। বিসিকের হিসাবে গত মৌসুমে (ডিসেম্বর ’১৫-মে ’১৬) ১৫ লাখ ৫৫ হাজার টন লবণ উৎপাদন হয়েছে। এর পরিমাণ ২০১৪-১৫ মৌসুমের চেয়ে ২ লাখ ৭৩ হাজার টন বেশি। তবে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম। কারণ গত মৌসুমে ১৮ লাখ টন লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল বিসিক।

সূত্র জানায়, গত বছরের ৬ সেপ্টেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এক লাখ টন লবণ আমদানির অনুমতি দিয়েছিল। তখন দুদিনেই ৪৫ জন আমদানিকারক ২ লাখ ৩৫ হাজার টন লবণের ঋণপত্র খুলে ফেলে। তারপর সরকার নতুন আর কোনো ঋণপত্র খুলতে দেয়নি। পরবর্তীতে আমদানিকারকদের সমান হারে অর্থাৎ ২ হাজার ২২২ টন করে লবণ আমদানির অনুমতি দেয়া হয়। অথচ দেশের লবণ শিল্প এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ।

এই শিল্প বছরে অন্তত ৫০০ কোটি টাকার লবণ আমদানি থেকে দেশকে রক্ষা করছে। এমন পরিস্থিতিতে এ শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে দেশে উৎপাদিত লবণের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করে বাঁচিয়ে রাখা জরুরি। সেক্ষেত্রে আমদানি বন্ধের মাধ্যমেই এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব। বর্তমানে দেশে ভোজ্য লবণ আমদানি নিষিদ্ধ। 

তবে উৎপাদনে ঘাটতি হলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আমদানির অনুমতি দিয়ে থাকে। এই বছর দেশে চাহিদা অনুযায়ী লবণ উৎপাদিত হয়নি বলা হচ্ছে। যার কারণে বছরজুড়েই অপরিশোধিত লবণের দাম চড়া ছিল। ফলে খুচরা বাজারে ব্যাপকভাবে বেড়েছে লবণের দাম।

সূত্র আরো জানায়, বাজারে এখন ভ্যাকুয়াম ইভাপোরেশন পদ্ধতিতে পরিশোধিত লবণ কেজিপ্রতি ৩৪-৩৫ টাকা, মেকানিক্যাল পদ্ধতিতে পরিশোধিত লবণ ৩০-৩২ টাকা ও সাধারণ লবণ ২০-২২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে এক বছর আগের তুলনায় লবণের দাম এখন ২৮ শতাংশ বেশি। 

বাজারে এখন প্রতি বস্তা (৭৫ কেজি) অপরিশোধিত লবণের দাম ৮শ’ টাকার কাছাকাছি। যা সাধারণত ৪শ’ টাকার নিচে থাকে। সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলো লবণের দাম এতো বেশি হওয়ার জন্য চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কম হওয়াকে দায়ী করছে। কারণ চাহিদার ১৬ লাখ টন লবণ উৎপাদনের জন্য কমপক্ষে ২২ লাখ টন অপরিশোধিত লবণের দরকার।

লবণ উৎপাদনে গড়ে ৩০ শতাংশ ঘাটতি (প্রসেস লস) হয়। অথচ লবণনীতিতে ঘাটতি ধরা হয়েছে ১০ শতাংশ। এদেশে লবণ মূলত ভারত থেকে আমদানি হয়। আর আমদানিতে ৯২ শতাংশ শুল্ক ও কর দেয়ার পরও কারখানায় ঢুকতে খরচ পড়ে কেজিপ্রতি প্রায় সাড়ে ৪ টাকা। অথ দেশে অপরিশোধিত লবণের দর এখন কেজিপ্রতি ১১ টাকার কাছাকাছি।

এদিকে বাংলাদেশ লবণচাষী কল্যাণ পরিষদের সভাপতি মোস্তফা কামালের মতে, দেশে লবণের চাহিদা প্রতি বছর প্রায় ৫ শতাংশ হারে বাড়ছে। কিন্তু আমদানি সিন্ডিকেটদের চাপে এই বছর বিসিক উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা এক লাফে ২৫ শতাংশ বাড়িয়ে দিয়েছে। গত মৌসুমে লবণের চাহিদা ও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল যথাক্রমে ১৬ লাখ ও ১৮ লাখ টন। 

কিন্তু চলতি মৌসুমের লবণের চাহিদা এক লাফে ৩ লাখ ৭৬ হাজার টন বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। মূলত মাত্রাতিরিক্ত লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেই বিসিক আমদানি সিন্ডিকেটকে উৎসাহিত করছে। কারণ মে মাসে শেষ হওয়া মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৯৫ ভাগ অর্জিত হয়েছে।

যার ফলে পণ্যটির আমদানির কোনো প্রয়োজই নেই। কিন্তু তারপরও বহুল আলোচিত একটি সিন্ডিকেট নানা ছলছুতোয় লবণ আমদানির জন্য জোর তৎপর রয়েছে।
অন্যদিকে লবণ আমদানি প্রসঙ্গে বাণিজ্য সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন জানান, লবণের মৌসুম শেষ হয়ে যাওয়ায় এখন আমদানি করলে চাষীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না। এই কারণেই আমদানির অনুমতি দেয়ার চিন্তা করা হচ্ছে।

সোনালিনিউজ/ঢাকা/এএম

Wordbridge School
Link copied!