• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ঘুরে আসুন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যময় বিনোদন কেন্দ্র স্বপ্নপুরী


স্বপ্নপুরী থেকে ফিরে মেহেদী হাসান উজ্জল জুন ২৯, ২০১৮, ০৪:০৫ পিএম
ঘুরে আসুন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যময় বিনোদন কেন্দ্র স্বপ্নপুরী

দিনাজপুর : জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলার বিনোদন কেন্দ্র স্বপ্নপুরী দিন দিন অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে, বাড়ছে পর্যটকদের ভিড়। দিনাজপুর জেলা শহর থেকে ৫৬ কিলোমিটার দূরে নবাবগঞ্জ উপজেলার আবতাবগঞ্জে ব্যক্তিগত উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত মনোরম পরিবেশে নান্দনিক সৌন্দর্য ও প্রাকৃতিক বিনোদন জগৎ এই স্বপ্নপুরী।

জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলার আফতাবগঞ্জ হাটের স্বত্বাধীকারী প্রয়াত ডা. আফতাফ উদ্দীনের দ্বিতীয় পুত্র ৯নং কুচদহ ইউপি’র সপ্তমবার নির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন ও প্রয়াত সাবেক সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান ফিজু নিজ উদ্যোগে ১৯৮৯ সালে প্রায় ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০০ একর জমির ওপর স্বপ্নপুরী নামক পর্যটন কেন্দ্র নির্মাণ কাজ শুরু করেন। দীর্ঘদিন ধরে চলছে এর কার্যক্রম। বর্তমানে দিনাজপুর ৬ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য মো. শিবলি সাদিক এমপি'র অধীনে এটি চালু আছে।

নামের সঙ্গে মিল রেখে সৌন্দর্য পিপাসী ও ভ্রমণ বিলাসীদের জন্য গড়ে তোলা হয়েছে পর্যটন কেন্দ্র ও পিকনিক স্পট স্বপ্নপুরী। দর্শনার্থীদের স্বাগত জানাতে এর প্রবেশ দ্বারে, গেট দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে মোহনীয় ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে প্রস্তর নির্মিত ধবধবে সাদা ডানা মেলে দুটি সুবিশাল পরী স্বাগত জানাচ্ছে। কিছু দুর যেতেই ত্রিভু’জ আকারের পুকুর, ১টি বিশাল মানব মূর্তির যাদুঘর, ১টি প্রাণী চিড়িয়াখানা, ১টি যাদুঘর, রয়েছে কৃত্রিম পশুর দুনিয়া। পর্যটকদের জন্য নির্মাণ করা হয়েছ ৪০/৫০টি অভিজাত রেস্ট হাউজ। দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা ব্যবস্থার পাশাপাশি প্রতিবছর স্বপ্নপুরীতে পরিবর্তন এবং নূতন বিষয় সংযোজন করা হয়।

এখানে রয়েছে দেশী-বিদেশী বিভিন্ন পশুপাখির অবিকল ভাস্কর্য, কৃত্রিম পাহাড়, কৃত্রিম ঝর্ণা, কৃত্রিম চিড়িয়াখানা , মিউজিয়াম এবং বিশাল লেক। আছে বাংলাদেশের সুবিশাল মানচিত্র, চিড়িয়াখানা, শিশু পার্ক , দীঘিতে স্পিডবোট, ক্যাবল কার, ইলেকট্রিক দোলনা, নাগরদোলা। বিভিন্ন রাইডস, চিড়িয়াখানা, রেস্ট হাউজ, বাগান, হ্রদ, বিশ্বের বিভিন্ন প্রজাতির মাছ , 'রংধনু' আর্ট গ্যালারি, 'মহা মায়া ইন্দ্রজাল' নামে জাদুর গ্যালারি এবং পিকনিকের জন্য রয়েছে মনোরম পরিবেশে জায়গা । ভিআইপি, রেস্ট হাউস ১০টি, মধ্যম শ্রেণীর ১৪টি এবং অন্যান্য ৮টি রেস্ট হাউস নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে আরও রেস্ট হাউস নির্মাণসহ স্বপ্নপুরীর উন্নয়ন কাজ চলছে। কেবল কার, ঘোড়াগাড়ি, চিড়িয়াখানা, কৃত্রিম চিড়িয়াখানা, কৃত্রিম মৎস্য জগৎ, রেস্টুরেন্ট আছে। এখানে কৃত্রিম মাছ এবং বিভিন্ন প্রাণীদের সঙ্গে, বিশ্বকে খুঁজে পেতে পারবেন দর্শনাথীরা।

বিনোদনের জন্য রয়েছে ছোট ছোট অনেক রাইডস। কৃত্রিম লেকে স্পিডবোর্ডে চড়ে নিতে পারেন দুরন্ত অভিজ্ঞতা। প্রাণী জগতের, এমি, মোরাল, ডাইনোসর, কাব্যপ্রতিভা এবং অনেক অন্যান্য প্রাণীর মতো হুবোহুব কিছু প্রাণীর কৃত্রিম মূর্তিও রয়েছে। ভাস্কর্য এবং চিত্রকলার বিভিন্ন ধরনের 'রংধনু' আর্ট গ্যালারি। পরিবারসহ কৃত্রিম ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করে তার পুরো দিন ভোগ করতে পারবেন। রাত্রি যাপনের জন্য রয়েছে আকর্ষণীয় রেস্ট হাউস ও কটেজ। স্বচ্ছ পানির ফোয়ারা বিশিষ্ট ফুলের বাগানগুলো সৃষ্টি করেছে স্বাপ্নিক আবহ। এ বিনোদন কেন্দ্রটি উপভোগ করতে প্রতিবছর দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে নানা বয়সের হাজার হাজার বিনোদন পিপাসী ছুটি কাটাতে এখানে আসেন।

দেশী-বিদেশী বিভিন্ন জাতের দুষ্প্রাপ্য বৃক্ষও আছে এ বাগানে। আর্কষণীয় বিভিন্ন পণ্য বিক্রয় করে এখানে অনেকে জীবন জীবিকা নির্বাহ করছেন। ‘‘রেলগাড়ি ঝমঝম পা পিছলে আলুর দম’’ এ এলাকায় রেল যোগাযোগ না থাকলেও বিনোদনের জন্য তৈরি করা হয়েছে রেল লাইন। এই লাইন দিয়েই চলে বিনোদন রেল গাড়িটি। নাই মাস্টার, নাই স্টেশন তবুও যাত্রীরা রেলগাড়িতে একটু আনন্দ পাবার আশায় উঠছেন। পুকুরকে সমুদ্র মনে করে ওরা স্টিমারে উঠে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে চলাচল করছেন অনেকে।

বাস্তবে সাত সাগর তেরো নদী পাড়ি না দিতে পারলেও ওরা ময়ূর পঙ্খিতে উঠে পুকুরে পাড়ি দিচ্ছেন। জমিদার সাজে কেউ ঘোড়ার গাড়িতে উঠছে। কেউ বা পঙ্খীরাজ ঘোড়ায় উঠে যুদ্ধে যাবার প্রস্তুতি নেওয়ার ভঙ্গিমা করছে। কেউ বাহারাম বাদশা, কেউ সিরাজ-উদ-দৌলা হয়ে হাতে রজনীগন্ধা নিয়ে আলেয়ার সন্ধানে ঘুরেই চলছেন। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম, একাত্তরের বীর সেনাদের প্রকৃতিও রাস্তার মোড়ে মোড়ে শোভা পাচ্ছে।

অজগর, বাঘ, সিংহ, হাতি, জেব্রা, পেগুইন পাখি ইত্যাদি প্রতিকৃতি পাথর দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। প্রাকৃতিক ঝরনা না থাকলেও চালু করা হয়েছে স্যালো চালিত ঝরনা। সম্প্রতি মৎস্য জগৎ নামে আরো একটি নতুন ভুবন চালু হয়েছে। দেশের প্রখ্যাত জল মানব নওশাদ দীর্ঘদিন স্বপ্নপুরীতে কাজ করে তার নৈপুণ্য প্রর্দশন করেছেন। এখানে বেড়াতে আসা উৎসুক জনতার অনেকেই পুকুরে গোসল করে স্বস্তি পাচ্ছেন। এখানে প্রতিদিন শত শত বাস, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেল, রিকশা, ভ্যানে করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে হাজার হাজার নারী-পুরুষ দর্শনার্থী প্রতিদিন সমবেত হয়।

স্বপ্নপুরীর ব্যবস্থাপক মিজানুর রহমান বলেন, দেশের শীর্ষ রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ কাজের অবসরে দেখতে আসেন স্বপ্নপুরীর এই অপরূপ দৃশ্য। এ পর্যন্ত ৪০/৫০টি পূর্ণদৈর্ঘ্য বাংলা ছায়াছবির বহু দৃশ্য এখানে চিত্রায়িত হয়েছে।

স্বপ্নপুরীর স্বত্ত্বাধিকারী দেলোয়ার হোসেন জানান, নিজ উদ্যোগে নির্মিত এই বিনোদন কেন্দ্রে তিনি এলাকার শতাধিক বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছেন। এর পরিধি আরো বৃদ্ধির পরিকল্পনা রয়েছে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এইচএআর

Wordbridge School
Link copied!